।। প্রথম কলকাতা ।।
Indian Railway: ভারতের “লাইফলাইন” রেলপথ! অন্যান্য দেশ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেনি। কেন? ভারতের প্রফিট, বাংলাদেশের লস। দুর্দান্ত পরিষেবা, জল জঙ্গল না মেনে রেল ট্র্যাক পাতা, তাক লাগানো ইনফ্রাস্ট্রাকচার। ইন্ডিয়ান রেলওয়ের ব্যাপারটাই আলাদা। তাই এতো বেশি হাইপ, এতো বেশি ইন্টারেস্টিং। যাত্রী পরিবহনই শেষ কথা নয়, ট্রিক্স জানে ভারত। টাকা ঢালছে, লাভের ফসল ও তুলছে। আর বাংলাদেশ? ভারতের মতো জনবহুল দেশে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে রেলপথ। তাই রেলকে ‘দেশের লাইফলাইন’ বলা হয়।
আর ভারত সেই লাইফ লাইন সেই মেরুদণ্ডকে যথাযথ কাজে লাগিয়েছে। বাকি অনেক দেশ যা পারেনি ভারত তা করে দেখিয়েছে। ভারতের পণ্য এবং যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে রেলের গুরুত্ব কোনও অংশেই সড়ক পরিবহণের চেয়ে কম নয়। সুতরাং, ভারতীয় রেল পরিকাঠামোয় উন্নতি এবং আধুনিকীকরণ খাতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকে বাজেটে। এই পয়েন্টকে বিশেষজ্ঞরা ফুল মার্কস দিচ্ছেন। কারণ, পণ্য এবং যাত্রী পরিবহণে কাঙ্খিত উন্নতির জন্য বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির প্রয়োজন অনস্বীকার্য, ভারত সেদিক থেকে অনেক এগিয়ে। তাই রেলে ভর করেই বিশ্বের বুকে তাক লাগাচ্ছে ভারত। ভারতীয় রেলপথ এশিয়ার বৃহত্তম এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রেলপথ ব্যবস্থা। ভারতীয় রেল জাতীয় অর্থনীতির ধমনী। ভারতীয় অর্থনীতিতে রেলপথের গুরুত্ব বলে শেষ করার নয়।
যেমন কম খরচে পরিবহন রেলগাড়ি দ্রুত গতিতে চলে এবং এর পরিবহন খরচটাও কম। সেইজন্য দূরে যাওয়ার জন্য, ভারী জিনিসপত্র পাঠানোর জন্য রেলপথ শ্রেষ্ঠ পরিবহন ব্যবস্থা। যে সুযোগকে ভারতে সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেছে।
কৃষির উন্নতি
ভারত কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির উন্নতিতেও রেলপথের অবদান মারাত্মক। কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় সার, বীজ, কীটনাশক, ওষুধ ভিনরাজ্য থেকে অন্যান্য পরিবহন-মাধ্যমের চেয়ে কম ব্যয়ে রেলপথে আনা যায়। শুধু তাই নয়, উদ্বৃত্ত কৃষিজাত দ্রব্য রেলপথের মাধ্যমে ঘাটতি আছে এরকম এলাকায় পাঠানো হয়।
শিল্পের উন্নতি
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে তার পিছনেও রেলপথের যথেষ্ট অবদান আছে। শিল্পাঞ্চলগুলিতে শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি এবং উৎপাদিত শিল্পদ্রব্য রেলপথের মাধ্যমেই পাঠানো হয়।
খনিজ উত্তোলন
বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য উত্তোলনও রেল-পরিবহনের ওপর নির্ভরশীল। কয়লা, আকরিক লোহা প্রভৃতি ভারী খনিজ দ্রব্য রেলপথেই পরিবাহিত হয়।
তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন
ভারতে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের জন্য যে কয়লার প্রয়োজন, তা রেল-পরিবহনের মাধ্যমেই তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে পাঠানো হয়।
দেশ রক্ষা
দেশ রক্ষার ব্যাপারে রেলপথের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বেশি। দেশের অভ্যন্তরে কোনো স্থানে বিদ্রোহ দমনের জন্য বা বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য দ্রুত সেনা বা যুদ্ধের সরঞ্জাম পাঠানোর ব্যাপারে রেল-পরিবহনের ওপরই বেশি নির্ভর করা হয়। রেলপথ ভারতীয়দের জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল বরিন্দর থেকে থানে পর্যন্ত ২১ মাইল ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে ভারতে প্রথম যাত্রীবাহী রেল চলাচল শুরু হয়। আর আজ সেই ভারতীয় রেল গোটা বিশ্বের বুকে সুনাম কুড়োচ্ছে। ভারতের মতো বিশাল দেশে রেলপথ নির্মাণ এবং সম্প্রসারণ মোটেই সহজ কাজ ছিল না। নদী-নালা, পাহাড়, গভীর জঙ্গল, মুরুভূমিকে মোকাবিলা করে অসংখ্য ছোট বড় ব্রিজ আর টানেল নির্মাণ করে রেলের সম্প্রসারণ ও অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। এখন সেই ভারতেই ছুটছে পাতাল রেল। পাহাড় কেটে সুড়ঙ্গ তৈরি করে কিংবা সমুদ্রের তলায় টানেল বানিয়ে বুলেট ট্রেন ছোটানোর কাজ এগোচ্ছে তরতরিয়ে।
যাত্রীদের সুবিধায় বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে ভারতীয় রেল। কখনও একাধিক স্টেশনকে চিহ্নিত করে তার সংস্কার, উন্নয়ন এবং সৌন্দর্যানের উদ্যোগ, আবার কখনও সেভেন স্টার ফেল রাজকীয় ট্রেনে চড়ে পুরনো ভারতকে ঘুরে দেখা। কখনো প্রযুক্তিগতভাবে, কখনো পরিষেবায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় রেলের উন্নতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, চাইলে একটা দেশের পক্ষে এটাও সম্ভব। সাধেই কি ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ভারতের লাইফলাইন? অথচ, বাংলাদেশে দুঃখের বিষয় যে প্রতি বছর রেল খাতে লোকসানের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। পুরোটাই অলাভজনক।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের রেল খাতে যথেষ্ট অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। নতুন ট্র্যাক হয়েছে, নতুন ট্রেনও যোগ করা হয়েছে। কিন্তু, যাত্রী সেবার মান এবং সময়ানুবর্তিতার কোনো উন্নতি ঘটেনি। তাছাড়া
জরাজীর্ণ ও বারবার মেরামতের প্রয়োজন হওয়া মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন ও কোচের ওপর নির্ভর করে যে পরিবহন সেবা চলে, সেই পরিবহন সেবা আর যাই হোক, মানসম্মত নয়। সঙ্গে পুরোনো ও জীর্ণ রেললাইন, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, ধীরগতি আর চাহিদা অনুযায়ী টিকিট না পাওয়ার অভিযোগের মধ্যেই লোকসান গুনে চলেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বাংলাদেশ চাহিদা ও জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও সেই অনুসারে রেলের আয় বাড়ছে না। অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশে রেলের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার মনে রাখা উচিত, রেলপথ শুধু দেশের অভ্যন্তরে যোগাযোগের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়, এটি সমন্বিত আঞ্চলিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
মানুষের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ, সস্তা ও পরিবেশবান্ধব বাহন হিসেবে রেলওয়েকে সব সময় লাভজনক হতেই হবে, এমন হয়তো কোনো কথা নেই। কিন্তু জনগণকে দুর্দান্ত পরিসেবা দিয়েও যে রেলওয়ে লাভজনক হতে পারে, রেলওয়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, দেশের ছবি বদলাতে পারে, একটা দেশের মেরুদণ্ড হয়ে উঠতে পারে সেই দৃষ্টান্তই দেখা যায় ভারতে। বাংলাদেশের মতো অন্যান্য অনেক দেশেই তা সম্ভব, যদি রেলওয়ে খাতের অপচয় ও দুর্নীতি বন্ধ করা হয়, যদি রেলওয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে ধারাবাহিক ও পরিকল্পিত বিনিয়োগ করা হয়। আর, পরিকল্পনা মাফিক উন্নয়ন সম্ভব হয়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম