।। প্রথম কলকাতা ।।
DENGUE SYMPTOMS: খুব সাবধান, ডেঙ্গি হওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই কিন্তু সিম্পটম গুলো দেখা দেয়। সময়টা খারাপ, কোন কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন যে টেস্ট করালেই আপনি “ডেঙ্গি পজিটিভ”? ব্রেকবোন সিন্ড্রোমে ভুগছেন না তো? এটা মারাত্মক যন্ত্রনার। ডেঙ্গি ধরা পড়লেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে? কখন রোগীকে প্লেটলেট দিতে হবে? ডেঙ্গির শক সিনড্রোম কী? হেমারেজিক কতটা বিপজ্জনক? ডেঙ্গি হলে কী খাবেন? ডেঙ্গি থেকে সেরে উঠলেই কি নিশ্চিন্ত? জয়েন্ট পেইনে আগামী কয়েকটা বছর আপনাকে ভুগতে হতে পারে। আর কোন কোন দিক দিয়ে নাজেহাল হওয়ার চান্স থাকছে?সাধারণ জ্বর নাকি ডেঙ্গি? বিবিসির রিপোর্ট বলছে, সাধারণভাবে ডেঙ্গির লক্ষণ হচ্ছে জ্বর।
চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক সময় জ্বরের তাপমাত্রা খুব একটা বেশি থাকছে না। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা, হাড় ও পেশিতে তীব্র ব্যাথা, শরীরে ফুসকুড়ি ডেঙ্গির লক্ষণ। মাংসপেশী আর অস্থি সন্ধিতে ব্যথা থেকে জ্বর চলে আসে, গোটা গায়ে অসহ্য যন্ত্রণা। তাই ডেঙ্গির অপর নাম, “ব্রেকবোন ফিভার”। আর, ডায়রিয়া, বমি, নিউমোনিয়া, মাথা ব্যথা এগুলোকে নতুন উপসর্গ বলা হচ্ছে। চিকিৎসকদের কথা অনুযায়ী শক সিন্ড্রোম আর হেমারেজিক কন্ডিশন দুটোই রিস্কের। আসলে, ডেঙ্গির চারটি ধরন আছে। যারা আগে একবার ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং দ্বিতীয়বার এই চারটি ধরনের অন্য আর একটি দ্বারা আক্রান্ত, তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি। তারাই মূলত শক সিন্ড্রোমে চলে যান। এতে পালস, রক্তচাপ কমে যায়, শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে রক্ত চলাচল কমে যায়, বিভিন্ন অঙ্গের কোষে যে অক্সিজেন দরকার সেইঅক্সিজেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এমন অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন ব্রেইন, হার্ট, কিডনি এগুলোতে রক্ত ও অক্সিজেন পৌঁছাতে না পেরে অঙ্গগুলো আস্তে আস্তে কাজ করা বন্ধ হয়ে যেতে থাকে। ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর শক সিনড্রোম হলে তার লাইফ রিস্ক আছে বলছেন চিকিৎসকরা।অন্যদিকে, ডেঙ্গি রোগীদের শরীরের যে কোনও জায়গা থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ মানেই তা হেমারেজিক ডেঙ্গিতে রূপ নিয়েছে। এতে চোখে রক্ত জমে যায়; নাক, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত ঝরে, মুখ, কান, মলদ্বার এরকম যেকোনো একটি বা একের অধিক অংশ দিয়ে রক্ত বের হতে পারে। বমি ও কাশির সাথেও রক্ত বের হতে পারে। হেমারেজিক ডেঙ্গি হলে মেয়েদের মেনোরেজিয়া হতে পারে। কখনো সপ্তাহে একবার করেও পিরিয়ড হওয়ার চান্স থাকে। হেমারেজিক ডেঙ্গির এক পর্যায়ে অন্য কারো রক্ত থেকে প্লেটলেট নিয়ে রোগীর শরীরে প্লেটলেট দিতে হয়। তবে রাজ্যে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়লেই প্লেটলেটের আকাল দেখা দেয়। তাই চলতি বছর, পরিস্থিতি মোকাবেলায় গাইডলাইন জারি করেছে স্বাস্থ্যভবন। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে
- রোগীর প্লেটলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নীচে গেলে প্লেটলেট দেওয়া যাবে।
- যেসব রোগীদের প্লেটলেট কাউন্ট ১০ থেকে ২০ হাজারের মধ্যে, তাদের রক্তপাত না হলে প্লেটলেট দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
- কোন গ্রুপের প্লেটলেট প্রয়োজন, প্রেসক্রিপশনে উল্লেখ করতে হবে।
প্লেটলেট ঘাটতি ঠেকাতে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করা হলেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে পরিস্থিতি কোন দিকে মন নেবে সেটা এখন থেকেই বলা যাচ্ছে না। তবে, অবশ্যই জ্বর হলে সচেতন থাকতে হবে। জ্বরে আক্রান্ত হলেই সাথে-সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গি জ্বরের তিনটে ভাগ ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’। এ ক্যাটাগরির রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই, বি ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা আর বমি সঙ্গে শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গি সবচেয়ে খারাপ। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে আইসিইউ’র প্রয়োজন হতে পারে, বলছে বিবিসির রিপোর্ট। আর মনে রেখে প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খান। যেমন – ডাবের জল, লেবুর শরবত, ফলের জুস, খাবার স্যালাইন। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে, তবে জৃ জাতীয় খাবার খেতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না তাহলে বড় বিপদ হতে পারে। আর, ডেঙ্গি সেরে গেলেও ভীষণ সাবধানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
জ্বর সেরে গেলেও হেলাফেলা নয়। জয়েন্ট পেইন বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত থেকে যেতে পারে, বলছেন বিশিষ্ট চিকিৎসকরা। তাছাড়া জ্বর থেকে ওঠার পর রোগী দুর্বল হয়ে পড়েন। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে এনার্জি পান না! ফলে পুরোপুরি সেরে উঠতে বেশ অনেকটা সময় লেগে যায়। তাই ওষুধের পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়ার দিকে প্রপার নজর দিতে হবে। খেতে পারেন পেঁপে পাতার রস, সবজির রস, নিম পাতার রস, হারবাল টি চিকেন স্যুপ সহ হালকা পাতলা খাবার। জানিয়ে রাখি, রোগমুক্তির পরে অন্তত মাস তিনেক ডেঙ্গি রোগীকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলছেন, রক্তে শ্বেত কণিকার সংখ্যা বারবার পরীক্ষা করে দেখতে হবে। শ্বেতকণিকার সংখ্যা স্বাভাবিক না-হওয়া পর্যন্ত বাড়ির বাইরে বেরোনো উচিত নয়। ডেঙ্গি সংক্রমণে লিভারের বিভিন্ন এনজাইম বেড়ে যায়। এর ফলে লিভারের বিশ্রাম দরকার। তাই ভুলেও তেলেভাজা, ফাস্টফুড, কফি খাবেন না। নিজেও বিশ্রামে থাকুন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম