Itu Pujo: ঘটে জল অর্পণ করলেই হবেন সৌভাগ্যবতী, পড়ে দেখুন ইতু পুজোর মাহাত্ম্য

।। প্রথম কলকাতা ।।

Itu Pujo: গ্রাম বাংলায় যত ব্রত কথা রয়েছে তার মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হল ইতু পুজো। বলা হয়, এই পুজোর মাধ্যমেই সংসারের শ্রীবৃদ্ধি এবং মনোবাসনা পূর্ণ সম্ভব। সাধারণত ইতু পুজো (Itu Pujo) কার্তিক সংক্রান্তির দিন থেকে অগ্রহায়ণ সংক্রান্তির দিন পর্যন্ত রবিবার (Sunday) গুলিতে পালন করা হয়ে থাকে। মাসে প্রত্যেক রবিবারেই ইতু পুজোর রীতি রয়েছে। গ্রামবাংলায় অঞ্চল ভেদে পুজোর রীতিতে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। অনেকের কার্তিক সংক্রান্তির পরে পুজো করেন, আবার অনেকে একটানা একমাস পুজো করেন। অনেকে শুধুমাত্র অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিতে ইতু পুজো করে থাকেন। ২০২২ সালে অগ্রহায়ণ সংক্রান্তি পড়েছে ১৬ই ডিসেম্বর, শুক্রবার। কনকনের ঠান্ডার মধ্যে ভোর থেকে শুরু হয়ে যায় তোড়জোড়। কাঠের পিঁড়ির উপর কাদা লেপে তার উপর বসিয়ে দেওয়া হয় মাটির ঘট। সেই ঘটে থাকে নানান উদ্ভিদ, ফুল আর নতুন ধানের শীষ। এই ঘটে জল অর্পণের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় ইতু পুজো।

• পুজোর সঠিক সময়

গ্রামেগঞ্জে কার্তিক সংক্রান্তির দিন থেকেই বিভিন্ন দোকানে রীতিমত কেনাকাটার ধুম পড়ে যায়। কার্তিক সংক্রান্তির পর থেকে একেবারে অগ্রহায়ণ সংক্রান্তি পর্যন্ত প্রত্যেক রবিবার ইতু পুজো করা হয়। তারপর সেই দিন ঘট ভাসিয়ে দিয়ে আসা হয় নিকটস্থ কোন জলাশয়ে। অনেকে আবার শুধুমাত্র সংক্রান্তির দিন এবং আগের দিন ইতু পুজো করেন।

• ইতু দেবী না দেবতা ?

আগে একটা বাঁধাধরা নিয়ম ছিল এখন এই ইতু পুজো প্রচলিত থাকলেও সেই নিয়ম অনেকাংশে আলগা হয়ে গিয়েছে। তবে কে এই ইতু দেবী, তা নিয়ে রয়েছে নানান প্রশ্ন এবং বিভিন্ন ভাষাতাত্ত্বিকদের বিভিন্ন মত। শাক্তধর্মের ভগবান ইতু নাকি পরবর্তীকালে দেবী লক্ষ্মী রূপে পরিবর্তিত হয়েছেন। অনেকে মনে করেন সূর্যের যেহেতু অপর নাম আদিত্য। আদিত্য থেকেই নাকি এই ইতু দেবতা এসেছেন। কিন্তু বর্তমানে প্রায় জায়গায় ইতুকে দেবীরূপে আরাধনা করা হয়।

• পুজোর নিয়ম

একটি মাটির সরা কিংবা পুষ্প থালার মধ্যে পবিত্র জলাশয়ের মাটি রেখে তার ওপর বসানো হয় ঘট। ঘটে রাখা হয় কলমি, হিঞ্চে, ধান ,সর্ষের ফুল, মুলোর ফুল, মান কচুর মুল প্রভৃতি। ঘটের চারিদিকে সুন্দরভাবে সাজানো হয় গাঁদা ফুল দিয়ে। চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় ছোলা, মোটরের মত প্রায় ৮ রকম শস্য। তারপর ঘটের মধ্যে পরিবারের মঙ্গল কামনায় জল দিয়ে মেয়েরা মন্ত্র পাঠ করেন। অনেকে গুড়, নতুন চাল, দুধ দিয়ে পায়েস তৈরি করেন আবার অনেকে কলাপাতায় রেখে দেন নতুন চালের গুঁড়োর সাথে নতুন আখের গুড় মাখা।

• প্রচলিত কাহিনী : উমনো ও ঝুমনো কথা

এই ব্রত কথা নিয়েই গ্রাম বাংলায় প্রচলিত রয়েছে একটি লোককথা। এক দেশের অত্যন্ত দরিদ্র ব্রাহ্মণ ভিক্ষাবৃত্তি করে অনেক কষ্টে দিন চালাতেন। তার সংসারে ছিলেন স্ত্রী এবং দুই মেয়ে উমনো ও ঝুমনো। একদিন সেই ব্রাহ্মণের খুব শখ হয় একটু পিঠে খাওয়ার। তাই অনেক কষ্টেই পিঠের সামগ্রী জোগাড় করে আনেন এবং পিঠে শেষে গুনে নেন, একটিও পিঠে তাকে কম দেওয়া হয়েছে কিনা। কিন্তু সেখানে দুটি পিঠে কম ছিল কারণ তার স্ত্রী দুই মেয়েকে দুটি পিঠে খেতে দিয়েছিলেন। ব্রাহ্মণ রেগে যান এবং দুই মেয়েকে মাসির বাড়ি যাওয়ার নাম করে রেখে দিয়ে আসেন অজানা এক জঙ্গলে।

রাতের অন্ধকারে বিপদের হাত থেকে বট গাছের কোটরে আশ্রয় নেন দুই বোন। তারপর চলতে চলতে রাস্তার ধারে দেখতে পান বাড়ির মেয়েরা ঘটে করে কি যেন একটা পুজো করছেন। সেখান থেকেই তারা জানতে পারেন, ইতু পুজোর কথা এবং তারা সংসারের সমৃদ্ধির জন্য ইতু পুজো করেন। অগ্রহায়ণ মাসের প্রত্যেক রবিবারেই দুই বোন ইতু পুজো করতেন এবং অপরদিকে ব্রাহ্মণের সংসার ধর্ম সম্পত্তিতে ফুলে-ফেঁপে ওঠে। দুই মেয়ে বাড়ি ফিরে তারা পুজো আবার শুরু করে দেন এবং এভাবেই ছড়িয়ে পড়ে এই পুজোর মাহাত্ম্য।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version