World Sparrow Day 2023: শৈশবের স্মৃতিতে পুঁচকে চড়ুই, শোনা যায় না কিচিরমিচির! কোথায় গেল এই পাখি?

।। প্রথম কলকাতা ।।

World Sparrow Day 2023: একটা সময় ছিল যখন বাড়ির উঠোনে ধান শুকোতে দিলে কিংবা ডাল লঙ্কা, গম, রেখে দিলে এক ঝাঁক চড়ুই পাখি এসে হাজির হত। তাদের কিচিমিচিতে ভরে উঠত চারিদিকটা। এখন সেই চড়ুইয়ের (Sparrow) দেখা মেলা বেশ কঠিন। গ্রামে গঞ্জে এখনো চড়ুই পাখির দেখা মেলে, কিন্তু শহরাঞ্চলে প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে। অথচ একটা সময় তিলোত্তমার বুকে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি দেখা যেত। মানুষের জীবনযাত্রায় যেমন ধীরে ধীরে নানান পরিবর্তন এসেছে, তেমনই বদলে গেছে চড়ুইদের জীবন। তারা বুঝে গেছে, মানুষের বাড়ির কাছাকাছি আর থাকতে পারবে না। নিরাপত্তার জন্য, তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য নতুন জায়গা খুঁজে নিতে হবে। একটা সময় ছিল, যখন তারা মানুষের বাসস্থানের কাছাকাছি নিজেদের বাড়ি মনে করত। আজ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো। চড়ুই পাখি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রতিবছর ২০ মার্চ গোটা বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় চড়ুই দিবস (World Sparrow Day)। পৃথিবীর জীব বৈচিত্র্যের সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই ছোট্ট পুঁচকে পাখি।

মানব সভ্যতার সঙ্গে চড়ুইয়ের সম্পর্ক প্রায় ৫ হাজারের বেশি পুরনো। আগে চড়ুই মানুষের সাথে থাকতে পছন্দ করত। যেখানে মানুষের বাস সেখানেই দেখা যেত ঝাঁক ঝাঁক চড়ুই। ১৯৮০ সালে প্রকাশ্যে আসে চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট। দেখা যায়, চড়ুইয়ের সংখ্যা ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এই পাখির অবলুপ্তি ভারতের পাশাপাশি আমেরিকা, ইউরোপ সহ গোটা বিশ্বে পরিলক্ষিত হয়েছে, তবে ঝাড়খণ্ডে চড়ুইয়ের বাস একটু বেশি। মানুষের জীবনে বদলে যাওয়ার সাথে সাথে বিপন্ন হয়েছে চড়ুইয়ের জীবন। মানুষের ঘরে দেওয়ালে ফাটল, গর্ত, ভাঙা, পাইপ লাইনে চড়ুই বাস করত। কিন্তু এখন যেভাবে কংক্রিটের বাড়ি তৈরি হচ্ছে সেখানে কোন স্থান অবশিষ্ট নেই। পাশাপাশি গাছ কাটা, পরিবেশ দূষণ, রাসায়নিক প্রয়োগ, পোকামাকড়ের অভাবের কারণে চড়ুই বিলুপ্তির পথে। ছিন্ন হয়ে গেছে মানুষের সঙ্গে চড়ুই পাখির পাঁচ হাজারের বছরের সম্পর্ক। বর্তমানে চড়ুই পাখির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০%।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, খোলা জায়গায় বসবাসকারী চড়ুইয়ের থেকে মানুষের বাসস্থানের কাছাকাছি থাকা চড়ুইয়ের আয়ু বেশি। সাধারণত এক একটি চড়ুই পাখির আয়ু ৩ বছর থেকে ১০ বছর হয়ে থাকে। এরা নিজেদের মধ্যে খুব সামাজিক। দলবদ্ধভাবে থাকতে ভালোবাসে। দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ সেন্টিমিটার। ওজন প্রায় ৩০ গ্রামের কাছে। পুরুষ ও স্ত্রী চড়ুইয়ের রং আলাদা হয়ে থাকে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকে শৈশবের সঙ্গে চড়ুই পাখির নানান স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। এখনো মানুষ চাইলে চড়ুই পাখিকে আবার পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে পারে। বাড়ির ছাদের নিচের অংশে ছোট্ট করে কার্ডবোর্ড দিয়ে একটি বাসা তৈরি করতে পারেন। সেখানে রেখে দিতে পারেন খাবার আর জল। চড়ুই পাখির সব থেকে বড় শত্রু হল বিড়াল, ঈগল আর কাঠবিড়ালি। চড়ুই পাখি খুব উঁচুতে ওড়ে না, এরা বড়জোর ৩০ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত উঁচুতে উড়তে পারে। ডানা মাটি থেকে উঁচু হওয়ার পর দ্রুত ঝাপটায়।

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, বর্তমানে যে ২০ শতাংশ চড়ুই অবশিষ্ট রয়েছে সেই চড়ুই গুলো কোথায় রয়েছে? আসলে পাখিদেরও সংবেদনশীলতা রয়েছে। তারা বুঝতে পারে মানুষ তাদের বিপদ ডেকে আনছে, নাকি বন্ধুত্ব গড়ে তুলছে। যেখানে নিরাপদ মনে করে সেখানে বাসা তৈরি করে। তাই ধীরে ধীরে শহরের কংক্রিটের জঙ্গল থেকে অনেক দূর চলে গিয়েছে। এমনকি গ্রামেগঞ্জেও চড়ুইয়ের দেখা পাওয়া বেশ মুশকিল। যে সমস্ত এলাকায় চড়ুই পাখি দেখা যায় সেই এলাকাবাসী বেশ ভাগ্যবান। প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে সেই প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষ তাল মিলিয়ে নিলেও পরিবেশের কিছু কিছু প্রাণী তা পারছে না, সেই তালিকায় রয়েছে চড়ুই।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version