Panama Canal: রহস্যময় পানামা খালের তলায় কী ঘটছে ? থমকে যায় জাহাজ, নৌ বাণিজ্যে বড় ধাঁধা

।। প্রথম কলকাতা ।।

Panama Canal: পানামার গায়ে লেগেছে কোন অভিশাপ? পানামা খালের নীচে কি ঘটছে জানেন? বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যের পথ বন্ধ?রহস্যময় এই সরু ক্যানেল কোন মন্ত্রে শুকিয়ে কাঠ? কেন পানামায় ঢুকেই থমকে যায় হাজার হাজার জাহাজ? বড় ধাঁধা দায়ী কে? নৌ-বাণিজ্যে মোড় ঘোরানো রুটের এই ভয়ানক দশা আদৌ ঘুচবে কি? আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারদের অন্যতম বিস্ময়কর সৃষ্টি পানামা খাল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই মহাসাগর প্রশান্ত মহাসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরকে যুক্ত করেছে এই খাল। পণ্য আমদানি রপ্তানির অন্যতম ইম্পরট্যান্ট রুট। সেই সরু খাল থেকেই কিনা হুহু করে জল উবে যাচ্ছে? কি ঘটছে পানামায়?

যাতায়াতের সময় কমিয়ে দিয়েছে ৬ মাস। প্রতিবছর ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি ডলার সাশ্রয় করে পানামা। ১৭০ টি দেশের ১৯২০ টি বন্দরের সঙ্গে কানেকশন রয়েছে শত বছরের পুরনো এই খালের সাথে। সমুদ্রভিত্তিক বাণিজ্যের প্রায় ৫% এই জলপথ ব্যবহার করেই ঘটে চলেছে বিশ্বের বুকে। তাহলে কি শত শত পাহাড়, জঙ্গল, গাছপালা ধ্বংসের অভিশাপ লাগলো ৮০ কিমি দীর্ঘ পানামার গায়ে? ৩৩ বছর ধরে একটু একটু গড়ে তোলা পানামা খাল তৈরিতে প্রাণ গেছে ২৭ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের। এখন সেই পানামা খালেরই জল স্তর কমছে, খরা হচ্ছে। তাহলে কি নির্মাণের এতো বছর পর প্রকৃতি বদলা নিতে শুরু করেছে পানামার থেকে? এখন পানামা খালের অবস্থা শোচনীয়। খালের দু পাশে ২০০-র বেশি জাহাজ আটকে গেছিল, চাট্টিখানি কথা নয়। কত বড় জাহাজজট তৈরি হয়েছিল যে। আনুমানিক ২০ কোটি ডলারের ক্ষতি অলরেডি হয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে পানামা খালে জাহাজগুলোকে যে ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে, তা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বই কমবে না। এতে এফেক্টেড হবে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। সবথেকে বেশি রিস্কে পড়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। আশঙ্কা করা হচ্ছে, পানামা খালের জলস্তর কমতে থাকলে আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে! আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা খাল দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানির পরিমাণ বেড়েছে। তার মধ্যেই এই সঙ্কট বিভিন্ন দেশের, বিশেষত আমেরিকাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। না যে সে খরা নয়, পানামায় দীর্ঘ মেয়াদী খরার কারণে খালের জলস্তর নেমে গেছে। এতো এতো বাণিজ্যিক জাহাজ চলতে পারছে না, থমকে গেছে পানামায়। বুঝতে হবে সাধারণত বৃষ্টির জল আর পার্শ্ববর্তী পাহাড় থেকে প্রবাহিত জল দিয়ে পানামা খালে জলের সংস্থান হয়। তবে দু বছর ধরে বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়ায় খালের জলস্তর উল্লেখযোগ্য হারে নিচে নামতে শুরু করেছে। আর ঠিক এই কারণেই ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে জাহাজ জটের মুখোমুখি হয়েছিল পানামা খাল।

যার ফলে পানামা খাল কর্তৃপক্ষ যাতায়াতকারী জাহাজের সংখ্যা কমাতে বাধ্য হয়েছে। আগে প্রতিদিন গড়ে ৩৮ টি জাহাজ চলাচল করতো পানামার উপর দিয়ে। চলতি বছরের জুলাইয়ে খাল কর্তৃপক্ষ জাহাজ চলাচলের সংখ্যা ৩২ এ নামিয়ে আনে। পরবর্তীতে প্রতিদিন ৩০টি জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে পানামার জল ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী পানামার ৫ লক্ষ মানুষ এক দিনে যে পরিমাণ জল ব্যবহার করেন একটি মালবাহী জাহাজ চলাচলে সেই একই পরিমাণ জল ব্যবহার হয়। পরিমানটা নেহাত কম নয়। তাই জল সংরক্ষণের জন্য পানামা খাল কর্তৃপক্ষ নতুন কিছু নীতি নিয়েছে। সেগুলোও এই জাহাজজট তৈরির নেপথ্য একটা বড় কারণ। খালটিকে পরিষ্কার রাখতে ব্যবহৃত জলের পরিমাণ কমানো হয়েছে, জাহাজগুলোকে আরও ধীরগতিতে খালটি পার হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলো খালের ধারণ ক্ষমতাকে কমিয়ে দিয়েছে, আর বাড়িয়ে দিচ্ছে জাহাজজট।

না এখানেই কিন্তু শেষ নয়। আগের তুলনায় জাহাজগুলো আকারে বেড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় জাহাজগুলোর যাতায়াতে সুবিধার জন্য পানামা খাল প্রশস্ত ও গভীর করা হয়েছে! বড় জাহাজগুলো খাল পার হতে বেশি সময় নেয়। এটাও জাহাজজটের অন্যতম একটা কারণ। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা খাল দিয়ে পণ্য পরিবহন বেড়েছে। ফলে বাড়তি পরিবহনের জন্য জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে, যা খালের সক্ষমতার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। আর এই সবকিছুর বাইরে আরো একটা বড় কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন। পানামা খালে অলরেডি জলবায়ু পরিবর্তনের এফেক্ট পড়তে শুরু করেছে। ভবিষ্যতে যা খালটিকে আরও রিস্কে ফেলে দিতে পারে। যা বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য মোটেই সুখবর নয়। এতোকিছুর পরেও খাল কতৃপক্ষ পানামা খালের উভয় পাশের জাহাজজট কমাতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আশার আলো এটুকুই।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version