ভারতে প্রতিবছর বন্যা কেন হয়? কোন পাপে এমন শাস্তি? আসল গলদটা কোথায়?

।। প্রথম কলকাতা ।।

ডুবছে ভারত। থৈ থৈ করছে বন্যার জল। জলবন্দি বড় বড় শহর। বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। চারিদিকে শুধুই হাহাকার। কোন ভুলে ভারতের এত বড় সর্বনাশ? প্রতিবছর ভারতে কেন বন্যা হয়? ভারত এত আধুনিক হওয়ার সত্বেও কেন রুখতে পারছে না বন্যাকে? কোন পাপের মাশুল গুনতে হচ্ছে?

বিগত ৪০ বছর তুলনায় দিল্লিতে এই বছর বেশি বৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ রাতারাতি ঘর ছেড়ে ঠাঁই নিচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্রে। পাশাপাশি হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব, হরিয়ানা আর উত্তরপ্রদেশের বহু জায়গায় বন্যায় বেহাল অবস্থা। ভারতে প্রতি বছর বর্ষা আসতেই কোনো না কোনো জায়গায় বন্যায় হবেই । ক্ষতি হয় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। হিমাচলে একের পর এক ল্যান্ড স্লাইড। ধুয়ে মুছে সাফ রাস্তা। জারি রেড অ্যালার্ট। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। বন্ধ ৭০০ এর বেশি রাস্তা। উত্তরাখণ্ডেও একই অবস্থা। প্রায় ১৫৫ টি রাস্তা বন্ধ। দেরাদুনে জল পৌঁছে গিয়েছে মানুষের ঘরে। পুরো উত্তর ভারত এখন বিপর্যয়ের মুখে। দায়ী করা হচ্ছে অত্যাধিক বৃষ্টিকে। কিন্তু এটা কি পুরোপুরি সত্যি? না। কারণ পাহাড়ি এলাকায় বিপর্যয় নামে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অত্যধিক বৃষ্টি আর হিমবাহের গলন বেড়ে গেলে। আসাম আর বিহারের কথা বললে, প্রতিবছরই কম বেশি বন্যা হয়। কিন্তু কোন ইম্প্রুভ নেই। নেপথ্যে মূল কারণ অবহেলা। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের তথ্য বলছে, ভারতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ক্ষতি হয় তার ৫০ শতাংশের বেশি হয় শুধুমাত্র বন্যার কারণে। আর সমতল এলাকায় বন্যার জন্য দায়ী মানুষ।

১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বন্যার কারণে ভারতের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬৪.৬৩ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ তে কেরালার বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ৪.২৫ বিলিয়ন ডলার, ২০১৫ তে তামিলনাড়ুর বন্যায় ৫০ হাজার কোটি থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকা, ২০২০ তে হায়দ্রাবাদের বন্যায় ক্ষতি হয়েছে ৬৭০ কোটি টাকা। এই তালিকাটা অনেকটা লম্বা। বন্যায় মানুষের ঘর ভেসে যায়, ছড়িয়ে পড়ে একাধিক রোগ। কমে উৎপাদন। ক্ষতির মুখে পড়ে দেশের অর্থনীতি। জলবায়ু পরিবর্তন দেশের জিডিপি পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে কিন্তু বৃষ্টি আরও অনিয়মিত হবে। বৃষ্টি হবে অল্প দিনের জন্য কিন্তু প্রচুর পরিমাণে। একদিকে দেখা দেবে খরা, অপরদিকে বন্যা।

বন্যা কিন্তু একেবারে নতুন নয়, গঙ্গা কিংবা ব্রহ্মপুত্রের মতো নদীতে বন্যা স্বাভাবিক ব্যাপার। আসলে মূল কালপ্রিট অপরিকল্পিত উন্নয়ন। ভিয়েতনামেও ভারতের মতো বৃষ্টি হয়, বন্যা হয় না। দেশটায় জল জমার জায়গায় নেই। ভারতের শহর নামেই চাকচিক্য কিন্তু জল নিকাশির ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ। অত্যাধিক জনসংখ্যার কারণে নদীর ধারে জমা হচ্ছে বর্জ্য, ভরাট হচ্ছে নদীর তলদেশ। বৃষ্টি হতেই বাড়ছে নদীর জল। মানুষ যা চাইছে সঙ্গে সঙ্গে তাই করছে, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভাবছে না। নির্বিচারে কাটছে গাছ। অপরদিকে মাটিও জল শুষে নেয়, কিন্তু এখন মাটি কোথায়? বন্যার জল মাটিতে প্রবেশের মতো শহরাঞ্চলে কোন সারফেস নেই। চারিদিকে শুধুই কংক্রিটের জঙ্গল। বিগত ৩০ সালের মধ্যে মুম্বাই ৪২ শতাংশ সবুজ হারিয়ে ফেলেছে। একটা সময় বেঙ্গালুরু আর হায়দ্রাবাদে প্রচুর হ্রদ ছিল, কিন্তু এখন পরিণত হয়েছে মানুষের বাসস্থানে। উপকূলীয় অঞ্চলকে বন্যা থেকে বাঁচায় ম্যানগ্রোভ বা ওয়েট ল্যান্ড। মুম্বাই থেকে গত ৪৪ বছরে গায়েব হয়ে গিয়েছে ৭১ শতাংশ ওয়েট ল্যান্ড।

এখন একটাই উপায়, বৃষ্টির জল ফিরিয়ে দিতে হবে মাটিতেই। করতে হবে রেন ওয়াটার হারভেস্টিং। বানাতে হবে রেইন গার্ডেন। যেখান থেকে বৃষ্টির জল শুষে নেবে মাটি। বাঁচতে এখনই বাড়িতে বৃষ্টির জল সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করুন। গাছ কাটা বন্ধ করুন। পরিবেশ বাঁচলে তবেই আমরা বাঁচব।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version