।। প্রথম কলকাতা ।।
ভারতে এতো বাঘ? কী ঘটে যাচ্ছে আপনার অজান্তেই? খোঁজ রাখেন? ভূটানেও বাঘের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে। ভারতে বাঘের সংখ্যা বাড়ার নেপথ্যে কাজ করছে কোন পয়েন্ট? ইকো সিস্টেম কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? কেন ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছে মানুষ? বিশ্ব বাঘ দিবসে ৭০ এর দশকের বড় সিক্রেট ফাঁস। বাকিরা যা পারেনি, ভারত তা করে দেখিয়েছে। ভারতে এমন কী আছে? কোন ফর্মুলার জোরে ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশ ভুটানে এভাবে বেড়েয়চলেছে বাঘের সংখ্যা? মনে আছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন বিশ্বে বাঘের সবচেয়ে বড় বিচরণক্ষেত্র ভারত।
সেই কথাই তো অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল। ভারতের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের হিসেব বলছে, বর্তমানে দেশে বাঘের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৮২টি। জানলে অবাক হবেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জঙ্গলে থাকা ৭৫ শতাংশ বাঘের বাসই এখন ভারতে। নতুন পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ বার্ষিক ৬ শতাংশ। আর ভুটানে বর্তমানে বাঘ আছে ১৩১টি। যা ২০১৫ সালের সর্বশেষ গণনার তুলনায় ২৭ শতাংশ বেড়েছে।য়বিশ্ব বাঘ দিবসে এই হিসেব সামনে এসেছে। আসলে, ৭০ এর দশকেই বড় একটা বদল আসে। সেই সময় ভারতে বাঘের সংখ্যা ২ হাজারের নীচে নেমে গেছিল। ব্যাপকভাবে চোরাচালান এবং আবাসস্থল হারানোর কারণে বাঘের সংখ্যা ২ হাজারেও কম ছিল। তাই ওই সময় বাঘ সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়। আদা জল খেয়ে নামে ভারত। সেখান থেকে আজ এই জায়গায়। কয়েকবছরে যেন বাঘ সংরক্ষণে বিশেষ গতি এসেছে। তথ্য কী বলছে, দেখুন।
- ২০০৬ সালে ভারতে বাঘ ছিল ১ হাজার ৪১১টি।
- ২০১০ সালে ছিল ১ হাজার ৭০৬টি।
- ২০১৪ সালে ২ হাজার ২২৬টি।
- ২০১৮ সালে ২ হাজার ৯৬৭টি।
- ২০২২ সালে এসে তা, ৩ হাজার ১৬৭ তে দাঁড়ায়।
আর ২০২৪? বড় পরিবর্তন। তবে, ভারত বলছে বাঘ সংরক্ষণে আমাদের প্রচেষ্টা ও বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধিকে শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করা যাবে না। মনে করতে হবে এটা আমাদের সংকল্প ও প্রতিশ্রুতির প্রমাণ যা ভারত করে দেখিয়েছে। যখন, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ইস্যুর কারণে বৈশ্বিকভাবে নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে কিংবা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তখন বাঘ সংরক্ষণে ভারতের এই গ্রাফ সত্যিই প্রশংসা কুড়োচ্ছে। ভারত এবং ভূটান, দুই দেশের জন্যেই এটা একটি উল্লেখযোগ্য অ্যাচিভমেন্ট এবং একটি খুব সুস্থ ইকোসিস্টেমের ইঙ্গিত বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আরও একটা প্লাস পয়েন্ট হলো, স্বাভাবিক ভাবে এই খবর আরও বেশি সংখ্যায় পর্যটক টেনে আনবে ভারতের বিভিন্ন ফরেস্টে, এমন আশাতেই বুক বাঁধছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
শুধুই কি তাই? বাঘের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ভারত বাঘ রপ্তানির কথাও ভাবছে। তবে, একটি শীর্ষ শিকারি হিসাবে, বাঘকে জটিল সিস্টেমগুলো সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয় যা প্রাকৃতিক বিশ্বের আন্ডারপিন। সেক্ষেত্রে বাঘ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা চললেও কোথাও কোথাও বাঘের আক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে রিস্ক বাড়ছে।যেসব অঞ্চলে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে গড়ে ওঠা মানব বসতির ওপর বাঘের আক্রমণের শঙ্কা রয়েছে।ভারতে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলজুড়েই যেহেতু বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে খাদ্য কিংবা বাসস্থানের জন্য প্রাণীগুলো সংরক্ষিত এলাকার বাইরে চলে আসার ঝুঁকি রয়েছে। এতে আশেপাশের গ্রামবাসীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
ভারতে সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে দেশটিতে বাঘের আক্রমণে প্রায় ১০০ রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ভুটানের ক্ষেত্রেও তৈরি হয়েছে একই সমস্যা। এবিষয়ে ভুটানের ন্যাশনাল টাইগার সার্ভে রিপোর্ট ও ডব্লিওডব্লিওএফ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে মানুষের সাথে প্রাণীটির দ্বন্দ্ব আরও বেড়েই চলবে। এতে করে স্থানীয় মানুষ ও বাঘ উভয়েরই জন্য তা হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।” মোদ্দা কথা, এই বিষয়টা বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, যা কাটিয়ে উঠতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভারত শুধু বাঘের প্রাণরক্ষাই করেনি, উপযুক্ত বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলেছে, যেখানে তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে চলেছে। আর, সাম্প্রতিক কালে ভারতে বাঘের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ার নেপথ্যে অবশ্যই দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যা নতুন করে বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম