Chicken Pox: চিকেন পক্সকে ‘মায়ের দয়া’ বলার কারণ কী? কোন কাহিনী জড়িয়ে রয়েছে এর সঙ্গে?

।। প্রথম কলকাতা ।।

Chicken Pox: ধীরে ধীরে মানুষের গা থেকে গায়েব হচ্ছে শীতের পোশাক, বাড়ছে তাপমাত্রার পারদ। দুপুর বাড়লেই ঠাটাপোড়া রোদে নাজেহাল অবস্থা হচ্ছে মানুষের। এখন আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ার সময়। আর ঠিক এই সময়তেই নানা রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। যে রোগের তালিকায় শীর্ষে নাম রয়েছে বসন্ত রোগ অথবা চিকেন পক্সের। করোনা কিছুটা থিত হতেই বাড়ছে চিকেন পক্সের প্রকোপ। এই রোগকে জল বসন্তও বলা হয়ে থাকে। এটি একটি ভাইরাস (Virus) ঘটিত সংক্রমণ। এর ফলে শরীরে যে গুটি গুটি তরল পদার্থে ভরা ভ্যাসিকুলার র‍্যাশ দেখা যায়, তা প্রচণ্ড পরিমাণে চুলকাতে থাকে। সারা বছর এর প্রভাব না থাকলেও, বসন্তের শুরুতে এই রোগে আক্রান্ত হন অনেকেই। তাই এই সময় একটু অসাবধান হলেই আপনার শরীরে দেখা দিতে পারে এই রোগ। অনেক সময় চিকেন পক্স (Chicken Pox) হলে জ্বর আসে। কিন্তু সবথেকে বাজে বিষয় হল এই রোগ সেরে গেলেও, এর দাগ দীর্ঘ অনেক বছর পর্যন্ত শরীরে থেকে যায়। এই চিকেন পক্স বা জল বসন্তকে ‘মায়ের দয়া’ হয়েছে বলা হয়।

কিন্তু কেন? কিসের ভিত্তিতে এই ভাবনা?

আজকের দুনিয়ায় দাঁড়িয়ে এই ধরনের চিন্তাধারা রাখার কী মানে! বেশিরভাগ ঘরে চিকেন পক্স বা জল বসন্ত হলে দেবী শীতলার (Devi Shitala) পুজো দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। শীতলা দেবী দুর্গারই আরেকটি রূপ। বলতে গেলে, এটা বহু প্রচলিত বিশ্বাস। দোল উৎসব পালনের আট দিন পরে দেবী শীতলার পুজো হয়ে থাকে। আগে বসন্ত রোগে গ্রামের পর গ্রাম উজার হয়ে যেত। আর সেই সময় গ্রাম বাংলার মানুষ মনে করতেন, শীতলা মায়ের পুজো দিয়ে সমস্ত রোগ-ব্যাধি সারানো যায়। তাই হাম হোক কিংবা চিকেন পক্স সেই সব অসুখ মা নিয়ন্ত্রণে রাখেন বলে বিশ্বাস। তাই বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে বলা হয় ‘মায়ের দয়া’ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) ছাড়াও উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় শীতলা পুজো হয়ে থাকে।

শবর জাতীয়রা শীতলার পুজো করা শুরু করেন। পরে সকল সম্প্রদায়ের কাছে বসন্ত রোগের দেবী হিসেবে পূজিতা হন তিনি। ভক্তরা মনে করেন, দেবী নিজে গঙ্গায় স্নান করে যেমন ঠান্ডা হন, সেরকমই পৃথিবীর মাটিকেও শীতল রাখেন। তাঁর আরাধনা করলে, তাঁর কাছে মন দিয়ে প্রার্থনা করলে রোগ মুক্ত হওয়া যায়। তবে পুরাণ ছাড়াও এই দেবী রয়েছেন লোককথায়। যেমন, শীতলামঙ্গল কাব্যে। বাংলার কবি মানিকরাম গাঙ্গুলী, দ্বিজ হরিদেব বা কবি জগন্নাথ, এমনকি কবি বল্লভ এবং কৃষ্ণরাম দাস দেবীর বন্দনা করেছেন। মনসামঙ্গলের মতোই শীতলামঙ্গল। দেবী শীতলার মূর্তি অনুযায়ী, তিনি গাধার উপরে বসে থাকেন। তাঁর এক হাতে থাকে পাত্র, অন্য হাতে থাকে ঝাঁটা। আর এই পুজো শুধুমাত্র মহিলারাই করে থাকেন। বলা হয়ে থাকে, এই দিনে যে নারী উপবাস করেন এবং এক মনে দেবীর আরাধনা করেন, তাঁর বাড়িতে অর্থ ও খাবারের কোনোদিন অভাব হয় না। তাঁর পরিবারের সকলেই সুস্থ থাকেন।

পুরাণ অনুযায়ী:

পুরাণ মতে, জ্বরাসুর নামে এক রাক্ষস ছিল। যে যেখানেই যেত সেখানে বাচ্চাদের মধ্যে জ্বর ছড়াত। আর সেই জ্বরাসুরের কারণে মর্ত্যলোকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন তাঁকে দমনে আবির্ভূত হন শিব ও পার্বতী। মহাদেব ভৈরব রূপে এবং পার্বতী শীতলা রূপ নিয়ে আসেন মর্ত্যলোকে এবং নিজের হাতে থাকা পাত্রর জল ছিটিয়ে সমস্ত কিছু শান্ত করেন। আর ঝাড়ু দিয়ে রোগ-জীবাণু দূরে সরিয়ে দেন। বলতে গেলে, পুরনো ধ্যান-ধারণা থেকেই ‘চিকেন পক্স’ হলে বলা হয় ‘মায়ের দয়া’ হয়েছে। এটা পুরোটাই বিশ্বাস আর আস্থা নির্ভর। তাই বিজ্ঞানের যুগে অনেকেই এই রোগ হলে তাকে ‘মায়ের দয়া’ বলে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version