।। প্রথম কলকাতা ।।
টগবগে গরম জলে ফুটছে চাল। হয়ে ওঠা ভাতের সুবাসে ম ম করছে রান্না ঘর। বাঙালির বাড়িতে এ তো নিত্যদিনের ব্যাপার। ভাত ছাড়া বাঙালির দিন চলে না। কিন্তু আপনি জানেন কি, ঠাণ্ডা জলেও ভাত রান্না হয়? মানে, আগুনের তাপ ছাড়াই রান্না হবে ভাত। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই। ভাবছেন এতো দারুণ ব্যাপার! তাড়াহুড়োর সময় তো এই চাল ভীষণ কাজে দেবে! ঠিক তাই। গ্যাস ওভেন জ্বালানোর দরকারই নেই। জলে ভেজনোর পর শুধু খাওয়ার অপেক্ষা। এখন প্রশ্ন হল, কীভাবে হচ্ছে তাপ ছাড়াই ভাত রান্না? এই চাল পাবেনই বা কোথায়?
চাল জলে ফুটে সেদ্ধ হয়ে তবেই হবে ভাত৷ আপনাকে একথা নতুন করে বলার কোনও দরকার নেই৷ হাঁড়িতে জল দাও। তারপর জল গরম হবে।চাল ধুয়ে হাঁড়িতে দিয়ে অপেক্ষার পালা। সঠিক সময়ে না নামালে আবার ভাত ঘেঁটে পাঁক। সব মিলিয়ে দু বেলা ভাত রান্না মানে বড় ঝক্কির ব্যাপার। সে জায়গায় আপনার খাটনি অনেকটাই কমিয়ে দেবে এই কোমল চাল। এই চাল নিয়ে কেবল জলে ফেললেই হল৷ ব্যাস, ভাত তৈরি৷ আগুনের বালাই নেই। জল গরম হওয়ার প্রয়োজন নেই৷ অবিশ্বাস্য হলেও এমন অদ্ভুত চাল সত্যিই রয়েছে৷ শুধু তাই নয়, রমরমিয়ে চাষও হচ্ছে৷ এই বিশেষ চাল থেকে ভাত হওয়ার জন্য সাধারন তাপমাত্রার জল হলেই চলবে৷
এই চাল জলে ভিজিয়ে রাখলেই তা চিড়ের মতো ফুলে উঠবে। ঠিক ফোটানো চালের মতো না হলেও এ এক বিশেষ রকমের ভাত। টকদই বা গুড় দিয়ে দিব্যি খাওয়া যায়। নদিয়ার ফুলিয়ায় রাজ্য সরকারের কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গবেষকরা এ নিয়ে টানা প্রায় এক দশক গবেষণা করেছেন।অবশেষে এসেছে সাফল্য। এই বিশেষ জাতের ধান তৈরি হতে মোট ১৪০ দিন সময় লাগে। মূলত আমন প্রজাতির এই ধানে আছে বিরল গুণ। এ চাষে রাসায়নিকের ব্যবহার প্রায় নেই। কীটনাশকও লাগে নামমাত্র। ফলে চাষীদের মধ্যে বেড়েছে এই ধান ফলানোর প্রবণতা। এছাড়া রাজ্য সরকারের তরফেও বীজ বণ্টন করে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
এই কোমল ধান চাষে খরচও কম। আর যারা এই চালের ভাত খাচ্ছেন তাদের জ্বালানি খরচও বেঁচে যাচ্ছে। ফলে দু’জনেই লাভবান হচ্ছেন। ঠিক এই কারণেই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে কোমল ধান।নদিয়ার পাশাপাশি এবার ধান উৎপাদন হয় এমন জেলাগুলির কৃষি খামারেও কোমল প্রজাতির ধান চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার ফুলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কোমল প্রজাতির ধানের চাষ শুরু করেছে কৃষি দপ্তর। কৃষি খামারে উৎপাদিত ধানের বীজ চাষিদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে।্আসামে এই ধানের ব্যাপক চাষ ব্যাপকভাবে হয় ৷বন্যার মতো পরিস্থিতিতে এই আগুন ছাড়াই রান্নায় বিশেষ ভাবে সহায়ক হয়ে ওঠে এই চাল৷
সম্প্রতি বিহারেও শুরু হয়েছে এর চাষ৷ বিহারের এক কৃষক কলকাতা থেকে এই চালের বীজ কিনে চাষ শুরু করেন৷ সফল ভাবে চাষ করে তিনি এই ধানের বীজ মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, নাগাল্যান্ড এবং বিহারের অন্যান্য জেলার কৃষকদের কাছেও সরবরাহ করেছেন। কিন্তু কীভাবে এত দ্রুত রান্না হয়ে যায় এই চাল?বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চালে কার্বহাইড্রেটের পরিমাণ কম থাকায় উত্তাপ ছাড়াই রান্না হয়ে যায়৷
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম