।। প্রথম কলকাতা ।।
Cosmic view: চাঁদ থমকে যাবে।। বিরল মহাজাগতিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকবো আমরা। একই জায়গায় চাঁদ আটকে থাকবে। ২০০৬ এর পর চাঁদ তার দিগন্তের সবচেয়ে উত্তর বিন্দুতে উদয় হবে। এই বিরল মহাজাগতিক ঘটনা দেখবে বিশ্ব। চাঁদ না থাকলে কী হতো? চাঁদ পৃথিবীর কাছে থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে কেন?
মহাজগতে এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটতে চলেছে। এক দু’দিন নয়, টানা এক মাস ধরে একই জায়গায় আটকে থাকবে চাঁদের গতি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর এবং আগামী বছরের মার্চ মাস জুড়ে দেখা যাবে এই দৃশ্য। প্রতি ১৮.৬ বছরে ঘটে এমন বিস্ময়কর ঘটনা। এবার সূর্যের মত নিয়ম মেনে উত্তর দিকে উদয় হবে চাঁদ। আর অস্ত যাবে দক্ষিণে। শুধু তাই নয়, এই সময়কালে দিগন্তের সবচেয়ে উঁচু আর সবচেয়ে নীচু বিন্দু ছুঁয়ে যাবে চাঁদ।
মনে রাখবেন এই ঘটনাদিন কিন্তু সবদিন ঘটেনা। প্রতি ১৮.৬ বছর অন্তর এমন বিরল ঘটনায় সাক্ষী থাকে মানুষ। চাঁদকে এই অবস্থায় সর্বশেষ দেখা গেছিল ২০০৬ সালে। সেদিনের পর আবার চাঁদ একবার উত্তরদিকের সবচেয়ে উঁচু বিন্দুতে উদয় হবে। এবং চাঁদ অস্ত যাবে দক্ষিণের সবচেয়ে নীচু বিন্দুতে। এই সময়টা সবথেকে বেশি সময় ধরে আকাশে বিরাজ করবে চাঁদ। আপাতদৃষ্টিতে চাঁদের গতি মন্থর হয়ে যাবে। চাঁদ যেন তার জায়গা থেকে নড়ছেইনা।
আকাশ পরিস্কার থাকলে এর সবটাই চাক্ষুষ করতে পারবেন আপনিও। কিন্তু কেন এমনটা হয়? হঠাৎ চাঁদ থমকে যাবে কেন? আসলে এই বিরল ঘটনাটি ঘটে যখন পৃথিবী এবং চাঁদ উভয়েই নিজ নিজ কক্ষপথে কাত হয়ে ঘুরতে থাকে। পৃথিবী এবং চাঁদের কৌনিক অবস্থানের পরিবর্তনের জন্যই এই সময়কালটা এতটা কমে বাড়ে। পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে দেখলে মনে হয়, আকাশের বুকে চাঁদ যেন থমকে গেছে।
আসলে চাঁদ হচ্ছে মহাবিশ্বের অন্যতম একটা সুন্দর সৃষ্টি। এই চাঁদ আর পৃথিবীর সম্পর্ক কিন্তু আজকের নয়। মানব ইতিহাসের পুরোটা জুড়ে রয়েছে চাঁদ। বিশ্বের প্রায় সমস্ত উন্নত সভ্যতাই তাদের ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা তৈরি করেছে এই চাঁদকে সাক্ষী রেখেই। আচ্ছা কখনও ভেবে দেখেছেন কি, চাঁদ যদি না থাকত তাহলে পৃথিবীর অবস্থা কেমন হত?
তাহলে বলি, সবার আগে যেটা হত বদলে যেত তা হল পৃথিবীর রাত। মাথায় রাখবেন, সূর্যের আলো চাঁদের গায়ে প্রতিফলিত হয় বলেই আমরা জ্যোৎস্না দেখতে পাই। চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে সবকিছু। চাঁদ না থাকলে আমরা কেবল নিকষ কালো একটা আকাশ দেখতে পাবো। থাকবে না আকাশের সেই সৌন্দর্য।
আর শুধু রাতই নয়, প্রভাব পড়বে দিনের উপরেও। চাঁদ না থাকলে সমুদ্রে জোয়ার ভাঁটাও হবেনা। সমুদ্রে কোনও ঢেউ অবধি থাকবেনা। ভাবতে পারছেন? আমাদের উত্তাল উন্মত্ত সমুদ্র নাকি হয়ে যাবে ধীরস্থির একটা দিঘির মত। উহঃ, এটা কিন্তু সত্যিই কল্পনাও করা যায়না।
সৌন্দর্য, সমুদ্রের ঢেউয়ের কথা ছেড়েই দিন। চাঁদ যদি না থাকে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতিটাই তো ঠিক থাকবেনা। বদলে যাবে রাতদিনের সময়সীমা। ২৪ ঘন্টার বদলে আমাদের দিন হবে হয়ত ৬ ঘন্টা কিংবা ১২ ঘন্টা। বদলে যাবে ঋতুচক্র। পৃথিবীর কোথাও খুব ঠাণ্ডা হবে আবার কোথাও হবে খুব গরম। যা কি না মানুষের বেঁচে থাকার উপযোগী তো নয়। থমকে যাবে পৃথিবীর প্রাণীকুল ও জীবকুল। পৃথিবী হয়ে যাবে বন্ধু ছাড়া শুক্র গ্রহের মত। এককথায় আস্তে আস্তে ধ্বংসের দিকে এগোতে থাকবে পৃথিবী।
তবে দুঃখের বিষয় কি জানেন? চাঁদ কিন্তু পৃথিবীর কাছ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে। গবেষণা বলছে, চাঁদ প্রতি বছর ১.৫ ইঞ্চি অর্থাৎ ৩.৮ সেমি হারে দূরে সরে যাচ্ছে। বিজ্ঞানিদের মতে এর নেপথ্য রয়েছে পৃথিবীর মিলানকোভিচ চক্র। পৃথিবীর আবহাওয়ায় অস্বাভাবিক কোনও পরিবর্তনের জন্যও এই চক্রকে দায়ী করে গবেষকরা।
এখন এই মিলানকোভিচ চক্র কয়েক লক্ষ হাজার বছর অন্তর অন্তর পরিবর্তিত হতে থাকে। এই সময়ের ব্যবধানে বদল আসে পৃথিবীর কক্ষপথের আকারেও। এবং বদল আসে চাঁদের দূরত্বেও। জেনে অবাক হবেন যে, এই চক্রের পরিবর্তনের আগে চাঁদের দূরত্ব আরও কম ছিল। অন্তত ২৪৬ কোটি বছর আগে চাঁদের দূরত্ব ছিল আজকের দিনের চেয়ে ৬০ হাজার কিলোমিটার কম। অর্থাৎ চাঁদের দূরে সরে যাওয়ার ঘটনা কিন্তু আগেও ঘটেছে। তবে পূর্বের তুলনায় এখন কিন্তু একটু দ্রুতই দূরে সরে চাঁদ। আর সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ের।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম