দ্যা গ্রেট সুব্রত রায়ের সাহারা ডুবল কেন ? এখনও ২৫ হাজার কোটি টাকা রাখা

।। প্রথম কলকাতা ।।

স্কুটারের চেপে নোনতা বিক্রি থেকে হাইপ্রোফাইল ব্যবসায়ী। সাহারা প্রধান সুব্রত রায়ের এমন উত্থান হল কীভাবে? কেন ভেঙে গেল সাহারা গ্রুপ? যে সাম্রাজ্য বানিয়েছিলেন সুব্রত তার পতন হল কীভাবে? সেবির অ্যাকাউন্টে পড়ে আছে সাহারার ২৫ হাজার কোটি। এবার কি হবে তাঁর! দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পরে মুম্বইয়ে প্রয়াত হন সাহারার প্রধান সুব্রত রায়। তাঁকে চেনেন না বা সাহারার নাম শোনেননি এমন ভারতীয় খুব কমই আছেন। বিহারের এক অখ্যাত গ্রামে জন্ম হওয়ার সুব্রত রায়ের উত্থান। বলিউডের কোনও হিরোর থেকে কম নয় তা সত্ত্বেও যা তিনি বানিয়েছিলেন তা কাঁচের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরই ছিল সুব্রত লাকি সিটি।

১৯৪৮ সালের ১০ জুন বিহারের আরিয়াতে জন্ম। তাঁর বাবা সুধীরচন্দ্র রায় এবং মা ছবি রায় বাংলাদেশের ঢাকা বিক্রমপুর থেকে ভারতে এসেছিলেন। পূর্ববঙ্গে রায়বাবুদের নাকি জমিদারি ছিল। পরবর্তীকালে কলকাতার হোলিচাইল্ড স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন সুব্রত রায়। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন গোরক্ষপুরের কলেজ থেকে এই গোরক্ষপুর থেকে ব্যবসা শুরু। স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যাবেন কিন্তু তা হয়নি। পড়াশোনাতেও তেমন ভাল ছাত্র ছিলেন না। আঠাশ বছর বয়সে সাহারা ফিনান্সে যোগ দেন তিনি। ধুঁকতে থাকা সেই সংস্থা ছিল আদপে চিট ফান্ড। ক্রমে সংস্থাটিই তিনি কিনেও নেন। বদলে দেন সংস্থাটির বিজনেস মডেল। মাথায় ছিল পিয়ারলেস গ্রুপের মতো সংস্থার আদল। সেই আদলেই গড়ে তোলেন ‘সাহারা পরিবার’। তারপর খুব অল্প সময়ের মধ্যে স্বপ্নের উত্থান। সেসময় সাহারার যা জলবা ছিল সকলে তা জানেন। শাখাপ্রশাখায় বাড়তে থাকে ব্যবসা অ্যাম্বি ভ্যালি সিটি, সাহারা মুভি স্টুডিওজ, এয়ার সাহার। সাফল্যের মুকুটে জুড়েছে একের পর এক পালক। ১৯৯২ সালে হিন্দি ভাষার সংবাদপত্র ‘রাষ্ট্রীয় সাহারা’ দিয়ে মিডিয়া ব্যবসায় প্রবেশ। এর পর ‘সাহারা টিভি’র আত্মপ্রকাশ। ক্রমে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সুব্রত পা রাখেন বিদেশেও সেখানেও ‘সাম্রাজ্য’ স্থাপন হয় সাহারা।

তাহলে এত বড় রাজত্ব ভেঙে পড়ল কেন? শুধুই কি চিটফান্ড কেলেঙ্কারি? নাকি অন্য কিছুও? সৌরভ গাঙ্গুলি, সচিন তেন্ডুলকরদের দীর্ঘ প্রায় ১ দশক ভারতীয় ক্রিকেট দলের স্পনসর ছিল সুব্রত রায়ের সাহারা গোষ্ঠী। ২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময়ও সুব্রত রায়ের সাহারা গোষ্ঠীর ‘অ্যাম্বি ভ্যালি’ ছিল ভারতীয় দলের স্পনসর। সেই সময় ভারতীয় হকি দলের স্পনসরও ছিল সাহারা গোষ্ঠী‌। ভারতীয় ক্রীড়াজগতে অবাদ বিচরণ ছিল সুব্রত রায়ের। ক্রিকেট ও বলিউড তারকাদের নিয়ে সেই সময় অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল সাহারা গোষ্ঠী। সেই সময় থেকেই বিতর্ক ঘনাতে থাকে সুব্রতকে ঘিরে। আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। চিটফান্ড সংস্থা তৈরি করে বিপুল টাকা তছরুপের অভিযোগ ওঠে। SEBI-র সঙ্গে দীর্ঘ আইনি লড়াই চলতে থাকে। ২০১৪ সালের মার্চে তিহাড় জেলে ঠাঁই হয় তাঁর। এরপরেই একের পর রোগে জড়াতে থাকেন তিনি। দুবছর পরে ২০১৬ সালে প্যারোলে মুক্তি পান। তখন ক্যানসার, অন্যদিকে মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টের মতো নানা রোগে শরীর তাঁর জীর্ণ।

সুব্রত রায়ের মৃত্যুর পর সেবির অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা সংস্থার ২৫ হাজার কোটির টাকারও বেশি অর্থ ফের আলোচনায়। ওই টাকা গ্রাহকদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে সুব্রতর। প্রয়াণের পরে যা নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে। ২০১১ সালে সেবি (SEBI) সাহারা গোষ্ঠীর দুই সংস্থাকে নির্দেশ দেয় ৩ কোটি গ্রাহককে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। ২০১২ সালের ৩১ আগস্ট সেবির নির্দেশই বজায় রেখেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে ১৫ শতাংশ সুদ দেওয়ার নির্দেশও দেয় শীর্ষ আদালত। সাহারাকে সর্বমোট ২৪ হাজার কোটি টাকা জমা রাখতে বলা হয়েছিল। সেই টাকা বাড়তে বাড়তে ২৫ হাজার কোটি টাকায় পরিণত হয়েছে। যা আপাতত পড়ে রয়েছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। সুব্রতর প্রয়াণ নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিল সেই অর্থের ভবিষ্যত নিয়ে। আর তিনি সামান্য ব্যবসায়ী দেশের অন্যতম প্রভাবশালী হয়ে ওঠার কাহিনী রেখে গেলেন।

 

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version