।। প্রথম কলকাতা ।।
United states-Iran: ইরানের ইন্ধনে হুথিরা চাপে ফেলল যুক্তরাষ্ট্রকে! তাণ্ডব চালাচ্ছে লোহিত সাগরে। যুক্তরাষ্ট্রের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে লোহিত সাগর। বিশ্ব বাণিজ্যে পড়তে চলেছে মারাত্মক প্রভাব। যে লোহিত সাগরে কিনা যুক্তরাষ্ট্র সবসময় নজরদারি চালায়, সেখান থেকেই পালিয়ে গেল মার্কিন বিমানবাহী রণতরী! তাহলে কি এবার লোহিত সাগরে রাজ চালাবে হুথিরা? ইরান সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে এখন মারাত্মক পাওয়ার। যে কোনো মূল্যে লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রকে কোনঠাসা করতে কষে ফেলেছে সব প্ল্যান। শুধু ইরান, নাকি হুথিকে পিছন থেকে সাহায্য করছে অন্য কোনও শক্তি? হুথিরা মুখে বলছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে লোহিত সাগরে। কিন্তু মনে মনে অন্য প্ল্যান। এই যে লোহিত সাগর থেকে মার্কিন রণতরীকে পিছু হটতে হল, এটা কি আদৌ ভালোভাবে মেনে নেবে যুক্তরাষ্ট্র? এর পাল্টা হুথিদের উপর বড় হামলা চলবে না তো? তখন কোথায় যাবে হুথি? শক্তির নেপথ্যে আসল মাস্টারমাইন্ড কিন্তু সেই ইরান।
* যুক্তরাষ্ট্রের দানব রণতরী কি হার মানল হুথিদের কাছে?
ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথি। বিগত কয়েক দশকে লোহিত সাগরের অন্যতম ত্রাস। সম্প্রতি নাকি ইয়েমেনিরা মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস আইজেনহাওয়ারের উপর হামলা করেছে। যদিও পেন্টাগন এই খবরকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। ওদিকে ইয়েমেনিদের দাবি, তারা সত্যি সত্যি হামলা চালিয়েছে। পেন্টাগনের বিশেষজ্ঞরা ঘোষণা করেছেন, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, লোহিত সাগরে এই রণতরীর মিশন শেষ হয়েছে। তাই রণতরীটি লোহিত সাগর থেকে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু বিষয়টাকে হালকা ভাবে নিচ্ছে না হুথি। তারা মনে করছে, তাদের হামলাতেই নাকি এমনটা কাণ্ড ঘটাল যুক্তরাষ্ট্র। নিজেদের ইজ্জত বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্র এখন যুক্তি দিয়ে বলছে অন্য কথা। দুই পক্ষ যে যাই বলুক, এ কথা ঠিক যে এখন বেশ উত্তপ্ত লোহিত সাগর। যেখানে বড় ভূমিকা রয়েছে হুথিদের। এদের কর্মকাণ্ড ভাবিয়ে তুলেছে ওয়াশিংটনকে। গাজা থেকে পরিচালিত হামাস আর ইসলামী জিহাদের অভিযানের কারণে নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওই রণতরী লোহিত সাগরে ছুটে এসেছিল। কিন্তু এখন সেটি অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কথায়, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে লোহিত সাগরে আইজেনহাওয়ারে পিছু হটা দরকার। সম্ভবত এবার সেখানে যাবে ‘থিওডোর রুজভেল্ট’ রণতরী।
কিন্তু প্রশ্নটা হল, এই যে আইজেনহওয়ার ফিরে গেল, কেন এটাকে এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? কেনই বা বারংবার হাইলাইটেড করা হচ্ছে বিষয়টাকে? হুথিদের ক্ষমতা কতটা বেড়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র লোহিত সাগরে কতটা দুর্বল হয়ে পড়ছে, সেটাই কি শুধুমাত্র বোঝানোর জন্য? আসলে কি বলুন তো, এই রণতরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দশটি বড় রণতরীর অন্যতম। বলা হয়ে থাকে, এটি নাকি মার্কিন নৌবাহিনীর অন্যতম একটা প্রধান পেশী শক্তি। সবচেয়ে শক্তিশালী রাডার ব্যবস্থা আর নেভিগেশন সহায়ক যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত। এই রণতরী সাবমেরিনের সম্ভাব্য হামলা ঠেকানোর পাশাপাশি গতির উপর নজর রাখতে পারে। আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপ করা স্পেরো ক্ষেপণাস্ত্রের নৌ ও স্থল সংস্করণের অধিকারী। গতবছরের অক্টোবরে হামাসের হামলায় যখন ইসরায়েল একটু কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল, তখনই এই অঞ্চলে পাঠানো হয়েছিল আইজেনহাওয়ারকে। অভিযোগ উঠেছিল, ইসরায়েলের আশেপাশে একটা ভাসমান বিমান ঘাঁটি হিসেবে নাকি কাজ করবে এই রণতরীটি। দরকার পড়লে যুদ্ধবিমান গুলো খুব অল্প সময়ে এখান থেকে অভিযান চালাতে পারে। কিন্তু হুথিদের একের পর আর এক হামলার মুখে লোহিত সাগর ছেড়ে চলে যাচ্ছে সেই জাহাজ, দাবি ইয়েমেনিদের। যা মোটেই প্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু এটা কি মেনে নেওয়া যায়, যে হুথিদের মতো একটা সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার মুখে নাকি মার্কিন রণতরী? আসলে এখানেও এমন কিছু ফ্যাক্ট রয়েছে, যার কারণে যুক্তরাষ্ট্র কিছু করতে পারছে না।
* লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের হাল বেহাল, হুথিরা হারাচ্ছে স্ট্র্যাটেজিতে
লোহিত সাগরকে কোনদিনও কি যুক্তরাষ্ট্র হুথি মুক্ত করতে পারবে না? রয়েছে বড় সংশয়। আসলে, হুথির মতো একটা সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে কোথাও গিয়ে যেন স্ট্র্যাটেজিতে মার খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইয়েমেনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে গিয়ে হুথিরা মিসাইল, রাডার, হেলিকপ্টার, ছোট নৌকা কিংবা ড্রোনের সমন্বয়ে আক্রমণ পরিচালনা করছে। হুথিদের ব্যবহার্য ড্রোনের দাম বড় জোর ২০০০ ডলার, আর সেই ড্রোন ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্রকে যখন প্রায় ২০ লক্ষ ডলার দামের মিসাইল ব্যবহার করতে হচ্ছে, তখন পোষাচ্ছে না। অনেক দিন আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে কয়েক ডজন দেশের সেনা নিয়ে গঠিত কম্বাইন্ড মেরিটাইম ফোর্সেস মধ্যপ্রাচ্যকে নজরদারির আওতায় রাখছে। যারা সফলভাবে সোমালিয়ার জলদস্যুর মতো হুমকিকে মোকাবিলা করছে। কিন্তু হুথিরা যেভাবে আক্রমণ করছে, বা বলা ভালো যে আক্রমণ কৌশল বেছে নিয়েছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র শতভাগ সক্ষম হবে কিনা তা বলা মুশকিল। তাছাড়া হুথিদের মূল শক্তিই তো ইরান। প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে অস্ত্রশস্ত্র আর্থিকভাবে নানান সুবিধা পেয়ে থাকে। প্রসঙ্গত আরেকটা কথা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। আট বছর ধরে সৌদি আরব ইয়েমেনের হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একেবারে হারাতে পারেনি। উল্টে সৌদি সরকারকে হুথিদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করতে হয়েছে। তার উপর বর্তমানে যেন হুথিদের কপাল কিছুটা ভালো যাচ্ছে বলতে হয়। এই অঞ্চলে থাকা বাহরাইনের মতো যুক্তরাষ্ট্রের বহু ঘনিষ্ঠ মিত্র হুথিদের হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অপারেশন প্রসপারিটি গার্ডিয়ানের যোগ দেয়নি। এমনকি মিশর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের এই হুথি বিরোধী জোটে যোগ দিতে রাজি হয়নি। কারণ একটাই। যদি এই জোটে যুক্ত হয়, তখন আরব দেশগুলো তাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষ সমর্থনের অভিযোগ আনতে পারে। আর তাই, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে হুথিদের হুমকি সামাল দেওয়া যেন আরো কঠিন হয়ে পড়ছে।
লোহিত সাগরের অশান্তির জেরেই কিন্তু গোটা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে, চলতি বছরের জানুয়ারির গোড়াতেই, এশিয়া থেকে উত্তর ইউরোপে ৪০ ফুটের কন্টেইনার পাঠানোর খরচ বেড়ে পৌঁছেছে ৪ হাজার ডলারে। আর জানুয়ারির শুরু থেকে মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত, ২৪ ফুটের একটা শিপিং কন্টেইনার ভারত থেকে ইউরোপ আর মার্কিন পূর্ব উপকূলে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যয়ের পরিমাণ ৬০০ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে দেড় হাজার ডলার। সত্যি কথা বলতে, যেন খরচ বাড়ছে অস্বাভাবিক ভাবে। যার জন্য কিছুটা দায়ী হুথিরা।
* লাইমলাইটে আসতে চাইছে হুথি, ইরানের সাথে গভীর সখ্যতা
ইরান সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রথম থেকেই দাবি, গাজায় চলমান ইসরায়েলের হামলা বন্ধ না করলে তাদের হামলা চলতেই থাকবে। আর সেটা কাজেও করে দেখাচ্ছে। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংশ্লিষ্ট জাহাজ গুলোর উপর লোহিত সাগর অঞ্চলে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এই ইয়েমেনের হুথিরা। আসলে তারা খুব ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে, এই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য রুট বিশ্বের শিপিং ট্রাফিকের প্রায় ১৫ শতাংশের জন্য দায়ী। তাদের হামলার জেরেই কিন্তু ইতিমধ্যেই বহু শিপিং কোম্পানি তাদের জাহাজগুলিকে আফ্রিকার দক্ষিণ দিয়ে ঘুরপথে চলাচল করতে বাধ্য করছে। সময়ও লাগছে প্রচুর, দূরত্ব বাড়ছে। পণ্য নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর এই সমস্ত ক্ষতির দায় পরোক্ষভাবে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের উপর। তাই দেশটা আপ্রাণ চাইছে হুথিকে দমন করতে। কিন্তু পারছে কি? ইমেজ খারাপ হচ্ছে ইসরায়েলেরও। আর গোটা বিশ্ব জানে হুথি একটা সশস্ত্র গোষ্ঠী। তাই লোহিত সাগরের সংকটে পুরো দায়ভারটা গিয়ে যেন পড়ছে পশ্চিমা দুনিয়ার উপর।
ইরান সমর্থিত হুথিরা ২০১৪ সালে ক্ষমতা দখলের পর ইয়েমেনের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। যার মধ্যে রয়েছে রাজধানীর সানা, দেশটার উত্তর অংশ আর লোহিত সাগরের উপকূল অঞ্চল। আর এই অঞ্চলটা ইউরোপের সাথে এশিয়ার যোগাযোগের সংক্ষিপ্ততম পথ, সেই পথকেই নিজেদের অস্ত্রের আওতায় নিয়ে নিচ্ছে হুথি। বহু সমালোচক সাম্প্রতিক সময় বলছে, হুথিরা যে জাহাজে হামলা করছে, তার মধ্যে বহু জাহাজের সাথে কিন্তু ইসরায়েলের কোনও সম্পর্ক নেই। আসলে এরা মধ্যপ্রাচ্যের সংকটকে কাজে লাগিয়ে গোটা বিশ্বের আলাদা করে গোটা বিশ্বের নজরে আসতে চাইছে। কোথাও গিয়ে দেখাতে চাইছে তারা একটা বড় সশস্ত্র গোষ্ঠী। হয়তো বা পরিকল্পনা করে রেখেছে, ইয়েমেনের ক্ষমতায় আসার। নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করার জন্য বেছে নিয়েছে লোহিত সাগরকে। কারণ এখানেই তারা টক্কর দিতে পারবে বিশ্বের তাবড় তাবড় পরাশক্তি গুলোর সাথে। স্বাভাবিকভাবেই তারা তখন চলে আসবে লাইমলাইটে। আর সেটাই কিন্তু হচ্ছে। হুথিরা যেন ইরানের কাছে গিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে, তারা ইরানের কার্যকরী মিত্র। হুথিদের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক একদমই ভালো নয়। আবার ইরানের সাথেও সৌদির সম্পর্ক ভালো নয়। তাই হুথিরা মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের জোর বাড়াতে আরো বেশি করে ঘনিষ্ঠ হতে চাইছে ইরানের সাথে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম