Netaji Subhash Chandra Bose: গুমনামি বাবাই নেতাজি? অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান হয়নি আজও

।। প্রথম কলকাতা ।।

Netaji Subhash Chandra Bose: ভারত সরকারের মতানুযায়ী ১৯৪৫-এর ১৮ অগাস্ট মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এমনকি গুগলে তাঁর নাম সার্চ করে এন্টার মারলেও এই একই তারিখ সামনে আসে। কিন্তু সেদিনই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে, মানেননি অনেকেই। আজও দেশবাসী মনে করে, সেদিন মৃত্যু হয়নি নেতাজির। পরবর্তীতে ‘গুমনামি বাবা’ (Gumnami Baba) নেতাজি (Netaji) কিনা, ‘শৈল মারি সাধু’ নেতাজি কিনা এমন অনেক প্রশ্নই রয়েছে। তাঁর অন্তর্ধান বলতে গেলে এক রহস্য হয়ে রয়ে গিয়েছে।

সাল ১৮৯৭, কটক জন্ম হয় সুভাষচন্দ্র বসুর। দেশের মানুষ তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষা করে গিয়েছেন। কিন্তু আপামর জনসাধারণের সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছে। তাঁর মৃত্যুকে নিয়ে এখনও নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যায় না। ঐতিহাসিক লিওনার্ড এ গার্ডেনের লিখিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এটা বলা যায়, তাইপেইর তাইহোকু বিমানবন্দরে দুপুর ২:৩০ মিনিট নাগাদ একটি বিমান দুর্ঘটনায় শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল নেতাজির। ‘থার্ড ডিগ্রি বার্ন ইঞ্জুরি’ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এমনকি শাহনওয়াজ কমিশন এবং খোসলা কমিশনের রিপোর্টকে মান্যতা দিয়েছে মোদী নেতৃত্বাধীন সরকার।

জানা যায়, ওই বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর শেষ সঙ্গী ছিলেন আবিদ হোসেন। তাঁকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষচন্দ্র মারা যান না বেঁচে গিয়েছিলেন, অদ্ভুতভাবে তিনি কোনও উত্তর দেননি। সারাজীবন নীরবে থেকে গেয়েছেন। অথচ এই মানুষটির ওপর বিশ্বাস করেই তিনি ডুবো জাহাজে করে জার্মানি থেকে জাপান উপকূলে এসেছিলেন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে নেহরুর (Jawaharlal Nehru) বোন বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত রাশিয়ায় সুভাষচন্দ্রকে দেখতে পাওয়ার কথা ইঙ্গিতে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই ঘোষণা ধামাচাপা পড়ে যায়। কেন স্বাধীনতার এত বছর পরও সুভাষচন্দ্রের অন্তর্ধান রহস্যের কোনও কিনারা খুঁজে পাওয়া গেল না?

এর পেছনে রয়েছে এক অজানা ইতিহাস ১৯২০-র দশকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের (Deshbandhu Chittaranjan Das) সহযোগী ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। দেশবন্ধুর উদ্দেশ্যই ছিল যেকোনও রাজনৈতিক আন্দোলনের পথে দেশ স্বাধীন। তার জন্য স্বরাজ দল গঠন করেন তিনি। সেই সময়ে সেটি ছিল একটি শক্তিশালী দল। ১৯২৫-এ দেশবন্ধুর মৃত্যুর পর গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস শক্তিশালী দল হয়ে ওঠে। গান্ধী ছিলেন অহিংসার আদর্শে বিশ্বাসী। তিনি সেই পথেই দেশ স্বাধীন হবে বলে বিশ্বাস রাখতেন। ১৯৩০-এর পর থেকে কংগ্রেসের (Congress) ভিতর একটি সমাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে। যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সুভাষ ও জহরলাল নেহরু। ১৯৩৮-এ সুভাষচন্দ্র কংগ্রেসের সভাপতি হলে, তাঁর সঙ্গে গান্ধীর মতবিরোধ তীব্র হয়। শোনা যায়, তিনি অহিংসার পথ থেকে সহিংসার পথে চালনা করেন দলকে। অভিযোগ ছিল, সুভাষচন্দ্র নাকি কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালীন গোপনে দেশের ভিতরে জার্মানির দূতাবাসের এক কর্মীর সঙ্গে দেখা করেন। ধীরে ধীরে গান্ধী, প্যাটেল, রাজেন্দ্রপ্রসাদ তাঁর চরম বিরোধী হয়ে ওঠেন। ১৯৩৯-এ গান্ধীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে পট্টভি সিতারামাইকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছিলেন পদত্যাগ করতে। এরপর ১৯৪০-এ ফরোয়ার্ড ব্লক গঠন করেন এবং ছদ্মনামে দেশ ছাড়েন ১৯৪১-এ। সুভাষের মৃত্যুর পর নেহরুর নির্দেশে তাঁর পরিবারের উপর দীর্ঘদিন ধরে নজর রেখেছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু কেন? তার উত্তর আজও মেলেনি।

বাঙালির নেতা একজনই, আর সে হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস। বিমান দুর্ঘটনায় কি সত্যিই মৃত্যু হয়েছিল নেতাজির? নাকি এই খবর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। তাঁর অন্তর্ধান রহস্যকে নিয়ে লেখালেখি হয়েছি অনেক। শ্যামল বসুর ‘সুভাষ ঘরে ফেরে নাই’, বরুণ সেনগুপ্তর ‘নেতাজি অন্তর্ধান রহস্য’, অনুজ ধর ও চন্দ্রচূড় ঘোষের ‘ইন্ডিয়াস বিগেস্ট কভার আপ’ সহ একাধিক বই রয়েছে। সাল ১৯৮৫, ২৫ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের জনপ্রিয় হিন্দি দৈনিক ‘ নয়ে লোগ’-এ প্রকাশিত হয় একটি সংবাদ। যার শিরোনামে লেখা, ‘ফইজাবাদে অজ্ঞাতবাসে থাকা সুভাষচন্দ্র বোস আর নেই!’ মুহূর্তেই গোটা ভারতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল এটি। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে খবরটি। অযোধ্যার ওই ছোট্ট শহর হঠাৎ করেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল। এখানেই নাকি লোকচক্ষুর আড়ালে নিজের শেষ জীবন কাটিয়েছিলেন সুভাষ। সাল ১৯৮৫, ১৬ সেপ্টেম্বর, ভারতের জাতীয় পতাকায় মুড়ে ফইজাবাদের একটি ছোট্ট বাড়ি থেকে বের করে আনা হয় এক সাধুর মরদেহ। মাত্র ১৩ জন শবযাত্রী নিয়ে সূরয নদীর তীরে নিয়ে আসা হয় শবযাত্রা। চিতা ততক্ষণে তৈরি হয়ে গিয়েছে। শুরু হয় ওই সাধুবাবার শেষকৃত্য, ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই ওই সাধুর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। যাঁকে স্থানীয়রা ডাকতেন ‘গুননামি বাবা’ বলে। কিন্তু ‘গুমনামি বাবা’র সঙ্গে সুভাষের কি সম্পর্ক? ৬০-এর দশকের গোড়ার দিকের কথা। হঠাৎই অযোধ্যার ওই বস্তি এলাকায় আবির্ভাব হল এক সাধুর। যদিও সেই সাধুবাবা থাকতেন সর্বদা পর্দার আড়ালে। কেউ তাঁর দর্শন পেতেন না। একান্ত প্রয়োজন হলে, দরজার বাইরে থেকে অথবা পর্দার পেছন থেকে কথা হত। বাইরে বের হতে হলেও, থাকতেন নিজেকে ঢেকে। কেউ তাঁকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলতেন, তিনি বহুদিন আগে মৃত। তাঁর কোনও নাম নেই। উত্তর প্রদেশের একাধিক জায়গায় ষাটের দশকে এই সাধুবাবাকে দেখা গিয়েছিল বলে শোনা যায়। যেহেতু বেশিরভাগ মানুষই তাঁর দেখা পেতেন না, তাই সকলের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন ‘গুমনামি বাবা’। তাঁরা আচরণ ছিল যেমন অদ্ভুত, তেমনই একজন সাধুবাবা হিসেবে তাঁর সংগ্রহও ছিল বড়ই অদ্ভুত। প্রায় ২ হাজারের উপরে আর্টিকেল এবং ২৫ টি স্টিলের ট্রাঙ্ক ছিল তাঁর। যা সাধারণত সাধুবাবাদের কাছে দেখা যায় না। তিনি যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সেই পরিবারের সদস্য ছিলেন বিজেপি সাংসদ শক্তি সিংহ। উল্লেখ্য, ওই সাধুবাবার মৃত্যুর পরে নেতাজির ভাইজি দাবি করেছিলেন, তিনিই ছিলেন আদতে সুভাষচন্দ্র। ব্যাস তৈরি হয় বিতর্ক। সাধু বাবার কাছে যা ছিল তা খতিয়ে দেখা হয়। আর যা সামনে আসে তাতে চোখ কপালে ওঠে জেলা ট্রেজারি অফিসারের। ট্রাঙ্ক থেকে উদ্ধার হয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবার ও নেতাজির ব্যক্তিগত কিছু ছবি। ‘হাফ বেন্ট ডাবলিন’ ধূমপানের পাইপ থেকে শুরু করে পাওয়া গিয়েছে বিদেশি সিগারেট। চশমা থেকে রোলেক্স ঘড়ি, বাইনোকুলার এমনকি একটি টাইপরাইটার ও সুভাষচন্দ্রের জীবনীমূলক বেশ কিছু বই এবং বেশ কিছু সংবাদপত্রের কাটিং ছিল ট্রাঙ্কে। অনেকে বলেন ওই সাধুবাবার হাতের লেখার সঙ্গে নাকি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর হাতের লেখার দারুন মিল ছিল।

রহস্য দিন দিন আরও ঘনীভূত হয়। গুমনামি বাবার কাহিনী আরও নেতাজির সঙ্গে জড়িয়ে যায়, যখন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন তাঁর সঙ্গে নেতাজির চেহারার ও মুখের অদ্ভুত মিল রয়েছে। সেইসঙ্গে তাঁর অভ্যাস, তাঁর কথা বলার ধরণ এবং খাদ্যাভাস সবকিছুই সুভাষের মত। গুমনামি বাবার পরিচয় জানতে তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক বলে দাবি করেন নেতাজির ভাইজি ও বিজেপি নেতা শক্তি সিংহ। তদন্তের পর সেই তদন্ত কমিশন রিপোর্ট পেশ করে, অধিকাংশ সাক্ষী জানিয়েছেন গুমনামি বাবাই ছেলের নেতাজি। যদিও কিছুজনের বক্তব্য তিনি নেতাজি নন। এমনকি এই নিয়ে বহু সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ ও রয়েছে। যদি ধরে নেওয়া হয় উনিই নেতাজি, তাহলে তিনি মারা গিয়েছেন ৮৮ বছর বয়সে। তবে বিচারপতি সহাই বলেন, অযোধ্যার জেলাশাসকের কাছ থেকে যে সকল কাগজপত্র পাওয়া গিয়েছে, তা খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে গুমনামি বাবা নেতাজি নন। এই নিয়ে অনেক প্রশ্ন অনেক কিছু রয়ে গিয়েছে। দেশবাসী বিশ্বাস করেন বিমান দুর্ঘটনায় সেদিন মৃত্যু হয়নি নেতাজির। প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে তিনি কেন লুকিয়ে থাকলেন? তিনি কোথায় ছিলেন? গুমনামি বাবা নেতাজি হলে, কেন দেশবাসীর সামনে তিনি আসেননি? একাধিক প্রশ্ন রয়েছে তাঁর মৃত্যু নিয়ে। অন্তর্ধার না মৃত্যু! জানতে, ভারত সরকার এখনও পর্যন্ত অনেকগুলি কমিশন গঠন করেছে। তাঁর মৃত্যু নিয়ে গুগলের সোজাসাপটা ব্যাখ্যা মেনে নিতে নারাজ অনেকেই। সত্যি জানতে চান দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ, যা চাপা পড়ে আছে একাধিক নথির নিচে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version