Capital punishment: ফাঁসির দড়িতে মোম কেন লাগানো হয়? মৃত্যুদণ্ডের নেপথ্যে গায়ে কাঁটা দেওয়া তথ্য

।। প্রথম কলকাতা ।।

Capital Punishment: কিশোর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির মঞ্চে প্রশ্ন ছিল – ফাঁসির দড়িতে মোম কেন লাগানো হয়? তবে জীবনের এই শেষ প্রশ্নের উত্তর তিনি পাননি। যার উত্তর আজও বহু মানুষ হাতড়ে বেড়ান। শুধু ফাঁসি নয় পৃথিবীতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে রয়েছে ভয়ঙ্কর সব নিয়ম।

সেদিন ফাঁসির মঞ্চে ক্ষুদিরামের প্রশ্নে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন জল্লাদও। এই প্রশ্নটিই ছিল বিপ্লবীর জীবনের শেষ কথা। ১৯০৮ সাল, ১১ই আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ছটার সময় পনেরো ফুট উঁচু ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয় ক্ষুদিরামকে। মৃত্যুর অন্তিম লগ্নে এসে ক্ষুদিরামকে এতটা শান্ত অবস্থায় দেখে জল্লাদ পর্যন্ত অবাক হয়েছিলেন। অবশেষে দুলে ওঠে ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের হাতের রুমাল। সাথে সাথেই অস্ত যায় ভারত মাতার বীর সন্তানের জীবনের। সমস্ত ভারতবাসী ১১ই আগস্ট এই বিপ্লবীকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে ভোলেন না। নিজের কানেই ফাঁসির আদেশ শুনেছিলেন কিন্তু তাঁর ব্যবহার কিংবা কথাবার্তা শুনে বিন্দুমাত্র মনে হয়নি মৃত্যুর ভয় কোনো প্রভাব ফেলেছে। তাঁর পক্ষের আইনজীবী জিজ্ঞাসা করেছিলেন, রংপুর থেকে কয়েকজন উকিল তাঁকে বাঁচাতে এসেছে। কিন্তু ক্ষুদিরাম ততক্ষণে নিজের কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। ক্ষুদিরাম আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন “কেন স্বীকার করব না?”। যতবার ১১ই আগস্ট আসবে ততবার বাঙালির মন কেঁদে উঠবে বীর ক্ষুদিরামের জন্য। সেই সাথে কানে বাজবে সেই প্রশ্ন, ফাঁসি দড়িতে মোম কেন লাগানো হয়?

কোন কোন দেশে ফাঁসি প্রচলিত রয়েছে?

বিশ্বের বহু দেশে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ফাঁসির প্রচলন রয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে ফাঁসি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত একটি প্রক্রিয়া। ভারত ছাড়াও ইরান, ইরাক, কুয়েত, লেবানন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, সিঙ্গাপুর, জাপান, সুদান, মিশর, মালেশিয়া, বটসোয়ানা, জিম্বাবোয়ে প্রভৃতি দেশে ফাঁসির নিয়ম চালু রয়েছে। এছাড়াও আমেরিকার ওয়াশিংটনে ফাঁসির পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড হিসেবে বিষ ইঞ্জেকশনের প্রচলন রয়েছে। জানা যায় সর্বপ্রথম ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে প্রাচীন পারস্যে। গত ২ হাজার বছরে বিশ্বজুড়ে ঠিক কতজনকে যে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, তার কোন সঠিক হিসেব নেই। তবে মনে করা হয় এই শাস্তি পেয়েছেন অন্তত ৫ লক্ষ মানুষ। ইতিমধ্যেই বিশ্বের প্রায় ১০৬ টি দেশ মৃত্যুদণ্ডকে রহিত করেছে, কিন্তু ৫৬ দেশে এখনো বহাল রয়েছে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি। আবার এই ৫৬ টি দেশের মধ্যে ২৮ টি দেশে কাগজ কলমে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি থাকলেও বাস্তবে খুব একটা প্রয়োগ ঘটে না।

ফাঁসির বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি

জানলে আশ্চর্য হয়ে যাবেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় চার রকমের ফাঁসির পদ্ধতি চালু রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো লং ড্রপ পদ্ধতি যা বিজ্ঞানসম্মতভাবে ১৮৭৪ সালে ব্রিটেনে সর্বপ্রথম চালু হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে সেই সেই নিয়ম ছড়িয়ে পড়ে ব্রিটিশ উপনিবেশ গুলিতে। এই পদ্ধতি এখনো অনুসরণ করে চলেছে ভারত।। এক্ষেত্রে আসামির দেহের ওজন আর দৈর্ঘ্য অনুযায়ী তৈরি করা হয় ফাঁসির প্রকোষ্ঠ। আসামীর গলায় ফাঁস লাগানোর পর দেহ যখন দড়ি থেকে ঝুলে পড়বে তা পাঠাতনের ঠিক কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে তা আগে থেকে ঠিক করে রাখা হয় । গলায় ফাঁস লাগানোর পর আসামীর পায়ের নিচ থেকে পাঠাতন সরে গেলেই দেহটি ওই প্রকোষ্ঠের মধ্যে ঝুলে পড়ে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হ্যাঁচকা টানে ভেঙে যায় আসামীর কণ্ঠার হাড়। মুহূর্তে মৃত্যুর কোলে ঘুমিয়ে পড়ে অপরাধী। অপরাধীকে মাথা থেকে গলা পর্যন্ত প্রথমে একটি কালো কাপড় কান টুপির মতো পরানো হয়। সম্পূর্ণভাবে তার চোখ এবং মুখ ঢেকে যায়। দুহাত পিছন দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। তারপর ঝুলে থাকা দড়ি পরিয়ে দেওয়া হয় আসামির গলায়। ম্যাজিস্ট্রেটের হাত থেকে রুমাল পড়ার সাথে সাথেই কার্যকর হয় ফাঁসি।

কেন মোম লাগানো হয়?

ফাঁসির ফলে মৃত্যুতে যাতে আসামির কষ্ট লাঘব করা যায় অর্থাৎ কম কষ্টে যাতে সে মারা যায় এই ব্যবস্থা করার জন্য জেল কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকে। যার ফলশ্রুতি হিসেবে ফাঁসির দড়িতে ব্যবহার করা হয় পিচ্ছিল জাতীয় পদার্থ। তাই দড়িতে লাগানো হয় তেল, ঘি, মোম প্রভৃতি। এর ফলে ফাঁসির দড়ি খুব সহজেই গলায় বসে যায় এবং খুব বেশি কষ্ট ছাড়াই আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়।

সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ফাঁসি কেন?

ফাঁসিকে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে রাখার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। কারণ এই প্রক্রিয়ায় আসামীকে অত্যন্ত কম সময় মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় এবং খুব দ্রুত তার মৃত্যু ঘটে। এই প্রক্রিয়া কার্যকর করতে খুব একটা বেশি দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে না। তবে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকে রাখা উচিত কি উচিত নয়, এই নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিতর্ক রয়েছে। যারা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন তারা মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছেন। তবে কোন ব্যক্তি যদি মারাত্মক জঘন্য অপরাধ করে থাকেন সেক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তিটাই মাথায় আসে। শুধু ফাঁসি নয়, বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে। গ্রিসে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার একমাত্র শাস্তি আগুনে পুড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড। সৌদি আরবে যদি ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে রায় ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যেই আসামির শিরশ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। চীনেও ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ইরানে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমান হলে, প্রকাশ্যে ফাঁসি কাঠে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় কিংবা সবার সামনে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version