Wazwan: কাশ্মীরের গর্ব ওয়াজওয়ান, সাজানো থাকে ৩৬টি পদ! কীভাবে তৈরি হয় এই খাবার?

।। প্রথম কলকাতা ।।

Wazwan: পৃথিবীর স্বর্গ কাশ্মীর শুধুমাত্র সৌন্দর্যপ্রেমীদের জন্য নয়, খাদ্য রসিকদের জন্যও উত্তম জায়গা। কাশ্মীরের ট্র্যাডিশনাল খাবার ওয়াজওয়ানের আলাদাই মজা, যার হাতছানিকে উপেক্ষা করতে পারেন না ভোজন রসিক মানুষ। সংস্কৃতি, হস্তশিল্প, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিংবা খাবার সবকিছুর দিক থেকেই কাশ্মীর যেন একটু অন্যরকম। বিশেষ করে বাঙালি পর্যটকদের কাছে ওয়াজওয়ান ছাড়া কাশ্মীর ভ্রমণ এক্কেবারে অসম্পূর্ণ। হয়তো আপনি ভাবছেন, কি এমন খাবার যা সারা কাশ্মীর জুড়ে নিজের আধিপত্য বজায় রেখেছে? আসলে এই খাবারের পরতে পরতে রয়েছে ঐতিহ্য, ইতিহাস আর কাশ্মীরের মানুষের ভালোবাসা। প্রথমেই যদি মনে করেন ওয়াজওয়ান একটি খাবারের নাম তাহলে মস্ত বড় ভুল করবেন। আসলে এটি একটি ভোজ, যেখানে থাকে প্রায় ৩৬টি পদ। ওয়াজওয়ান কাশ্মীরের গর্ব। এটি এমন একটি বিশেষ রন্ধনশৈলী যাপৃথিবীর অন্য কোথাও দেখতে পাবেন না। কাশ্মীরে বিয়ে বাড়ি কিংবা যে কোন বড় শুভ বড় অনুষ্ঠানে প্রধান খাবার হিসেবে রাখা হয় ওয়াজওয়ানকে। কাশ্মীরি বিয়ে মানেই নানান রঙের মেলা, আর এসবের মাঝে সব থেকে আকর্ষণীয় হলো ওয়াজওয়ান ৩৬টি পদের সমাহার। এই খাবারের নিয়ম যুগ যুগ ধরে প্রচলিত। যারা এই খাবার বানান তাদেরকে বলা হয় ওয়াজা।

লম্বা করে কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তার উপর বসিয়ে দেওয়া হয় প্রচুর হাঁড়ি, এক একটি হাঁড়িতে হয় এক একটি মাংসের পদ। মাংসের পাশাপাশি দুই একটি সবজির পদও থাকে। কিছু কিছু পদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় পেটানো মাংস অর্থাৎ মাংস ভালোভাবে পিটিয়ে বলের মতো তৈরি করা হয়। প্রথমেই মাংস সিদ্ধ করে ভালোভাবে ছেঁকে নিতে হয়, সেই ছেঁকে নেওয়ার জল ওয়াজওয়ানের সকল খাবারে ব্যবহার করা হয়।

ওয়াজওয়ানের বেশিরভাগ পদ হয় ভেড়া কিংবা মুরগির মাংস দিয়ে। রান্নায় ব্যবহার করা হয় প্রচুর পরিমাণে এলাচ, লবঙ্গ, গরম মশলা, জাফরান, দারুনচিনি, সরষের তেল, দই, দেশি ঘি, দুধ সহ আরো অনেক কিছু। এর সঙ্গে যোগ করা হয় কাশ্মীরে বিশেষ পিয়াঁজ। বেশ কিছু পদের ক্ষেত্রে প্রথমেই মাংস ভালোভাবে পিষে নেওয়া হয়। চ্যাপ্টা পাথরের উপর মাংস রেখে কাঠের হাতুড়ি মারার পর মাংস ময়দার মতো তালে পরিণত হয়। এই মাংস ব্যবহার করা হয় গোস্তাবা, রিস্তা কিংবা লাভী কাবাবে। মাংসের বলের গোস্তাবা তৈরির ক্ষেত্রে প্রচুর মশলা আর দই ব্যবহার করা হয়। যার কারণে এর স্বাদ একটু টক । বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানগুলোতে সেই সকাল থেকে রাত একটা দুটো পর্যন্ত রান্নার পর রন্ধন শিল্পীরা কয়েক ঘন্টার বিশ্রাম নিয়ে তারপর আবার শুরু করে দেন ওয়াজওয়ানের রান্না। ওয়াজওয়ান পরিবেশন করা হয় পোলাও কিংবা স্থানীয় চাল দিয়ে তৈরি ভাত দিয়ে। ওয়াজওয়ানের আরেকটি জনপ্রিয় পদ হল রোগান জুস। এটি মোগলাই খাবার হলেও কাশ্মীরে বেশ জনপ্রিয়। এটিতে মূলত ব্যবহার করা হয় ভেড়ার ঘাড় আর কাঁধের মাংস। লাহাবি কাবাব হল আদা, রসুন, লবণ, গরম মসলা আর ভেড়ার মাংসের কিমা দিয়ে তৈরি এক ধরনের কাবাব, যাকে মোয়াচি কাবাবও বলা হয়। ওয়াজওয়ানে পাবেন মুজি চেটিন, এটি এক ধরনের চাটনি যেখানে ব্যবহার করা হয় মুলো আর দই।

পরিবেশনের সময় নিমন্ত্রিতদের চারজন করে ছোট দলে ভাগ করে পরিবেশন করা হয়। আবার বহু জায়গায় অতিথিরা একটা বড় থালায় খাবার নিয়ে একসাথে খেতে বসেন। এখানে মানুষ কাঁটা চামচ কিংবা ছুরি দিয়ে নয়, বরং খালি হাতে খেতে বেশি পছন্দ করেন। ওয়াজওয়ান আমিষ খাদ্যপ্রেমীদের প্রতি বেশ সদয়, কারণ এখানে নিরামিষ খাবার খুব কম। কাশ্মীরে সৌন্দর্যের পাশাপাশি ওয়াজওয়ান সারা বিশ্বের মানুষকে আকর্ষণ করে। আপনি কাশ্মীরে গিয়ে যদি ওয়াজওয়ানের স্বাদ নেন, তাহলে দেখবেন নিজের মধ্যে কেমন একটা বাদশাহি ভাব চলে এসেছে। অসাধারণ স্বাদের কারণে গোটা বিশ্ব জুড়ে ওয়াজওয়ানের ভক্ত সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version