পেসমেকার বসানো থাকলে স্বাভাবিক জীবন কি আদৌ সম্ভব ? কিছু তথ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ

।। প্রথম কলকাতা ।।

হার্টে ব্লক? টাফ টাইম! কি করে বুঝবেন পেসমেকার বসাতে হবে? শরীরে এই বৈদ্যুতিক যন্ত্রটা বসানো থাকলে স্বাভাবিক জীবনযাপন কী আদৌ সম্ভব? ঝড় বৃষ্টি এবড়ো খেবড়ো রাস্তা এড়িয়ে চলতে হবে? ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট কী সত্যিই ব্যবহার করা যায় না? যন্ত্রটির সমস্যায় একদম দেরী করবেন না। হাত সামলে রাখুন। কখন টেম্পোরারি পেসমেকারেও কাজ চালাতে পারবেন? সেটা জানলে লাভ আপনার। পেসমেকার বসানো রোগীর যত্ন নিন এইভাবে। কিছু নিয়ম না মানলেই হৃদরোগে রিস্ক থাকে।

প্রথমেই একটা ভুল ভেঙে দিই। হার্টের সব ধরনের ব্লকের জন্যই পেসমেকার বসানো হয়, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।তাই অযথা ভয় পাবেন না। হ্যাঁ হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হলে পেসমেকার বসাতে হযয়। তবে সেটাও সব ক্ষেত্রে নয়।মাথায় রাখুন শুধু ইলেকট্রিক্যাল ব্লকের জন্যই পেসমেকার বসানো হয়। আর যা হার্ট অ্যাটাকের ব্লকের থেকে আলাদা, সেখানে পেসমেকার নয়। দরকার হয় অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি বা বাইপাস সার্জারির। সঙ্গে এটা জেনে রাখা জরুরি কিভাবে রোগীর যত্ন নেবেন পেসমেকার বসানোর পরে। প্রথম ২৪ ঘণ্টা সাধারণত এক ভাবে শুইয়ে রাখা হয়, যাতে লিড নড়ে না যায়। পরের দিন রোগী উঠে বসতে পারেন। যে দিকে পেসমেকার বসেছে, সেই হাতকে শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়, সাত থেকে দশ দিনের জন্য।যাতে হাতের নাড়াচাড়ায় লিডে টান না পড়ে। এর পরে দ্বিতীয় বার ড্রেসিং এবং সেলাই কাটার পরে ওই হাতটিকে আস্তে আস্তে নাড়াতে বলা হয়। পেসমেকারের লিড, হার্টের সঙ্গে ঠিক ভাবে যোগ হতে ছয় থেকে আট সপ্তাহ সময় লাগে। এই সময়টুকু খুব সাবধানে থাকতে হয়।

এরপর অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে আস্তে আস্তে ব্যায়াম শুরু করুন যাতে এক মাসে কনুই, মাথার লেভেল পর্যন্ত ওঠে। তার পরে আস্তে আস্তে হাত নাড়ানোর রেঞ্জ বাড়ান। তবে কখনই ঝাঁকুনি দেবেন না বা জোর করবেন না। যে হাতের উপরে পেসমেকার আছে সেই হাতে ভারী ওজন বেশিক্ষণ বইবেন না। কখনই পেসমেকারের হাতে জোরে ঝাঁকুনি বা চোট লাগাবেন না, তাতে লিড ভেঙে যাওয়ার চান্স থাকে। পেসমেকার যেখানে বসছে তার উপরের ত্বকে চুলকনি বা ফুঁসকুড়ির মতো দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

কিন্তু পেসমেকার বসাতে হবে কিনা সেটা কিভাবে বুঝবেন? লক্ষ্য রাখবেন। য়হৃদপিণ্ডের গতি কমার কারণে বার বার অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা চোখে অন্ধকার দেখা। সিক সাইনাস জনিত সমস্যা। কমপ্লিট হার্ট ব্লক। এই ইঙ্গিতগুলোই কিন্তু বুঝিয়ে দেয় এবার পেসমেকার বসাতে হবে। যদিও সেক্ষেত্রে আগে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু অনেকের এমন ধারণা, রয়েছে যে পেসমেকার থাকলে, ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট ব্যবহার করা যায় না।

তাই পেসমেকার বসানোর আগে হাজারবার ভাবছেন? বা পেসমেকার বসানোর পর এসব গ্যাজেট হয়তো এড়িয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন ভুল করছেন। এসব গ্যাজেট স্বাভাবিক ভাবেই ব্যবহার করা যায়। অতিরিক্ত কোনও সাবধানতা নিতে হয় না। তবে জোরালো ইলেকট্রিক শক খেলে অসুবিধা হতে পারে। ঝড়, বৃষ্টির সময় বাইরে থাকলেও আলাদা কিছু অসুবিধা হয় না। কিন্তু পেসমেকারের ও সমস্যা হতে পারে। পেসমেকারের সমস্যা সাধারণত দুই ধরনের প্রথমত, তাৎক্ষণিক সমস্যা। সাধারণত পেসমেকার বসানোর সময় বা পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যেই হয়। যেমন, পকেট হেমাটোমা বা পেসমেকারের পকেটে রক্ত জমে যাওয়া, নিউমোথেরাক্স, হিমোথেরাক্স, লিড সরে যাওয়া।

দ্বিতীয়ত বিলম্বিত জটিলতা। যেমন, পেসমেকার সংক্রমণ, পকেট ক্ষয়ে যাওয়া, লিড ভেঙে যাওয়া, অক্সিলারি শিরায় রক্ত জমে যাওয়া এবং পেসমেকার সিন্ড্রোম। তাই মনে করে বছরে এক বার পেসমেকার প্রস্তুতকারী সংস্থাকে দিয়ে পেসমেকার পরীক্ষা করান। নিয়মিত ইসিজি করান এবং চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। সমস্যা হলে তাঁকে জানান। আউটডোর গেমস, যেখানে অনিয়ন্ত্রিত হাত, পা চলে এবং পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। পেসমেকার সংক্রান্ত কাগজপত্র সামলে রাখুন।

সারাজীবন যে পেসমেকার বয়ে বেড়াতে হয় তেমনটাও নয়। অনেকসময় টেম্পোরারি পেসমেকারেও কাজ চলে যায়। অস্থায়ী পেসমেকার সাধারণত হার্ট অ্যাটাক বা হৃদপিণ্ডের অস্ত্রোপচার বা অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের ফলে যখন হৃদপিণ্ডের গতি কমে যায়, তখন বসানোর প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন শেষ হলে, মানে হৃদপিণ্ড নিজস্ব গতি ফিরে পেলে এটি সরিয়ে নেওয়া হয় আর স্থায়ী পেসমেকার তাঁদেরই বসানো হয়, যাঁদের হৃদপিণ্ডের গতির স্থায়ী সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া হৃদপিণ্ডের ওই শ্লথ গতির জন্য ক্লান্তি, হার্ট ফেলিওর, বারবার চোখে অন্ধকার দেখা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে এবং রোগীকে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে পার্মানেন্ট পেসমেকার। তাই ভয় পাবেন না। পেসমেকার বসানোর পরেও একটু নিয়ম মেনে চললে সুস্থ থাকা সহজ।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version