কাশ্মীরে কেন ঠাঁই হয়নি রাজা হরি সিংয়ের! ঝড়ঝাপটা ভরা জীবন, শেষে কে পেল ক্ষমতা ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

কাশ্মীরের রাজা হরি সিংয়ের ঠাঁই কেন হয়নি উপত্যকায়? কাশ্মীরকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করার চরম ফল পেয়েছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে বড় ঝড়ঝাপটা, একের পর এক শোকের শিকার হয়েছিলেন হরি সিং। নেহেরু বা জিন্না নয় কে ছিলেন হরি সিংয়ের কাছের মানুষ? কাশ্মীরের ইতিহাসের কথা উঠলেই মহারাজা হরি সিংয়ের কথা ওঠে কিন্তু তিনি কেমন ছিলেন? রাজা হয়ে এমন কোন বড় কাজ করেছেন? কাশ্মীরবাসীদের জীবনে তার অবদান কী তাঁর ব্যক্তিগত জীবন আসলে কতটা রহস্যে ভরা ছিল? জানেন মহাত্মা গান্ধীর কতটা কাছের ছিলেন রাজা হরি সিং? তাঁর পুত্র করণ সিং এখন কোথায় কাশ্মীরে থাকেন নাকি? তথ্য বলে বিলাসবহুল জীবন থাকা সত্ত্বেও জীবনের শেষ দিনগুলোতে কাশ্মীরে ঠাঁই হয়নি হরি সিংয়ের।

রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার আদর্শে চলা রাজা হরি সিং কাশ্মীরে এনেছিলেন যা না হলে কাশ্মীরিরা আজ বোধহয় শিক্ষার আলো পেতেন না। ডোগরা রাজপুত বংশে হরি সিংহের জন্ম ১৮৯৫-এর ২৩ সেপ্টেম্বর। এই ডোগরা বংশ প্রথমে ছিল শিখ শাসকদের সেনাদলে। তারপর ব্রিটিশদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে সম্বল করে ক্ষমতাদখল করে। ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ শিখদের পরে তারাই হয়ে ওঠে উপত্যকার শাসক। আর এই বংশের প্রথম শাসক ছিলেন গুলাব সিংহ জামওয়াল। গুলাব সিংহের উত্তরাধিকার-ধারায় রাজা অমর সিংহ জামওয়ালের পুত্র হরি সিংহ চোদ্দ বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবাকে হারান। সেই অবস্থায় তাঁর শিক্ষার দায়িত্ব নেয় ব্রিটিশ সরকার। মেজর এইচ কে ব্রার ছিলেন ব্রিটিশ সরকার নিযুক্ত হরি সিংয়ের অভিভাবক। অজমেঢ়ের মেয়ো কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর ছিল তাঁর সেনা-প্রশিক্ষণের পালা যা হয় দেহরাদূনের তৎকালীন ইম্পেরিয়াল ক্যাডেট কর্পস-এ।

পড়াশোনা বা ঐশ্বর্যে কোনও খামতি না থাকলেও হরি সিংয়ের ব্যক্তিগত জীবনে ছিল নানান ঝড়ঝাপটা। চার বার বিবাহ হয়েছিল। হরি সিংহের বিয়ের দু’বছর পরে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মারা যান তাঁর প্রথম রানি। তারপর দ্বিতীয় বিবাহ মাত্র পাঁচ বছরের দাম্পত্যের পরে মৃত্যু হয় নিঃসন্তান দ্বিতীয় স্ত্রীর। তৃতীয় রানিও ছিলেন সন্তানহীনা। পুত্রসন্তানের জন্ম দেন চতুর্থ রানি কাংড়ার তারা দেবী সাহিবা। বিয়ের তিন বছর পরে ১৯৩১ সালে জন্ম হয় হরি সিংহ ও তারা দেবীর একমাত্র পুত্র করণ সিংয়ের। ১৯৫০ সালে ভেঙে যায় রাজা হরি সিংহের চতুর্থ বিয়ে। রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষতার পথে চলা হরি সিং বারবার বিরোধীতা করেছিলেন মুসলিম লিগের। আবার কংগ্রেস বা জওহরলাল নেহরুরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন না তিনি। কাকা প্রতাপ সিংহের মৃত্যুর পরে ১৯২৫ সালে সিংহাসনে অভিষেক হয় হরি সিংহের। এই সালটা অনেকেরই জানা তবে হরি সিং নিজের রাজত্বে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছিলেন। আইন জারি করেছিলেন বাল্যবিবাহ রোধে নিম্নবর্গের জন্য খুলে দিয়েছিলেন ধর্মস্থানের দরজাও।

হরি সিং কোনওদিনই চাননি ভারত বা পাকিস্তান কোনও দিকেই অন্তর্ভূক্ত হোক কাশ্মীর কিন্তু পাকিস্তান সেনার হামলা থেকে নিজের প্রদেশকে রক্ষা করতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহায্য নেওয়া ছাড়া তাঁর আর কোনও‌ উপায় ছিল না। অথচ দেখুন কাশ্মীরের এত বড় ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হরি সিংয়ের শেষ ঠাঁই একেবারেই উপত্যকায় হয়নি। ঘটনাপ্রবাহ এবং পরিস্থিতি সবই হরি সিংহের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছিল। তিনি বাধ্য হন ছেলে কর্ণ সিংহকে যুবরাজ ঘোষণা করতে। পরিস্থিতির চাপে কাশ্মীর ছাড়তে বাধ্য হন হরি সিংহ। তখন ক্ষমতায় আসেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা শেখ আবদুল্লা। আর হরি সিং কোথায় গেলেন জানেন? ক্ষমতাচ্যুত হরি সিংহের জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছিল আরবসাগরের তীরে। সাবেক বম্বে শহরে যা এখন মুম্বই। সেখানেই প্রয়াত হন ১৯৬১-র ২৬ এপ্রিল। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী চিতাভস্ম ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। জম্মু ও কাশ্মীরে অস্থি বিসর্জন করা হয়েছিল জম্মুর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তাওয়ই নদীতে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version