FIFA World Cup Qatar 2022: কাতার বিশ্বকাপের মাঠ কাঁপাচ্ছে আল রিহলা, বলে রয়েছে চমকে দেওয়া টেকনিক

।। প্রথম কলকাতা ।।

FIFA World Cup Qatar 2022: কাতার বিশ্বকাপে নেইমার, লিওনেল মেসি কিংবা কিলিয়ান এমবাপ্পের পায়ের ছন্দে মাঠ কাঁপাচ্ছে আল রিহলা। মাঠের সবুজ ঘাস কিংবা বাতাস, সবকিছুকেই ভেদ করে দুরন্ত গতিতে ছুটে যাচ্ছে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত। গোলরক্ষকদের রীতিমত স্নায়ু চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে আল রিহলা। গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা মেতেছে তার ছন্দে। কাতার বিশ্বকাপে ব্যবহার করা হচ্ছে আল রিহলা নামক এই বল। যেটি তৈরি করেছে অ্যাডিডাস। সেই ১৯৭০ থেকে এই সংস্থা বিশ্বকাপের আসরে বল তৈরি করছে। কখনো বা মাঠে দিয়েছে বিশেষ চমক আবার কখনো বা এদের বল হয়েছে কড়া সমালোচনা শিকার। তবে বিশ্বকাপের টানা ৯২ বছরের ইতিহাসে ২০২২ এরা বল এক্কেবারে অন্যরকম। সমালোচকরা আল রিহলা নিয়ে সমালোচনা করার কোন ফাঁকফোকর খুঁজে পাননি। বিশ্বকাপের মাঠে ফুটবলের ইতিহাস বেশ ইন্টারেস্টিং। এখানেই লুকিয়ে রয়েছে ৯২ বছরের বিশ্বকাপ বলের সফর। এই বল যাদের পায়ের বশে থাকবে তাদের কাছেই যাবে বিশ্বকাপের ট্রফি।

১৯৭০ সালে ফিফা বিশ্বকাপ অফিশিয়ালি ম্যাচ বল ব্যবহার করার কথা জানায়। আর তখনই চুক্তি হয় adidas এর সঙ্গে। সেখান থেকে আজ পর্যন্ত এই সংস্থাই বিশ্বকাপের মাঠে বল সরবরাহ করছে । ১৯৭০ এর আগে স্বাগতিক দেশ গুলি বল সরবরাহ করত। এর মাঝে ১৯৫০ সাল একটু বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময় ব্রাজিলের অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচে দুপলো টি নামক বল ব্যবহার করা হয়েছিল, আর এটিই ছিল বিশ্বকাপের মাঠে সবার প্রথম পুরোপুরি চামড়া দিয়ে তৈরি বল। ১৯৭০ এ মেক্সিকোর আসরে সবার প্রথমে অ্যাডিডাস পরিচয় করায় টেলস্টার বলের সঙ্গে। এটি ছিল আপনার পরিচিত প্রথম সাদা এবং কালো রঙের মিশ্রণের ডিজাইনের ফুটবল, যা ইতিহাসে পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নিয়েছে। ১৯৭৮ সালের আর্জেন্টিনার ম্যাচে ট্যাঙ্গো ছিল শেষবারের মতো চামড়ার বলের বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের বলে প্রথম নীল রং আসে ফ্রান্সে ১৯৯৮ সালের ম্যাচে। বলটি নাম ছিল ট্রাইকালার। ২০১০ সালে বিশ্বকাপের বল নিয়ে কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে অ্যাডিডাস। সেই সময় তারা বলের আকৃতিতে বড়সড় পরিবর্তন এনে প্যানেল ১৪ থেকে ৮ এ নামিয়ে আনে। সমালোচনার জন্য বলটির নাম দেওয়া হয় জাবুলানি। কোন কোন সমালোচক বলটি কে সস্তা বলের সঙ্গে তুলনা করেন , আবার কেউ ভয়ঙ্করের তকমা দেন। এর পরের বিশ্বকাপে অর্থাৎ ২০১৪ সালে অ্যাডিডাস ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপের আদলে মাঠে নামায় ব্রাজুকা। প্যানেল কমিয়ে ৮ থেকে ৬ টিতে নামানো হয়।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে মন জয় করে নিয়েছে ২০২২ এর আল রিহলা বল। অ্যাডিডাসের ডিজাইন বিভাগের প্রধান জানান, আল রিহলা বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাতাসে সবচেয়ে দ্রুতগতির ক্ষমতা সম্পন্ন বল। এটি তৈরি হয়েছে বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব উপকরণ দিয়ে। এটির গায়ে বিশ্বকাপ এবং অ্যাডিডাসের লোগো ছাড়াও নীল হলুদ কমলা প্রভৃতি রংয়ের মিশ্রণ ফুটে উঠেছে। আল রিহলা একটি আরবিয়ান শব্দ। যার ইংরেজি তর্জমা করলে হয় দ্যা জার্নি। বাংলা অর্থ যাত্রা বা সফর। বলটির গঠন, আকৃতি এবং রং নির্ধারণ করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। বলটিতে বারটি বড় এবং আটটি ছোট প্যানেল ব্যবহার করা হয়েছে। এটি পরীক্ষা করেছেন প্রায় ৩৫০ জন পেশাদার এবং অপেশাদার ফুটবলার। বিশ্বকাপের মাঠে নামানোর আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর বায়ার্ন মিউনিখের অনুশীলনেও এটি ব্যবহার করা হয়। ২০১০ এর জাবুলানির পর বিশ্বকাপের বল নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোন বড় সমালোচনা হয়নি। তাই সবাই আশা করছিলেন আল রিহলা সবাইকে খুশি করবে। এটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে চামড়া এবং পলিয়েস্টার ফেব্রিক। অ্যাডিডাস বিশ্বকাপের বল বিক্রি থেকে যে আয় করবে তার এক শতাংশ খরচ করা হবে সমাজ কল্যাণমূলক কাজে। বলটি ডিজাইনে রয়েছে কাতারের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের ছোঁয়া।

আধুনিক প্রযুক্তিতে মুড়ে ফেলা হয়েছে আল রিহাকে। বলটির মধ্যে রয়েছে ইউনিট মোশন সেন্সর। বলের মধ্যে যদি কোন রকম আয়তনের বদল আসে সেই পরিমাপ করা যাবে। পাশাপাশি এই সেন্সর দিয়ে খুব সহজেই তথ্য সংগ্রহ করা যায়। একজন খেলোয়াড় ঠিক কোন পজিশনে বলে কিক করছেন, কোন দিকে বল যাচ্ছে সব তথ্য খুব সহজেই রেকর্ড করা সম্ভব। স্টেডিয়ামের ছাদে বসানো হয়েছে ১২টি ক্যামেরা, যা শুধুমাত্র এই বলের অবস্থান ট্র্যাক করবে। শুধু তাই নয় ওই ক্যামেরা গুলি প্রতি সেকেন্ডে ২২ জন ফুটবলারকে অন্তত ৫০ বার ফ্রেমবন্দি করবে। বলের মধ্যে থাকা ইউনিট মোশন সেন্সর আর ভিডিও অপারেশনের রুমের সঙ্গে থাকা ওয়াইফাই একসাথে কানেক্টেড। বলটিতে এমন রং ব্যবহার করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ জল নিরোধক। ভারতীয় মুদ্রায় আল রিহলার দাম পড়বে প্রায় সাড়ে বারো হাজার টাকারও বেশি।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version