ইসরো কী ম্যাজিক জানে ? ক্ষমতা থাকা সত্বেও চাঁদ ছুঁতে ব্যর্থ হয় কেনো দেশগুলো জানেন

।। প্রথম কলকাতা ।।

চন্দ্রযান ৩ কে দেখে ঈর্ষা হচ্ছে? ভেবে দেখেছেন ভারত যা পারলো, অন্যান্য বহু দেশ তা কেন পারলো না? এতো ক্ষমতা সত্ত্বেও কেন ব্যাক টু ব্যাক ফেইলিয়ারের মুখে পড়তে হলো তাদের? টার্গেট স্থির, তারপরেও বছরের পর বছর ধরে চাঁদে অবতরণ প্রায় অসাধ্য কেন? শত চেষ্টাতেও চাঁদের মাটি ছুঁতে পারেনি বহু মহাকাশযান, কেন জানেন? ভারতের ইসরো কি ম্যাজিক জানে? চীন যুক্তরাষ্ট্রকেও তো পেছনে ফেলে দিল দেশটা। ভারতের অ্যাডভানটেজ কী? উন্নত প্রযুক্তি, লাগাতার গবেষণা, একের পর এক পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেও চাঁদ ছোঁয়া সহজ নয়।

প্রথমত, পৃথিবী থেকে চাঁদের দীর্ঘ দূরত্ব পার হতে গিয়েই যান্ত্রিক বিভ্রাটের কারণে মিশন ব্যর্থ হওয়ার চান্স থাকে। তাছাড়া, চাঁদে যে মহাকাশযানগুলো প্রবেশ করে, তাদের জন্য অপেক্ষা করে অসম্ভব চ্যালেঞ্জ। চাঁদের বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত পাতলা, ওই পরিস্থিতিতে মহাকাশযানের গতি কমাতে প্রপালশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। যা সঠিক ভাবে চালনা করতে গেলে মহাকাশযানটিকে প্রচুর জ্বালানি বহন করতে হয়, যাতে নিরাপদে সফট ল্যান্ডিং এর জন্য সে নিজেকে ধীর করতে পারে। কিন্তু বেশি জ্বালানি বহন করলে মহাকাশযানটা ভারী হয়ে যায়। এই সময় ব্যালেন্স ঠিক রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি, অবতরণের জন্য অবস্থান নির্ণয়ও সহজ নয় চাঁদে। সেখানে নেই কোনও জিপিএস সিস্টেম তাই, মহাকাশযান একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অবতরণ করার জন্য উপগ্রহের নেটওয়ার্কের উপরেও নির্ভর করতে পারে না। এক্ষেত্রে চাঁদের মাটিতে নির্দিষ্ট পয়েন্টে সফট ল্যান্ডিং করতে মহাকাশযানে অবস্থিত কম্পিউটারগুলিকে দ্রুত গণনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সফট ল্যান্ডিং এর কয়েক কিলোমিটার আগে প্রপালশন সিস্টেমের ধাক্কায় সেন্সরগুলোও ঠিক করে কাজ করে না অনেক সময়। তখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। চাঁদের বুকে অবস্থিত গর্ত, পাহাড়ি ভূভাগ অনেক ক্ষেত্রে সফট ল্যান্ডিং এর জন্য অবস্থান নির্ণয়ে বাধা হয়ে ওঠে।

তাই ক্ষমতা সত্ত্বেও অনেক দেশের কাছেই সহজ হয় না চন্দ্রযানগুলোর সফল অবতরণ। এর মধ্যেও ১৯৫৯, সালে রাশিয়া আইস ব্রেক করেছিল। তারপর থেকে বহু দেশ চাঁদ ছোঁয়ার চেষ্টায় সামিল হয়েছে, কম্পিটিশন‌ চালিয়েছে, কিন্তু সাকসেসফুল হতে সবাই পারেনি। ১৯৬০ এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন একের পর এক চন্দ্রাভিযানে সামিল হয়েছে, যতক্ষণ না সাফল্য এসেছে চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেও ল্যান্ডিং করতে না পেরেৎব্যর্থ হয়েছে একের পর এক মিশনI মনে করিয়ে দিই, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের চন্দ্রযান ২ যেবার ফেইল করলো, ওই একই বছরে অন্যান্য দেশের চন্দ্র অভিযানের একাধিক প্রজেক্ট ফেইল করে তাছাড়া, চলতি বছর ইসরায়েলের নেতৃত্বাধীন বেরেশিট মুন মিশন ব্যর্থ হয়েছে। এপ্রিলে, জাপানের Hakuto-R ও সফট ল্যান্ডিং করতে পারেনি।

সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে চীন, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফল হওয়ার পর ভারতের চন্দ্রযান ৩ চাঁদের বুকে সফট ল্যান্ডিং এ সফল হয়েছে। অথচ, মহাকাশ গবেষণায় ষ ভারত যে টাকা ইনভেস্ট করেছে তা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অতি সামান্য। কিন্তু তারপরেও বাকিরা যা পারেনি তা করে দেখালো ভারত। ভারত চন্দ্রযানকে পৃথিবী এবং চাঁদের এমন রুটে পাঠিয়েছে, যেখানে মাধ্যাকর্ষণের সুবিধা নিয়ে কম জ্বালানি খরচ করে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। আবার সফট ল্যান্ডিং করেছে চাঁদ এর দক্ষিণ দিকে, যা কোনও দেশ ছুঁতে পারেনি। শুনতে অবাক লাগলেও, এটা বাস্তব যে চন্দ্রযান ২ এর থেকেও চন্দ্রযান ৩ মিশনে খরচ কম হয়েছে। অথচ ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত প্রযুক্তি। সঙ্গে ২০১৯ এর ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে চন্দ্রযান ৩ এ একগুচ্ছ বদল এনেছে ইসরো। আর উপরি পাওনা, ভারতীয় বিজ্ঞানীদের আত্মবিশ্বাস যা চাঁদেও সফলতা এনে দিল ভারতবর্ষকে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version