।। প্রথম কলকাতা ।।
History of Lyangcha: ‘শক্তিগড়ের ল্যাংচা’ মন ভরানো প্রাণ ভরানো এক অদ্ভুত স্বাদের রসনাময় তৃপ্তি। এপার বাংলা হোক বা ওপার বাংলা শক্তিগড়ের ল্যাংচা-র স্বাদ যে একবারও পাননি এমন মানুষ খুব কমই আছেন। গল্প-কথা-আলোচনায় পূর্ব বর্ধমান জেলার শক্তিগড় স্থানটির নাম উঠে আসলেই ‘ল্যাংচা’ সকলের নজর ও মন কাড়ে। খাদ্যপ্রেমী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষদের ভিড় জমে পূর্ব বর্ধমান জেলার শক্তিগড়ে এই ল্যাংচার স্বাদ উপভোগ করতে। বলতে পারেন আজ ফেসবুক হোক বা ইনস্টাগ্রাম বা খবরের কাগজের পাতা থেকে বিদেশেও এই শক্তিগড়ের ল্যাংচার নাম ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। প্রথম সারির মিষ্টির তালিকায় ল্যাংচা তার তুলনাহীন স্বাদের গুনে নিজের জায়গা করে নিয়েছে পাকাপাকি ভাবে।
তবে জানেন কি ‘শক্তিগড়ের ল্যাংচা’-র নামকরণের ক্ষেত্রেও রয়েছে এক অজানা ইতিহাস। কেন ‘শক্তিগড়ের ল্যাংচা’-র নাম মানুষের মুখে মুখে। কি সেই ইতিহাস! শক্তিগড়ের ল্যাংচার স্বাদ উপভোগের সাথে সাথে কি সেই অজানা ইতিহাস আসুন জেনে নেওয়া যাক।
‘শক্তিগড়ের ল্যাংচা’ -র ইতিহাসে জড়িত আছেন বাংলারই দুই রাজ পরিবারের নাম। কথিত আছে যে, কৃষ্ণনগরের রাজকন্যার সাথে একই সুতোয় বাঁধা পড়েন বর্ধমানের রাজপুত্র। বিবাহের কিছুদিন পর রাজকুমারী অন্তঃসত্ত্বা হন। এ এক দারুণ খুশির খবর! কৃষ্ণনগরের রাজা রাজকুমারীকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন নিজের বাড়িতে। আনন্দোৎসবে মেতে ওঠেন সকলে। রাজকুমারী মা হবেন। নতুন অতিথির আগমন হবে। এমন খুশির মাঝেই বেঁধে বসে এক বিপত্তি। রাজকুমারী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তিনি তাঁর মুখের রুচি হারিয়ে ফেলেন। সকল সুস্বাদু খাবারেও তাঁর রুচি ফেরানো দায়। বাঁধে মুশকিল। রাজা পড়েন মহাবিপদে, দুশ্চিন্তায়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মেয়ের মুখে রুচি ফেরাতেই হবে। নাহলে বাঁধবে বড় বিপদ! দুশ্চিন্তাগ্রস্থ পিতা খুঁজতে থাকেন নানা উপায়। সভা বৈঠক ডাকা হয়। ডাকা হয় রাজ্যের বড় বড় হাকিম-কবিরাজদের।
অবশেষে রাজকন্যা নিজেই বাবাকে জানান, বর্ধমানে শশুর বাড়িতে থাকার সময় তিনি দেখেছিলেন এক ময়রা কালো রঙের ভাজা মিষ্টি রসে ডুবিয়ে ডুবিয়ে রেখে দিচ্ছেন। সেই মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে রাজকুমারীর। বাবাকে জানান এমন কথা। কিন্তু রাজকুমারী সেই ময়রার নাম বলতে পারেননি। তবে বর্ণনা দিয়েছিলেন, ময়রাটি একটি পা খুঁড়িয়ে চলাফেরা করতেন।
এরপর কৃষ্ণনগরের রাজা দলবল পাঠালেন বর্ধমানে সেই ময়রাকে খুঁজতে। অবশেষে তাঁর সন্ধান পেয়ে কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ীতে তাঁকে নিয়ে আসা হল। তিনি তাঁর নিখুঁত পরিশ্রম ও ভালোবাসা দিয়ে রাজকুমারীর জন্য বানালেন ল্যাংচা মিষ্টি। গরম নরম ল্যাংচার অতুলনীয় সেই স্বাদে কেবল রাজকুমারীই নন, স্বয়ং কৃষ্ণনগরের রাজাও মুগ্ধ হয়ে গেলেন। সেই খুশির খবর ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে। রাজকুমারীর মুখে স্বাদ ফিরেছে। কিন্তু মিষ্টির নাম তো তখনও ঠিক হয়নি। এবার তো মিষ্টির নামকরণের পালা। যিনি এই অতুলনীয় মিষ্টির সৃষ্টি করেছিলেন, সেই ময়রা একটি পা ‘লেংচে’ হাঁটতেন। তাই তার সেই বিখ্যাত সৃষ্টিকে তাঁর কীর্তিতেই নামকরণ করা হয়। তাই মিষ্টির নাম দেওয়া হয় ‘ল্যাংচা’। কৃষ্ণনগরের রাজা খুশি হয়ে সেই ময়রাকে অনেক উপহারও দেন।
কথিত আছে, পরবর্তীকালে সেই ময়রা বর্ধমানে ফিরে শক্তিগড়ে দোকান করেন এবং ল্যাংচা তৈরি করতে থাকেন। এরপর কলকাতা থেকে বর্ধমান বা বর্ধমান থেকে কলকাতা যাওয়া আসার পথে সারি দিয়ে একাধিক ল্যাংচার দোকান তৈরি হয়।
ছানা, ময়দা ও চালের গুঁড়ি সহিত মিশ্রণ তৈরি করে তা লম্বা নোড়ার মতো আকৃতি দেওয়া হয়। এরপর সেটি তেলে বা ঘি তে ভাজা হয়। সবশেষে চিনির গরম রসে ডুবিয়ে তৈরি করা হয় নরম তুলতুলে ল্যাংচা। ল্যাংচার স্বাদ দ্বিগুণ করতে এর সাথে অনেকেই খোয়া ক্ষীর মিশিয়ে তৈরি করে থাকেন। ল্যাংচা এ এক আলাদাই তৃপ্তি। আজ পূর্ব বর্ধমান জেলার শক্তিগড় স্থানটি যে ‘ল্যাংচার আঁতুড়ঘর’ একথা বলতেই হবে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম