।। প্রথম কলকাতা ।।
Kitchengardening: শীত মানেই বিভিন্ন খাবারে ধনে পাতার ব্যবহার। তরি তরকারি বলুন কিংবা স্যালাড, ধনেপাতা দিলে স্বাদ বেড়ে যায় অনেকটাই। ধনে পাতা পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। অনেকে গরম ভাতের সঙ্গে ধনেপাতার চাটনিও খেয়ে থাকেন। আবার ঘুগনি থেকে শুরু করে ঝাল মুড়িতেও থাকে ধনেপাতার ব্যবহার। আপনি সহজেই আপনার বাড়ির ছাদেই কিংবা ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে তৈরি করে নিতে পারেন প্রতিদিনের প্রয়োজনের ধনেপাতা। কারণ ধনে পাতার মত এত সহজলভ্য ওষধি গাছ খুবই কম রয়েছে।
ধনেপাতা এখন কৃষির অন্যতম অঙ্গ। বাজারে চাহিদার কারণে প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়। দ্রুত ফলন পেতে তাতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকও প্রয়োগ করা হয়। তাই বাজার থেকে কিনে আনা ধনেপাতা খাওয়ার চেয়ে ঘরে জৈব প্রযুক্তিতে তৈরি ধনেপাতা খেলে উপকার অনেক বেশি। তাই বাড়ির প্রয়োজনের জন্য নিজের হাতেই তৈরি করুন ধনেপাতা।
ধনেপাতাকে আমরা স্যালাড এবং রান্নার স্বাদ বাড়ানোর কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু শুধু স্বাদ এবং ঘ্রাণ বাড়ানোর কাজেই এর গুণাগুণ শেষ হয়ে যায় না। এ পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক ভালো।অসাধারণ পুষ্টিগুনেও ভরপুর। তাছাড়াও এতে আছে ১১ রকমের এসেনশিয়াল অয়েল। তার মধ্যে লিনোলেনিক অ্যাসিড, স্টিয়ারিক অ্যাসিড, পামিটিক অ্যাসিড অন্যতম। রয়েছে ফাইবারও। ধনেপাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন। মিনারেলের মধ্যে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন,জিংক, ক্যালসিয়ামও। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমানে পলিফেনল ও ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
ধনে পাতা খেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমে যায়, ভাল কোলেস্টরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্যে ধনে পাতা বিশেষ উপকারি। এটি ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্তের সুগারের মাত্রা কমায়। ধনে পাতায় থাকা অ্যান্টি-সেপটিক মুখে আলসার নিরাময়েও উপকারী। চোখের জন্যেও ভাল ।ঋতুস্রাবের সময় রক্তসঞ্চালন ভাল হওয়ার জন্যে ধনে পাতা খেলে উপকার পাওয়া যায়। এতে থাকা আয়রন রক্তশূন্যতা সারাতেও বেশ কার্যকরী।ধনে পাতার থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যাসকরবিক এসিড, বিটা ক্যারেটিন, ম্যাঙ্গানিজ পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। এতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা বাতের ব্যথাসহ হাড় এবং জয়েন্টের ব্যথা উপশমে কাজ করে। ধনে পাতার ভিটামিন কে অ্যালঝাইমার রোগের চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী।
এত গুন-সম্পন্ন ধনেপাতা নিজের ছাদে বা ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে তৈরির করবেন কিভাবে তা এখন দেখে নেওয়া যাক। পলি ব্যাগে, টবে, সিমেন্টের পাত্রে, ভাঙা বালতি বা গামলাতেও অনায়াসে ধনে পাতার চাষ করে নেওয়া যায়। এর জন্যে প্রচুর মাটির প্রয়োজনও হয় না। তিন চার ইঞ্চি মাটিই যথেষ্ট।
সবার আগে তিরিশ ভাগ মাটি, তিরিশ ভাগ কোকো পিঠ এবং চল্লিশ ভাগে কম্পোস্ট সার ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। দেখতে হবে পাত্রটিতে জল নিকাশি ব্যবস্থা যেন ভালো থাকে। তার জন্য পাত্রের তলায় ছিদ্র রাখতে হবে। প্রথম স্তরে ইটের টুকরো বা পাথরকুচি দিয়ে তারপর মাটির মিশ্রণ দিলে জল নিকাশি ব্যবস্থা ভালো হয়। আগের দিন ধনে বীজ ভিজিয়ে দিন। প্রয়োজনে দুদিন ভিজতে দিতে পারেন। এবার সেই ভেজানো ধনের বীজ মাটির ওপরের স্তরে ছড়িয়ে দিন। দেখবেন একটার ওপর একটা যেন চেপে না যায়। খুব ঘন বীজ ছড়ানো না হয়ে যায় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। হালকা মাটি দিয়ে সেগুলি ঢেকে দিন। এরপর মাটির মিশ্রণের ওপর জল ছড়িয়ে দিন। প্রথম অবস্থায় ইঁদুর কাঠবিড়ালি বা পাখিতে এই বীজ খেয়ে যেতে পারে। তাই মশারি জাতীয় কিছু দিয়ে ঢেকে রাখতে পারেন।
সব সময় রোদ পাবে এমন জায়গায় পাত্রটিকে রাখুন। খেয়াল রাখতে হবে মাটি যেন একেবারে শুকিয়ে না যায়। ভিজে ভাব থাকতে হবে। আবার বেশি পরিমাণে জল না দেওয়াই ভালো। এই ভাবে পুরো সূর্যের মধ্যে রাখতে হবে। সবসময় যেন ভেজাভাব থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে। সাত দিনের মধ্যেই ভালোভাবে ধনে গাছ বেরিয়ে যাবে। দু সপ্তাহ পর থেকেই ভালোভাবে পাতা গজিয়ে যাবে। তখন ওপরের দিক থেকে পাতা কেটে ব্যবহার করতে পারেন। আবার কিছুটা জৈব সার ছড়িয়ে দিলে ফের পাতা গজাবে। তাহলে আর দেরি না করে আজই এত উপকারী ধনেপাতার চাষ শুরু করে দিন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম