Gumnami Baba: নাম না জানা সাধুকে ঘিরে রহস্যের জাল, গুমনামি বাবা আর নেতাজির যোগসূত্র কী ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

Gumnami Baba: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতবাসীর কাছে একটি কৌতূহলের কেন্দ্র। যিনি ভারতকে ব্রিটিশ অধীনতা থেকে মুক্ত করার জন্য প্রাণপণ লড়াই করে গিয়েছিলেন সেই ব্যক্তিত্বের মৃত্যু ধোঁয়াশায় জড়ানো। ১৯৪৭ সাল থেকে যাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছিল তাকে। ১৮৮৫ সালে সারা ভারতে আলোড়ন ফেলে দেয় আরও একটি সংবাদ। দাবি করা হয়, নেতাজির (Netaji) বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়নি। সেদিন তিনি জীবিত ছিলেন, তবে ছিলেন লোক চক্ষুর অন্তরালে। এই দাবির সত্যতা যে কতটা তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়নি।

তবে বহুবার দাবি করা হয়েছে, নেতাজির মৃত্যুর খবর ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি তাঁর পরিচয় বদলে ফেলেন। গুমনামি বাবা (Gumnami Baba) নামে বাকি জীবন অতিবাহিত করেন তিনি সাধুর বেশে। কিন্তু সেই সাধুর কোন গুণই আর পাঁচটা সাধুর মতো ছিল না। নিজেকে কোন নামও দেননি তিনি। তাঁর আশেপাশের মানুষের কাছে তিনি ভগবানজি ছিলেন। আর সর্বসাধারণের জন্য গুমনামি বাবা। ১৯৮৫ সালের ২৫ শে অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের জনপ্রিয় একটি হিন্দি দৈনিক ‘নয়ে লোগ’ একটি খবর প্রকাশ করে। আর সেই খবরের শিরোনামে তাঁরা লেখে ‘ফয়জাবাদে অজ্ঞাতবাসে থাকা সুভাষচন্দ্র বোস আর নেই ‘।

এই শিরোনামটি মুহূর্তের মধ্যে গোটা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। হঠাৎ করেই অযোধ্যার ছোট্ট শহর ফয়জাবাদ সংবাদের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে। সত্যিই কি সেই শহরে নিজের জীবনের শেষ ভাগ টুকু লোক চক্ষুর আড়ালে থেকে কাটিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ? মাত্র ১৩ জন শবযাত্রী নিয়ে সরযূ নদীর তীরে ওই সাধু গুমনামি বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। ওই সাধু বাবাকে স্থানীয়রা গুমনামি বাবা নামে ডাকতেন । কিন্তু গুমনামি বাবার সঙ্গে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আদৌ কি কোন যোগসূত্র ছিল ? আর যদি থেকে থাকে সেগুলি বা কী ছিল ?

কে ছিলেন গুমনামি বাবা ?

ষাটের দশকের গোড়ার দিকে উত্তর প্রদেশের নেমেসার এলাকায় অযোধ্যার একটি বস্তিতে হঠাৎ করে বসবাস শুরু করেন একজন সাধুবাবা। গেরুয়া বসনধারী সুপুরুষ চেহারার ওই সাধু নেমিসারে একটি ছোট্ট ভাড়া ঘর নিয়ে থাকতে শুরু করেন। তিনি সাধারণ মানুষের সাথে খুব একটা মেলামেশা করতেন না। সবসময় থাকতেন পর্দার আড়ালে। কখনই তাঁর কেউ দর্শন পেত না। যদি তিনি বাইরে বেরোতেন, তখনও তাঁর মুখ চাদর দিয়ে ঢেকে রাখতেন। নিজের নাম কখনও বলতেন না জিজ্ঞেস করলে উত্তরে জানাতেন, তাঁর কোন নাম নেই।তাঁর বাড়িতে হাতেগোনা কয়েকজন মানুষের যাতায়াত ছিল। এছাড়া তাঁর বাড়িতে আসার কেউ অনুমতি পেতেন না কেউ।

গুমনামি বাবার অদ্ভুত সংগ্রহের তালিকা

একজন সাধুর সংগ্রহে যা থাকতে পারে গুমনামি বাবার সংগ্রহে সেই রকম কিছুই ছিল না। বরং তার সংগৃহীত জিনিস তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশ্যে আসায় রীতিমতো সকলেই হক চকিয়ে গিয়েছিলেন। ওই সাধু বাবার ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ২০০০ এরও বেশি আর্টিকেল এবং ২৫ টি স্টিলের ট্রাঙ্ক। ওই ট্রঙ্কের মধ্যে ছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবার এবং নেতাজির ব্যক্তিগত কিছু ছবি। একটি বাঁধাই করা ছবি ছিল পিতা জানকীনাথ বসু এবং মাতা প্রভাবতী দেবীর। এছাড়াও ছিল গোল্ড ফ্রেমের চশমা, রোলেক্স ঘড়ি, বাইনোকুলার, টাইপ রাইটার, ক্যাসেট রেকর্ডার সহ প্রচুর চিঠিপত্র এবং নথি। সব থেকে অবাক করার মতো একটি নথিপত্র হল আজাদ হিন্দ ফৌজ বাহিনীর পরিচিতদের একটি দীর্ঘ তালিকা। একজন সাধারণ সাধুর কাছে এই তালিকা আসা খুবই অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছিল সকলের। প্রথম দিকে অনেকেই ভেবেছিলেন গুমনামি বাবা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর একজন বড় অনুরাগী। কিন্তু এই আজাদ হিন্দ ফৌজের কর্মীদের তালিকা সেই তত্ত্বকে একেবারে তছনছ করে দেয়। বলা হয় এই গুমনামী বাবা নাকি মটন কিমা এবং বাঙালির প্রিয় খাবার শুক্ত খেতে দারুন পছন্দ করতেন। এছাড়াও দামি সিগারেট খেতেন । তাই বলাই বাহুল্য তাঁর কোন আচার-আচরণই সাধুবাবা সুলভ ছিল না।

গুমনামি বাবা ও নেতাজি

গুমদামি বাবার মৃত্যুর পর দাবি উঠেছিল তিনি আসল নেতাজি। এই দাবির সত্যতা কতটা তা যাচাই করার জন্য ১৯৯৯ সালে আদালতের নির্দেশে মুখার্জি কমিশন বসল। নেতাজির মৃত্যু রহস্য দিয়ে চলল তদন্ত । যদিও নেতাজির পরিচিতদের মধ্যে অনেকেই দাবি করেছিলেন , গুমনামি বাবা আসল নেতাজি নন । আবার একাংশের দাবি ছিল, তিনিই ছিলেন নেতাজি। সুভাষচন্দ্র বসুর মেয়ে অনিতা এই বিতর্ককে সামনে রেখে জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবা জীবিত আছেন নাকি মৃত্যু হয়েছে সেই বিমান দুর্ঘটনাতেই তা আসলে বলতে পারবেন ঈশ্বর। যিনি স্বাধীনতার জন্য এত ত্যাগ করলেন তিনি কেন নিজের নাম বদলে দেশে ফিরলেন? কেন পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করলেন না? কাজেই এই বিতর্ক তাঁর কাছে একেবারেই অর্থহীন ছিল।

নেতাজির মৃত্যু রহস্য নিয়ে মুখার্জি কমিশনের তদারকিতে ওই গুমনামি বাবার ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর কয়েকটি দাঁত পাওয়া গিয়েছিল । সেই দাঁতের ডিএনএ টেস্ট করা হয় ভারত সরকারের সিএফএসএল ল্যাবরেটরিতে। কলকাতার সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ওই দাঁতের ডিএনএ টেস্ট হয় । আর সেই ডিএনএ টেস্টের ইলেকট্রোফেরোগ্রাম রিপোর্ট আরটিআই করেছিলেন সায়ক সেন নামে এক ব্যক্তি। ২০২২ সালে ২১ অক্টোবর টিভি ৯ বাংলায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই সময় সায়ক বাবুকে একটি জবাব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে থাকে ইলেকট্রোফেরোগ্রামটি তাকে দেওয়া হবে না বলে জানানো হয় । একইসঙ্গে বলা হয় তিনি থার্ড পার্টি । অবশ্য সেই সময় মুখার্জি কমিশনের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মুখোপাধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন। ফাস্ট পার্টি কিংবা সেকেন্ড পার্টি কে সেই বিষয়ে সায়ক বাবুকে কিছুই জানানো হয়নি।

পরবর্তীতে সায়ক সেন পুনরায় একটি আরটিআই দাখিল করেন। জানতে চান ইলেকট্রোফেরোগ্রামটি কি আদৌ রয়েছে নাকি নষ্ট হয়ে গিয়েছে? আর যদি সেটি থেকে থাকে তাহলে যেন তাকে দেওয়া হয়। টিভি নাইন বাংলায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয় , সায়ক বাবুর বক্তব্য ছিল, গুমনামি বাবার ইলেকট্রোফেরোগ্রামটি প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না। তা আনা হলে দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি ভারতে হিংসা পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। সরকারিভাবে গুমনামি বাবা এবং নেতাজির ডিএনএ এবং হাতের লেখা আলাদা বলেই জানানো হয় রিপোর্টে। অনেকেই মনে করেন গুমনামি বাবার মৃত্যুর সঙ্গে তাঁর রহস্য চিরজীবনের মত চাপা পড়ে গিয়েছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ফয়জাবাদে এখনও পর্যন্ত বহু মানুষের মনেই জীবিত রয়েছেন নেতাজি ওরফে গুমনামি বাবা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version