Narendra Modi: মোদীর স্বপ্নের পথে বাধা জোট সরকার ! পদে পদে সমস্যা

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Narendra Modi: শরিকি কাঁটায় কতটা অস্বস্তিতে নরেন্দ্র মোদী? এনডিএ জোটের মুখাপেক্ষী বিজেপি, সামান্য ব্যালেন্স হারালেই মহাসর্বনাশ। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়াই কি কাল হল বিজেপির কাছে? সব সময় বয়ে বেড়াতে হবে একটা ভয়। ভরসা করে চলতে হবে নীতীশ-নাইডুর উপর। ভবিষ্যতে বড় রিস্ক, যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে জোট সরকার। সত্যি কি জোট সরকারে ভয়ের কোন কারণ রয়েছে? নরেন্দ্র মোদী সবটা সামলাতে পারবেন তো? জোট সরকার নিয়ে দেশ চালানো মুখের কথা নয়। জানেন কী কী সমস্যা হতে পারে? সরকারি পদক্ষেপে মোদীর কথাই আর শেষ কথা নয়, জোট সরকারের ঝক্কি প্রচুর। মোদীর সামনে এখন বিশাল চাপ।

 

পাঁকে পড়েছে পদ্ম, জোট শরিকের স্বার্থের কাছে কোণঠাসা বিজেপি!

বিরোধী থেকে শুরু করে বহু সমালোচক, বলছেন এবার নাকি পাঁকে পড়েছে পদ্ম। যে বিজেপি একটা সময় এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, সেই বিজেপি এখন পুরোপুরি শরিক নির্ভর। শরিক ছাড়া সরকার গড়ার কোন উপায় নেই। আর বিজেপির এই দুরবস্থা যেন নতুন করে শক্তি যোগাচ্ছে ইন্ডিয়া জোটকে। তবে হ্যাঁ, ভারতে এই মুহূর্তে যতগুলো রাজনৈতিক দল রয়েছে, তার মধ্যে বিজেপি পেয়েছে সবথেকে বেশি আসন। ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ২৭২ টি আসন জিতলে সেই দল সরকার গড়বে। কিন্তু সেই ম্যাজিক ফিগার পেরোতে পারেনি বিজেপি। থমকে গিয়েছে ২৪০ এ। এনডিএ জোট পেয়েছে ২৯২টি আসন। আর তাই তো পদ্ম শিবিরকে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে নীতিশ কুমার, চন্দ্রবাবু নাইডু সহ বেশ কয়েকটা রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিত্বের দিকে। আর শরিকরাও বুঝে নিতে চাইছে যে যার নিজেদের স্বার্থ, কষতে শুরু করে দিয়েছে পাওনা-গণ্ডার অঙ্ক।

 

তাই তো ভারতের রাজনৈতিক মহলে এত প্রশ্ন। বিগত ১০ বছরে জোট সরকার চালানোর কোন অভিজ্ঞতাই নরেন্দ্র মোদীর কাছে নেই। অথচ সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, তাঁকে এই প্রথম জোট সরকার গঠন করতে হচ্ছে, অনেকটা ঠেলায় পড়ে। তারপর তিনি টানা তৃতীয়বারের জন্য ভারতের হাল ধরবেন। জহরলাল নেহেরুর পাশে খোদাই করবেন নিজের নাম। কিন্তু এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, আগামী দিনে নরেন্দ্র মোদীকে আবির্ভূত হতে হবে নতুন ভাবে। যে ভূমিকা তিনি আগে কোনদিন পালন করেননি। যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখনও কিন্তু তাঁর সরকার ছিল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ। কারোর উপর তাঁকে নির্ভর করতে হয়নি। গত ১০ বছর বিজেপিকে অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে চলতে হয়নি। কিন্তু এবার সরকার গড়ার ক্ষেত্রে আসন ঘাটতি মেটাবে এনডিএর অন্যান্য দলগুলো। তখন কিন্তু বিজেপি এনডিএর কোন দলকে উপেক্ষা কিংবা অবজ্ঞা করতে পারবেনা। সবাইকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের দাবি শুনতে হবে। দলগুলো তাদের পছন্দ অনুযায়ী কোন মন্ত্রিত্ব পদ নিতে চায়, সে দিকটাও বিবেচনা করতে হবে। আর সব থেকে বড় ভয়ের ব্যাপার কি বলুন তো, সরকার গঠন হওয়ার পরেও কোন রাজনৈতিক দল যদি জোট ছেড়ে দেয়, তখন মহা বিপদে পড়বে বিজেপি। আর সেই ভয়টা সব সময় বয়ে নিয়ে যেতে হবে নরেন্দ্র মোদীকে।

 

মোদীর স্বপ্নের পথে বাধা জোট সরকার! পদে পদে সমস্যা

যেখানে নরেন্দ্র মোদী টানা ১০ বছর দাপটের সাথে দেশ পরিচালনা করেছেন, জোটের ধর্ম ঠিক কেমন তা জানেন না। অন্য কোন রাজনৈতিক দলকে তোয়াক্কা করতে হয়নি। এখন তার গলায় বিঁধেছে শরিকি কাঁটা। এই জোট সরকার বারংবার মোদীর স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাঁর সাধের এক দেশ এক ভোট নীতিতে এনডিএ শরিকদের মত থাকবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে শুরু করে পিএম কেয়ার্স, সেখানে সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও বড় ধাক্কা খেতে পারেন তিনি। আর তার থেকেও বড় কথা কি বলুন তো, বিগত ১০ বছর যে বিরোধীদের কথায় সেভাবে কর্ণপাত করেননি মোদী , অথচ ৯৯ আসন পাওয়া কংগ্রেসকে এবার দিতে হবে বিরোধী নেতার পদ। বিগত পাঁচ বছরের ইতিহাসে মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের প্রচুর অভিযোগ উঠেছে। মোদী সরকার নাকি আয়কর বিভাগ, এনআইএ, সিবিআই, ইডি যথেষ্ট ব্যবহার করেছে। কিন্তু যখনই শক্তিশালী বিরোধীরা আসবে, তখন তাদের চাপে সেই প্রবণতা ধরে রাখাটা বড্ড কঠিন।

 

১৯৮৯ সালে রাজীব সরকারের পতনের পর শুরু হয়েছিল কোয়ালিশন বা জোট সরকারের অধ্যায়। পাতি কথায় একটা পাঁচ মিশালি সরকারের অধ্যায়। ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারত কিন্তু জোট সরকারই পেয়েছে। কোন রাজনৈতিক দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। লক্ষ্য করবেন, তখন কিন্তু প্রায় সব সরকারই ছিল প্রায় নড়বড়ে। ২০১৪ সালের নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি ২৮২টি আসন পেয়ে একক দল হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ভারত আবার ফিরে পায় একটা পোক্ত স্থায়ী সরকার। কোন দেশের বলিষ্ঠ অর্থনীতির প্রগতির জন্য রাজনৈতিক দায়িত্বটা ভীষণ জরুরী। কারণ কখনো কখনো দেশের প্রগতির জন্য সরকারকে কিছু কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যে সিদ্ধান্ত সমস্ত রাজনৈতিক দলকে খুশি করতে পারে না। আবার কখনো বা একটা বড় জনগোষ্ঠীর কাছে তা অপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে যেমন রয়েছে কিছু ইতিবাচক দিক, আবার নেতিবাচক দিক। কিন্তু জোট সরকারের বিরোধিতা করার সমস্যার সম্ভাবনা প্রবল। জোট সঙ্গী মানে অন্যের জনপ্রিয়তা সঙ্গে করে নিয়ে চলা এলএম।আর সেখানে তো একটা নিরাপত্তাহীনতা কাজ করবেই। শুধু তাই নয়, সমর্থন তুলে নেওয়ারও রিস্ক ফ্যাক্টর রয়েছে। ২০০৮ সালে যেমন ভারত আমেরিকা পরমাণু চুক্তি নিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছিল কংগ্রেস আর বামেদের মধ্যে। সত্যি কথা বলতে, ভারতের অর্থনীতি এখন রয়েছে একটা গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে। ভারত এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। জিডিপি ছাড়িয়েছে প্রায় ৩.৭৫ লক্ষ কোটি ডলার। আরো উন্নতির জন্য এই মুহূর্তে পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন। সোজা কথায়, দেশের উন্নতির দরকার, আর সেই উন্নতিটা হবে সামগ্রিকভাবে। এই সময় যদি নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্দরে ভয় কাজ করে, তাহলে তো ভীষণ মুশকিল।

 

মোদীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ, নীতীশ-নাইডু বড় ক্রাচ

মোদীর সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পরেই কিং মেকার হয়ে উঠেছেন নীতিশ কুমার আর চন্দ্রবাবু নাইডু। এই দুই ব্যক্তি যেমন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, তেমনি ওস্তাদ খেলোয়াড়। তারা নিজেদের পাওনা গন্ডা বুঝে নিতে এক চুলও জায়গা ছেড়ে দিচ্ছেন না। বুঝতে পারছেন, গত ১০ বছর ধরে ক্ষমতার পুরোটাই নরেন্দ্র মোদী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর হাতেই থেকেছে, অন্য কেউ সেই ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিল না। কিন্তু এবার সেই ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হবে। এনডিএ জোটের অন্যরা অংশগ্রহণ করবে। তাদের কথা শুনতে হবে। সরকার চালানোর ক্ষেত্রে তাদের কথাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, এই নতুন ধরনের কাজকে নরেন্দ্র মোদী কতটা গ্রহণ করতে পারবেন, তার উপর নির্ভর করছে জোট সরকারের স্থায়িত্ব। প্রসঙ্গত বলে রাখি, অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকার যখন গঠিত হয়েছিল ১৯৯৯ সালে, তখনও কিন্তু ছিল এনডিএ জোট। যেখানে ছিল ২৪টি দল। আর সেই সরকার টিকে ছিল মাত্র ৫বছর। সেই ঘটনার রিপিট কি আদৌ বিজেপির সঙ্গে হবে ? বহু কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাজপেয়ী সরকার যে পাঁচ বছর টিকে ছিল তার অন্যতম সিক্রেট জোটের মধ্যে সমন্বয় সাধনের ক্ষমতা। আর সেই ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইয়ে যথেষ্ট দক্ষতা দেখাতে হবে বিজেপিকে।

 

জোট সরকারে চাপ যে আসতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য। সরকার গঠনের আগেই তো অলরেডি চাপ বেড়ে গিয়েছে। নীতীশ কুমারের দল অগ্নিপথ নিয়ে পর্যালোচনা থেকে শুরু করে জাতি গণনার দাবিও করেছে। সংখ্যার জোরে যে বিরোধিতা এতদিন মোদী সরকার কানে তোলেনি, এবার শরিকদের কাছে এই সেই চাপ বাড়ল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। তাই ২০২৪ এর মন্ত্রিসভা ২০১৪ আর ২০১৯ এর তুলনায় অনেকটাই আলাদা হবে। যে কোন সময় নীতীশ কুমার কিংবা চন্দ্রবাবু নাইডু জোটের হাওয়ার দিক বদলে দিতে পারেন। জোট সরকার অনেকটা নির্ভর করবে এই দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ক্রাচের উপর।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version