মৃত্যু ডেকে আনছে লিচুর বীজ, এগুলো থেকেও সাবধান! গলায় আটকে গেলে প্রথম কয়েক সেকেন্ডে যা করবেন

।। প্রথম কলকাতা ।।

এখনই ভুল শুধরে নিন। লিচুর বীজ গলায় আটকে পর পর শিশু মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে যখন চারিদিকে তোলপাড় চলছে তখন যে প্রশ্নগুলো বারবার উঠে আসছে শুধুই কি লিচুর বীজ? চকলেট, মার্বেল এমনকি রসগোল্লাও গলায় আটকে ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন তখন! এক পর্যায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ছোটাছুটি, হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই যে কাজটা আপনাকে করতে হবে আজ এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা সেটাই জানানোর চেষ্টা করবো। এই “চোকিং” থেকে কিভাবে বাঁচবেন? কিভাবে বুঝবেন আপনার শিশু গলায় কিছু আটকে গেছে? সমস্যাটা কিন্তু বাড়ির বয়স্কদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। কোন বয়সের ক্ষেত্রে কি সাবধানতা অবলম্বন করবেন? তাৎক্ষণিক করনীয়ই বা কি? সতর্ক থাকতে কি কি ব্যবস্থা নিতে পারেন? বিস্তারিত থাকছে আজকের এই প্রতিবেদনে।

বাড়ির শিশু বা বয়স্কদের ক্ষেত্রেই সমস্যাটা বড় হয়ে দাঁড়ায়, সেক্ষেত্রে গলায় কিছু আটকে গেলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়েযাচ্ছেন। কিন্তু কত দ্রুত? তখন এক একটা সেকেন্ড ভীষণ দামি। চিকিৎসকেরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে ৭–১২ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না করলে রোগীকে বাঁচানো মুশকিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ রকম পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যরা ঘাবড়ে গিয়ে নানা ধরনের ভুল করে বিপদের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। ভুল করেও গলায় আঙুল ঢুকিয়ে আটকে যাওয়া জিনিসটা বের করে আনার চেষ্টা করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে, রক্তারক্তি কাণ্ড হতে পারে। যে কোনো ফলের বীজ শুধু নয়, চকলেট, মার্বেল, ছোটখাটো খেলনা, ধাতব মুদ্রা, রসগোল্লা জাতীয় মিষ্টি, ডিমের কুসুম ইত্যাদি গলায় আটকে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে ওই পরিস্থিতিকে ডাক্তারি পরিভাষায় ‘চোকিং’ বলে।

যেটা বেশি ঘটে শিশু ও প্রবীণদের ক্ষেত্রে। ৫ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে তারা বলার মতো অবস্থায় থাকে না, তেমন হলে বুঝবেন কি করে যে গলায় কিছু আটকেছে? খাবার হোক বা অন্য কিছু, শ্বাসনালিতে আটকে গেলে প্রথমেই শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হবে। কাশি হবে, বুকের মধ্যে হাওয়ার মতো শব্দ, বমি বমি ভাব, কথা বলতে না পারা, ঠোঁট নীল হওয়া বা জ্ঞান হারানোর মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

কেন শিশু আর বয়স্কদেরকেই বেশি এফেক্ট করে?

চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, প্রবীণ আর ছোট শিশুদের গলার গ্যাগ রিফ্লেক্স নামে মুখগহ্বরে এক ধরনের স্নায়ু ব্যবস্থাপনা কম থাকে, ফলে গলায় খাবার আটকে যেতে পারে। শ্বাসনালির মুখে খাবার আটকে গেলে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হয়, শরীরে অক্সিজেন চলাচল কমে যায়। এমনকি পুরোপুরি বন্ধও হয়ে যেতে পারে। শ্বাসনালি একেবারে বন্ধ হয়ে গেলেয়অক্সিজেনের অভাবে হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক কাজ করতে পারে না, অবস্থা মারাত্মক হয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে আটকে যাওয়া বস্তুটি দ্রুত বের না করে দিলে রোগীকে বাঁচানো যায় না। নিন।

এই পরিস্থিতিতে পরলে কী করবেন?

কোনো মানুষকে হঠাৎ এ রকম পরিস্থিতিতে পড়তে দেখলে অসুস্থ ব্যক্তিকে পেছন থেকে জড়িয়ে দুহাত দিয়ে পেটের ওপরের দিকে জোরে জোরে চাপ দিলে আটকে যাওয়া বস্তুটি দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খুব ছোট শিশুকে উপুড় করে পিঠে চাপড় দিতে হবে। কাছের হাসপাতালে নিতে হবে। বস্তুটি বের না হওয়া বা হাসপাতালে চিকিৎসা না শুরু হওয়া পর্যন্ত পদ্ধতিটি চালিয়ে যেতে হবে। পুরোটা সময় সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে রোগীর জ্ঞানের মাত্রা কমে যাচ্ছে কি না, রোগীর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হচ্ছে কি না। তাহলে দ্রুত বুকে চাপ তথা সিপিআর শুরু করতে হবে।

সতর্কতা সাবধানতা অবলম্বন করুন:

বিশেষজ্ঞদের এই পরামর্শ গুলো মেনে চললে কিছুটা হলেও চোকিং এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কারণ, এই চোকিং এতটাই মারাত্মক যে প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় ১ কোটি মানুষ গলায় খাবার বা অন্য কিছু আটকে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো মারাত্মক পরিস্থিতির শিকার হয়। পৃথিবীর নানা প্রান্তে প্রতি ২ ঘণ্টায় একজন মানুষ গলায় খাবার বা অন্য কিছু আটকে স্রেফ দম বন্ধ হয়ে মারা যান। তাই শেষেও বলবো সাবধান হোন। সাবধানের মার নেই।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version