সমুদ্রের নীচে মণি-মাণিক্যের খোঁজ চালাবে ভারত ? টাইটানের ভয়ে কাঁটা মৎস্য ৬০০০, সমুদ্রায়ন মিশনে‌ উঠে আসবে অন্য জগৎ

।। প্রথম কলকাতা ।।

সমুদ্রের অতল গহ্বরে পাড়ি দেবে ভারত। চন্দ্রযানের পর সমুদ্রযান, তাকিয়ে দেখবে গোটা বিশ্ব। জলের ৬০০০ মিটার গভীরে কী করবে ভারতের ৩-৩ টে মানুষ? “দেশীয় সাবমেরিনে মৎস্য ৬০০০” এর রিস্ক কতটা? নজরে সমুদ্রের অতলে লুকিয়ে থাকা মহামূল্যবান সব সম্পদ। “সমুদ্রায়ন মিশন” এর দিনক্ষণ ঠিক? টাইটান সাবমেরিনের করুন পরিণতি টেনশনে ফেলে দিচ্ছে গবেষকদের।

প্রথমবার ভারতের মানুষ মহাসাগরের তলদেশ ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন। সমুদ্রের অতল গহ্বরে পাড়ি দেওয়ার জন্য জোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ভারত। ‘সমুদ্রায়ন মিশন’-এর কথা ঘোষণা করে দিয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশিয়ান টেকনোলজি। ভারতের এই সমুদ্র অভিযান নিয়ে উৎসাহ আছে, কিন্তু রিস্ক কতটা? জানা যাচ্ছে মহাসাগরের ৬ হাজার মিটার নীচে পাড়ি দেবে ভারতের সাবমেরিন। ভারতে তৈরি এই স্বদেশি সাবমেরিনের নাম মৎস্য-৬০০০। তিনজন মানুষকে নিয়ে সমুদ্রের ৬ হাজার মিটার নীচ পর্যন্ত যেতে পারবে ওই ডুবোযান। স্বাভাবিক সময় এই দেশি সাবমেরিন জলের নীচে ১৬ ঘণ্টা থাকতে পারবে! আপৎকালীন সময় তা বেড়ে দাঁড়াবে সর্বাধিক ৯৬ ঘণ্টা। ৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি সমুদ্রের ৬ হাজার মিটার নীচ পর্যন্ত যেতে সক্ষম, ফিরতেও লাগবে ঠিক ৪ ঘণ্টাই। কিন্তু, কেন সমুদ্র তোলপাড়ের প্ল্যান করছে ভারত? সমুদ্রের তলদেশে নিকেল, ম্যাঙ্গানিজ, কোবাল্ট সহ একাধিক খনিজ পদার্থের খোঁজ চালাতেই এই সমুদ্র অভিযানের প্রস্তুতি বলে খবর। ডুবোযানে চড়ে গভীর সমুদ্রে পৌঁছে ভারতের সমুদ্রচারীরা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। ওই গভীরতায় সমুদ্রে কী কী পাওয়া যায়, জীববৈচিত্র্য কেমন, তা খতিয়ে দেখা হবে। এই ডিপ ওশিয়ান মিশন শুরুর আগে উদ্বিগ্ন সমুদ্র গবেষকরা। কেন?

সম্প্রতি আটলান্টিক মহাসাগরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে ভয়ংকর দুর্ঘটনার কবলে পড়ে টাইটান সাবমেরিন। মুহূর্তের মধ্যে জলের চাপে ধ্বংস হয়ে যায় ডুবযানটি। সেক্ষেত্রে, মৎস্য-৬০০০ সাবমেরিন কতটা নিরাপদ? ভাবাচ্ছে সকলকে। যদিও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশান টেকনোলজি বলছে, টাইটানের সঙ্গে যা হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করা হবে মৎস্য-৬০০০ এর ক্ষেত্রে। বেসিক ডিজাইনের ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও মজবুত করা হচ্ছে। পরীক্ষা করে তবেই এই মিশন শুরু করা হবে। এই বিষয়গুলি সঠিক থাকলে বিপর্যয় হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে টাইটান বিপর্যয়ের পর নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আরও কড়া পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো পদার্থ দিয়ে এর বেসিক ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে। এই সাবমেরিনের ডিজাইন বহির্ভাগ টাইটেনিয়াম অ্যালয় দিয়ে তৈরি। পরিকাঠামোগত দিক থেকে এটি সর্বোচ্চ সুরক্ষিত হবে। কোন পদার্থ দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে সেটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটা ফ্যাক্টর। মূলত একটি সাবমেরিন কিংবা সাবমারসিবলের বহির্ভাগই সর্বপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।

যেহেতু মৎস্য-৬০০০ ডুবযানটি জলের ৬ হাজার মিটার নীচে গিয়ে চাপ অনুভব করবে, ফলে সেটির বহির্ভাগকেও সেই চাপ বহন করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। একবারের বেশি সেই ভার বহন ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়েছে। যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক, আপৎকালীন ব্যবস্থা, ভেসে থাকার ক্ষমতা, জলের চাপ বহন ক্ষমতা সহ একাধিক বিষয় নজরে রেখেই সাবমেরিনটি তৈরি করা হয়েছে। তারপরেও, সমুদ্রপৃষ্ঠে থাকা একটি ভেসেলের সঙ্গে মৎস্য-৬০০০ সাবমেরিনটির অ্যাকুয়াস্টিক লিংক থাকবে। সাবমারসিবলের খুব কাছেই ঘোরাফেরা করবে একটি জাহাজ। ইলেকট্রম্যাগনেটিক যোগাযোগ ব্যবস্থা রাখা হবে না এ ক্ষেত্রে। আর এখানেই থাকছে রিস্ক। গবেষকদের একাংশের মতে অ্যাকুয়াস্টিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আপডেট পৌঁছতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। ফলে কিছুটা হলেও রিস্ক থেকেই যাচ্ছে। তবে, মিশন শুরুর আগে একাধিকবার সেটি পরীক্ষা এবং ট্রায়াল করে দেখা হবে।

ট্রায়াল রান শুরু হবে ২০২৪ সালের প্রথম কোয়ার্টারেই। প্রাথমিকভাবে ট্রায়ালের প্রথম পর্বে ৫০০ মিটার নীচ পর্যন্ত নামানো হবে ডুবযানটিকে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস নাগাদ এই ট্রায়াল শুরু হবে। ২০২৫ সালের শেষ দিকে সমুদ্রের তলায় ৬ হাজার মিটার পর্যন্ত ট্রায়াল শুরু হবে। জানিয়ে রাখি, অলরেডি মৎস্য-৬০০০ সাবমেরিনটিকে নরওয়ের সার্টিফিকেশন এজেন্সি ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে। মহাকাশের পাশাপাশি মহাসমুদ্রেও পিছিয়ে নেই ভারত। দুঃসাহসিক “সমুদ্রায়ন মিশন” সফল হলে ভারত; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, ফ্রান্স সহ চীনের সঙ্গে এক সারিতে জায়গা করে নেবে। এই মিশনের জন্য কেন্দ্রের মোদী সরকারের পক্ষ থেকে মোট ৪ হাজার ৭৭ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কেন্দ্রের ব্লু ইকনমি নীতিকে সমর্থন করে সমুদ্র অভিযানের এই প্রকল্প। যে নীতির লক্ষ্য হল, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সমুদ্র সম্পদের সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার এবং সমুদ্রকে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থান, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন। সমুদ্রযানের মাধ্যমে সে সব সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version