ক্যান্সারে উপকারী জাফরানের সফল ফলন বাঙলায়! অসাধ্য সাধন এই যুবকের

।। প্রথম কলকাতা ।।

ক্যান্সারে আক্রান্ত বন্ধু! ওষুধ হিসেবে তাকে খাওয়াতে হবে জাফরান। কিন্তু তার তো অনেক দাম। ভূস্বর্গ ছাড়া তার চাষ সম্ভবও নয়। চেষ্টা থাকলে উপায় হয়। ঘরের মধ্যে কাশ্মীরের আবহাওয়া তৈরি করে সফল ভাবে জাফরানের চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা নিউ ব্যারাকপুরের নিলয় বিশ্বাস। আপনি তো জানেনই, বিশ্বের সবথেকে দামী মশলা জাফরান। সেই মশলার চাষ সহজ কথা নয় কিন্তু যদি তৈরি করা যায় ভূস্বর্গের মতো পরিবেশ! তাহলে? কঠোর পরিশ্রমে অসাধ্য সাধন করে তাক লাগালেন নিলয়। কিভাবে করলেন অসাধ্য সাধন?

মারণে রোগ ক্যানসারে আক্রান্ত নিলয়ের বন্ধু। সেই খবরে তিনি মুষড়ে পড়েছিলেন। কোন খাবার অ্যান্টি ক্যানসারের পরিপূর্ণ, তা নিয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করেন নিলয়বাবু। তখনই জানতে পারেন অ্যান্টি ক্যান্সারের ওষুধ হিসাবে প্রধান খাদ্য কেশর বা জাফরান। জাফরানের বাজার মূল্য তো সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেই থেকেই মনে ধরল জেদ। কী ভাবে সস্তায় কেশর চাষ করা যাবে সেই ভাবনা নিয়েই কাজে নামেন তিনি। বাড়ির ভিতরেই তৈরি করেন এক টুকরো কাশ্মীর।শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব। এই কেশর বা জাফরান মূলত ভূস্বর্গ কাশ্মীরেই মূলত চাষ হয়।সেখানকার আবহাওয়ায় কেশর উৎপন্ন করা সম্ভব।পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া যা কোনদিনই সম্ভব নয় বলে এতদিন ভাবতেন সকলে। সেই ধারণা ভুল বলে প্রমাণ করলেন নিলয়।

সেই কাশ্মীরের আবহাওয়া তার ৬ ফুট বাই ৬ ফুট ঘরের মধ্যেই তৈরি করেছেন তিনি। ডেয়ারি টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন নিলয়। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে জাফরান চাষ নিয়ে রিসার্চ করেছেন তিনি। তারপর প্রথমে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে জাফরান চাষের জন্য ঘর তৈরি করেন এই বাঙালি যুবক। এছাড়াও ঘরের টেম্পারেচার মাপার জন্য কিছু মেশিন কিনেছেন। যাতে রয়েছে সূর্যের আলোর বিকল্প হিসেবে প্রয়োজনীয় আলো।ঘরে রয়েছে দুটি এসি। ৬ বাই ৬ ঘরের মধ্যে কয়েকটি র‍্যাকে শুরু করেন জাফরান চাষ। এ জন্য অনলাইনে জাফরান বীজ এনে তার চাষ শুরু করেন তিনি। ভারতীয় বাজারে কেজিপ্রতি ৫ লাখ টাকা থেকে ১২-১৪ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম জাফরানের। বেশি দামের জাফরান বাইরে রফতানি হয়। চাহিদা অনুযায়ী, ভারতে প্রতি বছরই জাফরান উৎপাদনের ঘাটতি থেকে যায়। তাই প্রয়োজনে বিদেশ থেকে আমদানি করাতে হয় কেশর।

এই ব্যবসা যদি নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে করা যায় তাহলে লাভের অংশ অনেকটাই। বছরে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এই সময়েই ফুল হয়। সেখান থেকে জাফরান পাওয়া যায়। শুনতে খুব সহজ মনে হলেও জাফরান চাষ খুব শক্ত। না জেনে এই চাষে নাম প্রচুর অর্থ নষ্ট হতে পারে।নিলয় বিশ্বাস পেশায় চাকরিজীবী। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে আদিবাসী উন্নয়ন দফতরে চাকরি করেন। অফিস থেকে এসেই রাতে তার কেশর গাছের চর্চা শুরু করেন। যে ঘরটি তৈরি করা হয়েছে, সেই ঘরটিও নিলয় নিজের হাতেই করেছেন। মোট ১৮০ টি গাছ করেছেন তিনি। এর মধ্যে ১৫০টি ফুল পেয়ে গিয়েছেন। এই ১৫০ টি ফুল থেকে এক গ্রাম ড্রাই কেশর আসে।

সেই ড্রাই কেশর তৈরি করতে ৪৫ মিনিট ধরে ৬০ ডিগ্রি টেম্পারেচার দিয়ে ড্রাই করতে হবে। তারপরেই সেই কেশর বাড়িতে রাখা যাবে। যার মেয়াদ থাকবে ৩ বছর থেকে ৭ বছর পর্যন্ত। নিলয় যে পদ্ধতিতে কেশর বাজারে আনতে চলেছে, সেই কেশবের এক গ্রামের দাম মিনিমাম ৫০০ টাকা হবে। তবে এবছর প্রথম ফলন, সেই কারণে বিক্রির কোন চিন্তাই নেই। এবছর পরিবার এবং পরিচিতদের মধ্যেই কেশর বিলোবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি।ভবিষ্যতে এই কেশর নিয়ে বড়ভাবে কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। তাতে হয়তো জাফরান চাষ হবে অনেক সহজসাধ্য। হয়তো তা সহজলভ্য হবে ক্যান্সার আক্রান্তদের কাছে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version