Netaji-Khudiram: নেতাজির স্বদেশচেতনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ক্ষুদিরাম, পড়ুন কাহিনী

।। প্রথম কলকাতা ।।

Netaji-Khudiram: দেশবাসীর কাছে তিনি নায়ক। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান কখনোই ভোলার নয়। তিনি এমন কিছু কথা বলে গিয়েছেন, যা শুধু যুব সমাজকে নয় সকলকে অনুপ্রাণিত করে। ভারতবাসীর মনে আজও অমর হয়ে রয়েছেন নেতাজি (Netaji Subhash Chandra Bose)। তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক কাহিনী। যার বেশিরভাগই হয়তো অনেকের কাছে অজানা। সাল ১৯০৮, মুজফফরপুর জেলে ফাঁসি হয় ক্ষুদিরাম বসুর (Khudiram Bose)। বয়স ছিল ১৮ বছর ৮ মাস ৮ দিন। তিনি কনিষ্ঠতম বিপ্লবী, যিনি ফাঁসিতে প্রাণ দিয়েছিলেন। এই ঘটনা বাংলাতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। তখন তাঁর ফাঁসি নিয়ে অজস্র কবিগান, লোকগান রচিত হয়েছিল। এমনকি সেই সময় এরকম ধুতি পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, যেখানে লেখা থাকতো ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’। সাল ১৯১০, মার্চ মাসে এই ধুতি বিক্রি বন্ধ করল ব্রিটিশরা। সেই সময় তাঁর আত্ম বলিদান দিবসে বাংলার ঘরে ঘরে উনুন জ্বলত না। পালন হতো অরন্ধন দিবস। ঘরে ঘরে লাগানো থাকতো ক্ষুদিরাম বসুর ছবি। এদিকে ব্রিটিশরা চেষ্টা করল ক্ষুদিরাম বসুর ছবি যাতে সাধারণের কাছে না পৌঁছায়। আর সেই সময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কটকের (Cuttack) কাঠাজুড়ি নদীর তীরে রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ছিলেন।

সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বেণী মাধব দাস (Beni Madhab Das)। অসংখ্য দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী তৈরি হয়েছিল তাঁর হাতে। তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং স্বদেশচেতনা ছাপ ফেলেছিল সুভাষের মনে। অন্যদিক থেকে প্রধান শিক্ষকের চোখও তাঁকে চিনতে ভুল করেনি। তাঁর ভেতরের স্বদেশীচেতনার আগুনকে একদম ঠিক চিনেছিলেন তিনি। প্রধান শিক্ষক ছাত্রদের সমাজসেবার কাজে অংশগ্রহণ করতেও উৎসাহ দিতেন। আর ছাত্র অবস্থাতেই সুভাষের মনে স্বদেশচেতনার ভাব জাগ্রত হয়। ১৯১১-এর অগাস্ট, তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা ঠিক করলেন শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর তৃতীয় শহীদ দিবস পালন করবেন। কিন্তু সেই সময় তাঁর ছবি পাওয়া ছিল ‘খড়ের গাদায় সুচ খোঁজা’র মতো। কিন্তু নেতাজি তো নেতাজিই।

তাঁর কাছে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। সমস্ত অসম্ভব কাজকে সম্ভব করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। এক কথায় বলতে গেলে তাঁর উদ্দেশ্য। পুরনো খবরের কাগজ থেকে বার করেছিলেন ক্ষুদিরাম বসুর ছবি। আর তার পর তার সঙ্গে বোর্ড জুড়ে দেন, যাতে ছবিতে মালা দেওয়া যায়। তিনি সকল ছাত্রদেরকে উপবাস করে দিনটি পালন করার প্রস্তাব দেন। আর সকলেই তাঁর প্রস্তাবে সম্মত হন। ঠিক হল হোস্টেলে সেদিন উনুন জ্বলবে না। আর যেমন ভাবা তেমনি কাজ, হল তেমনটাই। হোস্টেলে সেদিন উনুন জ্বলে নি। সকলেই ছিলেন উপোস করে। প্রধান শিক্ষক নীরবে থেকে উৎসাহ দিতে লাগলেন সকলকে। আর মনে মনে গর্বিতবোধ করলেন। কিন্তু এদিকে সেই খবর পৌঁছাল ব্রিটিশ সরকারের কাছে। বিপদ ঘনিয়ে এলো বেণী মাধবের জন্য।

বদলি করে দেওয়া হলো বেণী মাধব দাসকে। কটক থেকে বিদায় নেওয়ার প্রস্তুতি নিলেন তিনি। সেদিন তাঁকে বিদায় জানাতে কটক স্টেশনে ভিড় জমেছিল ছাত্রদের। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের গলায় মালা পরিয়ে তাঁকে প্রণাম করেন নেতাজি। প্রিয় ছাত্র সুভাষকে একজন মানুষের মত মানুষ হয়ে ওঠার আশীর্বাদ করেছিলেন বেণী মাধব। তবে কৃষ্ণনগরে বেণী মাধবের বদলি হয়ে গেলেও সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ তাঁর থেমে থাকেনি। চিঠি বিনিময় চলত অনবরত। এমনকি দেশত্যাগের সময়ও বেণী মাধবের আশীর্বাদ চেয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র, যিনি পরবর্তীতে সকলের নেতাজি। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অন্যতম প্রধান চরিত্র তিনি। তিনি বুঝেছিলেন, ব্রিটিশদেরকে দেশ থেকে বার করতে গেলে যুবকদের একত্রিত হওয়ার প্রয়োজন আছে। আর এই মর্মে তিনি যুবকদেরকে পথ দেখিয়েছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল, ভারতীয় রাজনীতিতে যুব সমাজের চোখ যত ধারালো হবে, তত শাসক শক্তির শেষ দিন ঘনিয়ে আসবে। এক কথায়, আনফরগটেন হিরো তিনি।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version