India’s Floating Church: ২১২ বছরের পুরনো ভাসমান গির্জা, দেখতে হলে বড়দিনের ছুটিতে পাড়ি দিন দক্ষিণ ভারত

।। প্রথম কলকাতা।।

India’s Floating Church: বছর শেষের ছুটিটা অনেকেই কিছুটা আলাদা রকম ভাবে কাটাতে চান। বেশ একটু অ্যাডভেঞ্চার হবে একইসঙ্গে তৈরি হবে স্মৃতি। ভ্রমণ প্রেমীদের মধ্যে এই চিন্তা ভাবনাও থেকে থাকে। তাই এমন অনেকেই রয়েছেন যারা নিজেদের অফিস থেকে ছুটি বাঁচিয়ে রাখেন শুধু বছর শেষে কয়েকটা দিন নিজের মতো করে ঘুরে বেরিয়ে কাটাবেন বলে। সেই প্ল্যান করতে গিয়ে সবার প্রথমে প্রশ্ন ওঠে কোথায় যাওয়া যেতে পারে? এমন অনেক জায়গায় রয়েছে যেখানে প্রত্যেক বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ বেড়াতে যাচ্ছেন । কিন্তু এমনও কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে আশ্চর্য করে দেওয়ার মত কিছু জিনিসের অস্তিত্ব রয়েছে।

সেই সকল জায়গাগুলির মধ্যে একটি হল ভারতের একমাত্র ভাসমান গির্জা (Floating Church) । বর্তমানে সেটি নিমজ্জিত গির্জা হিসেবেও পরিচিত । সারা বছর এই গির্জাটি অর্ধেক জলের তলায় থাকে। আর তাঁর থেকেও বড় বিষয় হল এই গির্জাটির বয়স বর্তমানে দাঁড়িয়ে প্রায় ২১২ বছর। এমন ভাসমান স্থাপত্য দেখতে কে না চাইবেন ! কিন্তু এই গির্জা দেখতে হলে আপনাকে ছুটে যেতে হবে দক্ষিণ ভারতে।কারণ দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে হেমাবতি নদীর ধারে রয়েছে একটি ছোট্ট গ্রাম শেট্টিহাল্লি (Settihalli)। ওই গ্রামেই অবস্থিত রোজারি চার্চ ( Rosary Church)

এখন এর নাম হয়ে গিয়েছে ভাসমান গির্জা

তবে কর্নাটকের হাসান জেলায় অবস্থিত এই গ্রামের ভাসমান গির্জাটি তৈরি হওয়ার সময় থেকেই কিন্তু এমন জলের তলায় ছিল না । এটিও আর পাঁচটা সাধারন গির্জার মতোই তৈরি করা হয়েছিল স্থলভাগে। তবে সময়ের সাথে সাথে গির্জা নিজের স্থান না বদলালেও সেই স্থান নিজেকে স্থলভাগ থেকে জলভাগে পরিণত করেছে। ব্যাপারটা সোজা করে বললে , যে জায়গায় অবস্থিত রোজারি চার্চ সেটি দীর্ঘ বেশ কিছু বছর ধরে নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। তাই এখন সারা বছরই এই চার্চের আশেপাশে থাকে হাঁটু সমান জল। আর বর্ষাকালে হেমাবতি নদী ফুলেফেঁপে উঠলে কেবলমাত্র চার্জের এক-তৃতীয়াংশ লোক চক্ষুর সামনে থাকে।

সালটা তখন ১৮১০। ফ্রান্সের একজন ধর্মপ্রচারক জিন অ্যান্টাইন ডুবোইস দক্ষিণ ভারতে এই গির্জা নির্মাণ করেছিলেন ।এটি সম্পূর্ণ নির্মাণ করা হয়েছিল ইউরোপে প্রচলিত গথিক স্থাপত্যের অনুকরণে । মূলত গির্জা প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্য ছিল ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করা এবং স্থানীয় যারা রয়েছে তাদের ধর্ম পরিবর্তন করানো। কিন্তু এক্ষেত্রে খানিকটা উল্টোদিকে বয়ে চলল নদীর স্রোত । কারণ ডুবোইস নিজেই ভারতীয় সংস্কৃতি এবং হিন্দু ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করলেন। নিরামিষ আহার, হিন্দু জীবনধারা , হিন্দুদের মত পোশাক পরিধান এই সব কিছুতে নিজেকে নতুন ভাবে খুঁজে পেলেন তিনি।

তাই কিছু সময় পরে রোজারি চার্চ শুধুমাত্র খ্রিস্টানদের জন্য নয় সেখানে বসবাসকারী সকল ধর্ম বর্ণের মানুষের আশ্রয়ের জায়গা হয়ে উঠল। তবে ডুবোইস ১৮৩৩ সালে ফিরে যান ফ্রান্সে। তিনি তাঁর মৃত্যুর আগে ভারতের এই সংস্কৃতি এবং তার ঐতিহ্যকে নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন যার নাম ‘ইনডোলজি’। প্রথম যখন গির্জাটি ডুবোইস তৈরি করেন তখন সেটি একেবারেই সাধারণ একতলার একটি গির্জা ছিল । কিন্তু ১৮৬০ সালে এই গির্জাটিকে আবার নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়। দুটি ভবন বিশিষ্ট গিজা নির্মাণ করা হয়। এর জন্য বিদেশ থেকে আনা হয় কাঁচের দরজা এবং সাজানোর জন্য আনা হয় মূল্যবান সব আসবাবপত্র।

এইরকম ভাবেই পরবর্তী ১০০ বছর ছিল গির্জাটি। কিন্তু তারপর একসময় কর্নাটকের হেমাবতী নদীতে বাঁধ এবং জলাধার নির্মাণ করা হয় । যার ফলস্বরূপ নদীর জলতল ক্রমশ বাড়তে থাকে । আর নদীবক্ষেই বিলীন হয়ে যায় হেমাবতীর তীরবর্তী প্রায় ২৮ টি গ্রাম । যার মধ্যে একটি ছিল শেট্টিহাল্লি। সেই সময় থেকেই রোজারি চার্চ নদীর মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাজত্ব হারানো বাদশার মত। তাঁর ভেতরের সাজসজ্জা অলংকরণ সবকিছু নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দেওয়াল গুলিও আর সেই রকম মজবুত নেই। তবুও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রবল চেষ্টা চলছে। চার্চের মধ্যেই একাকী দাঁড়িয়ে রয়েছেন যিশু। নদীবক্ষের পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাওয়ার আগে বেঁচে ওঠার শেষ চেষ্টাটুকু জারি রয়েছে ।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version