হাইওয়ে ধরেই ওড়ে বিমান! কী দিয়ে তৈরি অদৃশ্য আকাশপথ? জেট স্ট্রিমেই লুকিয়ে বড় রহস্য, ফর্মুলা ভুললে ঘোর বিপদ

।। প্রথম কলকাতা ।।

আকাশেও হাইওয়ে আছে! জানেন আকাশের হাইওয়ে কে, কিভাবে আবিষ্কার করেছে? কেন গোটা আকাশ ফাঁকা রেখে নির্দিষ্ট পথে চলাফেরা করে বিমানগুলো? জেট স্ট্রিমেই লুকিয়ে আসল রহস্য, সবটাই আসলে হাওয়ার খেলা। ফর্মুলা মেনে চলতে হয় আকাশে। কিভাবে জেট স্ট্রিম ফ্লাইটকে প্রভাবিত করে? শুনলে ভাববেন, এভাবেও সম্ভব? বিমানগুলো আকাশে একে অপরের থেকে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে চলাচল করে। এমনকি একটা বিমানের সঙ্গে অন্য বিমানের মাঝে বেশ খানিকটা উচ্চতারও তফাৎ থাকে। এখন প্রশ্ন হল ওই একটা নির্দিষ্ট পথেই কেন যাতায়াত করে বিমানগুলো?

উদাহরণ দিয়ে বোঝালে সুবিধা হবে। যেমন ধরুন প্রতিদিন আমেরিকা থেকে ইউরোপে যায় প্রায় দেড় হাজার বিমান। আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর বিমানগুলোকে সবসময় একটা নির্দিষ্ট পথেই চলাচল করতে দেখা যায়। এটা বিমানের জন্য এক রকম অদৃশ্য হাইওয়ের মতো। যে অদৃশ্য পথ আজ থেকে ১০০ বছর আগে আবিষ্কার করা হয়। আবিষ্কারক ছিলেন একজন জাপানি বিজ্ঞানী ও আবহাওয়াবিদ ওয়াসিবোরো ওয়েসি।

আসলে, ১৯২০ র দশকে তিনি বেলুন ব্যবহার করে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান। সেইসময়, ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭ মাইল ওপরে ঘণ্টায় প্রায় ১৫০ মাইলের তীব্র বায়ুপ্রবাহ দেখতে পান। যে বায়ুপ্রবাহ বেলুনকে পূর্ব দিকে ঠেলতে থাকে। তার ২৫ বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ওই বৈজ্ঞানিকের এই আবিষ্কার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৪৫ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের দশ হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ জাপান থেকে কিছু বেলুন বোমা ছাড়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান ৯০০০ বেলুন বোমা নিক্ষেপ করে, যার মধ্যে মাত্র ৩০০ টি জাপানের সেট করা গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের পৌঁছে যায় তীব্র বায়ুপ্রবাহের দৌলতে।

জানা যায়, সেই সময় জাপান ওয়াসিবোরো ওয়েসির আবিষ্কার করা বায়ুপ্রবাহকেই ব্যবহার করে ছিল। যে জেট বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বেই প্রবাহিত হয়। কিন্তু কেন? আমাদের পৃথিবী ঘড়ির কাটার বিপরীতে ঘুরছে অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির কারণে জেড স্ট্রিম পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। আর ঠিক সেই সুবিধা কাজে লাগাতেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপগামী বিমানগুলোকে পাইলটরা তীব্র গতির জেট প্রবাহে মাঝে নিয়ে যান, যা বিমান কে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। অনেকটা স্রোতের অনুকূলে নৌকা চালানোর মতো। এর ফলে বিমানের গতি বেড়ে যায়, জ্বালানির সাশ্রয় হয়। আর পশ্চিম দিকে উড়তে হলে অবশ্যই সমান শক্তিশালী হেড উইন্ডের সাথে লড়তে হয়।

বিপরীত দিকে ফ্লাইট ওড়ার ক্ষেত্রে সময় নষ্ট হয়, জেট স্ট্রীম উৎপন্ন হেড উইন্ডে উড়ে আরও বেশি জ্বালানী খরচ হয়। পাইলটরা সাধারণত এগুলো এড়িয়ে চলতে ওড়ার উচ্চতা ব্যালেন্স করেন। জেট স্ট্রিমগুলোর অবস্থান, তীব্রতা এবং আকারের প্রতিদিনের ওঠানামা হয়। তাই ফ্লাইট ওড়ার আগে কখনও কখনও শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা পরিবর্তনেরও প্রয়োজন হয়।জানিয়ে রাখি, মেরু এবং নিরক্ষরেখার মধ্যে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে এগুলো তৈরি হয় এবং উভয় গোলার্ধেই এগুলো বিদ্যমান, তবে উত্তর গোলার্ধে বেশি শক্তিশালী। এই অদৃশ্য হাইওয়ে খুঁজে বের করা হয় রাডারের সাহায্যে। বাণিজ্যিক এয়ারলাইন পাইলটরা ১৯৫২ সাল থেকে জেট স্ট্রিম ব্যবহার করছেন।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version