Bangladesh: বাংলাদেশের সঙ্গে স্বার্থের খেলা যুক্তরাষ্ট্রের! চীনের কলকাঠিতেই বদলাচ্ছে সমীকরণ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

Bangladesh: বাংলাদেশ এর ঘাড়ে আরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বোঝা চাপার শঙ্কা বাড়ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আসার চান্স বাড়ছে? যুক্তরাষ্ট্র কি কোনোভাবে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে চাইছে? কোন স্বার্থ হাসিল করতে এই নিষেধাজ্ঞার কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের? বাংলাদেশের রাজনীতি আর নির্বাচনই কি যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট? যুক্তরাষ্ট্রের কোন স্বার্থে ঘা দিয়েছে বাংলাদেশ? দুই দেশের সমীকরণ বদলের নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চিরশত্রু চীনই কি মাস্টারমাইন্ড? নিষেধাজ্ঞার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কতটা তৈরি বাংলাদেশ? কি বলছেন বিশ্লেষকরা?

গত দেড় বছরে র‌্যাব ও র‌্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। এমতাবস্থায় ফের নতুন করে নিষেধাজ্ঞার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, নতুন এই নিষেধাজ্ঞার তথ্য আগেভাগে জেনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর বিভিন্ন বক্তব্য ও সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া সমালোচনা করছেন। কিন্তু, কি কারণে একের পর এক মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে?

বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, সরকারকে চাপে রাখতে নিষেধাজ্ঞার কৌশল নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে, বাংলাদেশের রাজনীতি আর নির্বাচন তাদের ফোকাস নয়। যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী চীন বিরোধী শক্তিশালী বলয় তৈরি করতে চাইছে। যেখানে, বাংলাদেশ অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। বিষয়গুলো কে পর পর সাজালে বুঝতে অনেকটা সুবিধা হবে। মনে করে দেখুন, সম্প্রতি ঘোষিত ভারত মহাসাগরীয় রূপরেখা মানে ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকে শেখ হাসিনার সরকার স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ ভাবনার কথা তুলে ধরেছিল। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি বা কৌশলের থেকে এই ভাবনা যে একেবারেই আলাদা তা নিশ্চয়ই নতুন করে বলে দিতে হবে না। এটাই বাইডেন প্রশাসনকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। বলা ভালো যুক্তরাষ্ট্র কোথাও গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কেউ তাদের জায়গা দখল করে নিচ্ছে বা অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করছে এমনটা মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের।

গত দেড় দশকে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক দৃঢ় সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক আরও জোরদার করার পাশাপাশি ভারসাম্যের কূটনীতি বজায় রেখেছে বাংলাদেশ। করোনা থেকে শুরু করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তৈরি হওয়া বৈশ্বিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও এগিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার দেশ। আর এই বাংলাদেশকে নিয়েই দড়ি টানাটানি চলছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের। হবে নাই বা কেন? ভৌগোলিক অবস্থান, ভূ-রাজনীতি, ভূ-অর্থনীতি ও কৌশলগত নানান কারণ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। তাই, বাংলাদেশ কে নিজেদের বলয়ে রাখতে মরিয়া, বিশ্বের দুই পরাশক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র।

এর মধ্যে চীন থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি আমদানি করে, আর যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি। দুই শক্তিধরের সঙ্গে সম্পর্কের রসায়নও ভিন্ন। তবুও যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, বাংলাদেশ সরকার এবং নীতিনির্ধারক মহলে চীনের একচেটিয়া প্রভাব আছে, তৈরি হয়েছে। তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় বিশ্লেষকদের একাংশের মতেও, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্বের নেপথ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অতিমাত্রায় চীন সংবেদনশীলতা কিছুটা হলেও দায়ী। যা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের টানাপোড়েনের ভস্মে ঘি ঢেলেছে। এখানে কিন্তু আরো একটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যা চলছে তাতে কি বিরোধীরা কোথাও গিয়ে বেনিফিটেড হবে? এটা তো ঠিক, এক নিষেধাজ্ঞা চলতে চলতেই নতুন নিষেধাজ্ঞা এলে রাজনীতিতে কোণঠাসা বিএনপি সহ সমমনা দলগুলোর জন্য তা হবে অনেকটা ওই মেঘ না চাইতে জল পাওয়ার মতো বিষয়, এটা বলে দিতে হবে না। এর ফলে সরকার বিরোধী আন্দোলনও চাঙ্গা হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

আর, আরেকাংশের মতে, বাংলাদেশ দশ বছর আগের সেই দেশ নেই যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বকে এটা মানতে হবে এদেশের নিজস্ব শক্তি, বহুমাত্রিক বন্ধুত্ব ও দৃঢ় নেতৃত্ব উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এখন মডেল তাই কোনো একটা শক্তি চাইলেই বাংলাদেশ বা সরকারকে ফেলে দেবে, সেই অবস্থা আর নেই, সেই বার্তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাঁর বিভিন্ন বক্তব্যে দিচ্ছেন। এ ছাড়া সরকার ইতিমধ্যেই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। আগামী সরকারও বাইরের কোনো শক্তি নয়, বাংলাদেশ এর জনগণ নির্বাচন করবে।

কিন্তু, এই মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা সত্যিই কতটা দুর্ভাগ্যজনক বাংলাদেশের জন্য? বাংলাদেশ কি মনে করছে? সেটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সঙ্গে শুধু রাজনৈতিক ভাবেই নয়, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি এমনকি কৌশলগতভাবেও জড়িত। তাই বৈশ্বিক প্রত্যাশা বিবেচনায় রেখে কাজ করলে নিষেধাজ্ঞার মতো চ্যালেঞ্জগুলো হয়তো এড়ানো সম্ভব। জানিয়ে রাখি, নিষেধাজ্ঞার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত সরকার। নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনেই করছে না বাংলাদেশ‌। বরং গত দেড় বছরে বেশ দৃঢ়ভাবেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে নিষেধাজ্ঞার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। তাই বাংলাদেশ বলে দিয়েছে, দেশের জনগণের জন্য রাজনীতি করে তারা। সুতরাং ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এরকম তিক্ত অভিজ্ঞতা তাদের রয়েছে। সেই মতই প্রিকশন নিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। বাকিটা সময় বলবে। মোদ্দা কথা, সমালোচনায় বাংলাদেশ যে খুব একটা কান দেয় না তা স্পষ্ট। তবে, বাংলাদেশের মানুষ এটাও কোনোভাবেই চায় না, কোনো ধরনের স্যাংশন আসুক কারণ, এর প্রভাবটা শুধু সেই ব্যক্তির ওপর সীমাবদ্ধ থাকে না, পুরো দেশ এবং দেশের অন্য নাগরিকের ওপর এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version