Azad Hind Fauj: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় নাম আজাদ হিন্দ ফৌজ, যুদ্ধক্ষেত্রে কতটা ছাপ রাখতে পেরেছে এই বাহিনী?

।। প্রথম কলকাতা ।।

Azad Hind Fauj: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তাঁর নামের পাশাপাশি তাঁর সৃষ্টিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এক কথায় বলতে গেলে ব্রিটিশ সৈন্যদের কাছ থেকে ভারত মাতাকে স্বাধীন করতে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছেন তিনি ও তাঁর ফৌজ। সাল ১৯৪৩, রাসবিহারী বসু (Rash Behari Bose) নেতাজির হাতে তুলে দিলেন আজাদ হিন্দ‌ ফৌজের (Azad Hind Fauj) দায়িত্ব। ওই বছর ২১ অক্টোবর নেতাজি শুরু করেন আজাদ হিন্দ ফৌজ ও সরকার পরিচালনার কাজ। নেতাজি সর্বদা মনে করে এসেছেন স্বাধীনতার সংগ্রামে জয় পেতে হলে দুটি জিনিসের ভীষণ প্রয়োজন, এক হল- জাতীয় সেনাবাহিনী, অপরটি হল- জাতীয় সরকার। আর নেতাজি কর্তৃক আজাদ‌ হিন্দ সরকার নিঃসন্দেহে তাঁর কর্মকুশলতার পরিচয় দেয়।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে শহীদ হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু সেই সঙ্গে সেই সংগ্রামে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে আজাদ হিন্দ ফৌজ। ‌দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেতাজি চেয়েছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জন করতে। উত্তর-পূর্ব ভারত দিয়ে তাঁর নেতৃত্বে ফৌজের আক্রমণ ব্রিটিশ দখলদারদের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এই ফৌজ কোথায় গঠিত হয়েছিল? ১৯৪২-এর ১ সেপ্টেম্বর রাসবিহারী বসু সিঙ্গাপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রথম স্থাপিত করেন। ‘নেতাজি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর কর্মকর্তা অধ্যাপক কৃষ্ণা বসু এক প্রবন্ধে লিখেছেন, দেশের জন্য সংগ্রামে সকল সম্প্রদায়ের মানুষই ছিলেন। কিন্তু গৌরবময় ভূমিকা পালন করেছেন নেতাজির নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ ফৌজ। নেতাজির পর ওই ফৌজের ফার্স্ট ব্রিগেডের অধিনায়ক ছিলেন জামান কিয়ানী, যিনি ঈম্ফলের যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

সাল ১৯৪১-এর ১৭ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্র গোপনে কলকাতা ত্যাগ করে জার্মানি পৌঁছান। বার্লিনে জার্মানির সমর্থনে ভারতের অস্থায়ী স্বাধীন সরকার গঠন করেন এবং বার্লিন বেতার সম্প্রচারের মাধ্যমে তাঁর ধ্যান-ধারণা প্রচার করতে থাকেন। জার্মানি থেকে তিনি জাপানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। এই সময় সেখানকার ভারতীয় সম্প্রদায় তাঁকে ‘নেতাজি’ উপাধি দেয়। আর সেখানেই ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানের জন্ম হয়। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে জাপানিদের অস্বাভাবিক সাফল্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় থাকা ভারতীয়দের স্বাধীনতা নিয়ে উত্তেজিত করে তোলে। সেখানে ছোট ছোট সংঘ গড়ে ওঠে। যাঁদের মধ্যে একটির নেতা ছিলেন প্রীতম সিং। প্রীতম সিং ও জাপানি সেনানায়ক মেজর ফুজিহারা বন্দী ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তোলার অনুরোধ করেন পঞ্জাব রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন মোহন সিংকে। যিনি প্রথমে ইতস্তত করলেও, পরে তাতে রাজি হন। আর এটিই ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনের প্রথম পদক্ষেপ।

পরবর্তীতে নেতাজির (Netaji) কাছে ফৌজের দায়ভার যাওয়ার পর ১৯৪৩-এর ২৩ অক্টোবর ব্রিটেন ও আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। আজাদ হিন্দ ফৌজকে এমনভাবে গঠন করা হচ্ছিল যে, তাঁরাও জাপানি সৈনের সঙ্গে ভারত অভিযানে আসবে। কিন্তু জাপানি সেনাপতি তাতে আপত্তি জানান। অনেক আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মাত্র ১ রেজিমেন্ট ভারতীয় সৈন্য জাপানি সৈন্যদলের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেবে। যদি দেখা যায় যে তাঁরা যুদ্ধক্ষেত্রে জাপানিদের সমকক্ষ তাহলে আরও ভারতীয় সৈন্য গ্রহণ করা হবে। তারপর ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ থেকে বাছাই করে ‘সুভাষ ব্রিগেড’ নামে নতুন একটি ব্রিগেড তৈরি করা হয়। সাল ১৯৪৪, জানুয়ারির প্রথম দিকে ‘সুভাষ ব্রিগেড’ রেঙ্গুনে পৌঁছায়। সুভাষ ব্রিগেডকে তিনটি ব্যাটেলিয়ানে ভাগ করে নেওয়া হয়। প্রথম দলটি কালাদান নদীর উভয় তীর দিয়ে এগিয়ে গিয়ে পলেতোয়া ও দলেৎমে অধিকার করে এবং বেশ কিছুদিন পর ৬৪ কিমি দূরে ভারত সীমানার মউডক নামক ব্রিটিশ ঘাঁটি দখল করে। কিন্তু অস্ত্র ও খাবার সরবরাহ এখানে দুঃসাধ্য দেখে জাপানিরা ফিরে যেতে চায়। তবে ভারতীয়রা রাজি হয়নি। যে কারণে একটিমাত্র কোম্পানিকে ক্যাপ্টেন সুরযমলের অধীনে রেখে বাকিরা ফিরে যায়। ভারতীয়দের দেশপ্রেম দেখে এক প্রকার অবাক হন জাপানি সেনানায়ক। নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু তাঁদের চেষ্টা ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি করে। যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনে এক বিরাট অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। বলতে গেলে, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে যেমন একজন কিংবদন্তি নেতা নেতাজি, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে আজাদ হিন্দ ফৌজ।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version