।। প্রথম কলকাতা ।।
Train Screw Coupling: ট্রেনের বগি জোড়া কিংবা স্ক্রু কাপলিং (Screw Coupling) এর কাজ অত্যন্ত বিপ্পজনক। যিনি এই কাজটি করছেন তিনি তো রিস্কের মধ্যে থাকেন, উপরন্তু তার হাতে থাকে হাজার হাজার যাত্রীর প্রাণ। তার কাজে ছোট্ট ভুলেই ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। একটি বগি থেকে আরেকটি বগির মাঝপথে চলন্ত অবস্থায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের ঘটনা ভারতবর্ষে একেবারেই নতুন নয়। ২০২২ এর জুলাই মাসে হাওড়াগামী ডাউন উলুবেরিয়া লোকাল আবাদা স্টেশন ছেড়ে বেরোনোর পর মাঝের দুটি বগির কাপলার খুলে যায়। সেই সময় আতঙ্কে শিটিয়ে গেছিলেন যাত্রীরা, যদিও কোন প্রাণহানি হয়নি।
স্ক্রু কাপলিংয়ের (Screw Coupling) কাজ কায়িক শ্রমসাধ্য। ট্রেনের বগি জোড়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার প্রয়োজন। রেলের যতগুলি ভারী কাজ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো দূরপাল্লার ট্রেনে বগি জোড়া। রীতিমত বেশ কয়েক কিলো ওজনের লোহার স্ক্রুকে (Screw) হাতে তুলে রেলের বগির নিচে প্যাচ দিয়ে জুড়তে হয়। যিনি এই কাজটি করবেন তাকে রেল লাইনে নেমে দুটি বোগির মাঝখানে দাঁড়িয়ে সেই কাজ করতে হয়। বগি জোড়ার পর ইঞ্জিন চালু করে প্রথমে বগি টেনে পরীক্ষা করে নেন। রেলের কর্মী যদি নিশ্চিত করেন যে সবকিছু ঠিক আছে তবেই সেই ট্রেন তার গন্তব্যের দিকে রওনা দেবে।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) ঝড়ের বেগে ভাইরাল (Viral) হয়েছে একটি ভিডিও, যা দেখলে আপনার বুক কেঁপে উঠবে। সাধারণত কিছু কিছু দূরপাল্লার ট্রেনের ক্ষেত্রে খুব দ্রুত দক্ষতার সঙ্গে দুটি বগি জোড়া হয়, তাও আবার অত্যন্ত কম সময়ে। রেল কর্মী আগে থেকেই হাতে যন্ত্র নিয়ে আরেকটি বগির সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। দূর থেকে ছুটে আসে অপর বগি। দুটি বগি একে অপরের কাছাকাছি আসলেই রেল কর্মী দ্রুত দুটো বগির জোড়া লাগান। ওই কর্মীকে বগীর সামনে এমন স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যার একটু এদিক ওদিক হলেই মারাত্মক অ্যাক্সিডেন্ট ঘটতে পারে না। মুহূর্তে চলে যেতে পারে প্রাণ। দুটো বগি কাছে আসতেই তিনি স্ক্রু ঘুরিয়ে তার কাজ সম্পন্ন করেন তিনি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে কাজটি করেন সেখানে শুধুমাত্র পা রাখার জায়গা থাকে। মাথা কিংবা হাত পা একটু ভুল ভাবে চালিত করলেই রেল বগির শক্ত লোহার সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা।
সাধারণত ভারতীয় রেলে দুই ধরনের কোচ হয়, একটি আইসিএফ, অপরটি এলএইচবি। অনেকের মনে হয় প্রশ্ন জাগে, দুটি বগি জোড়ার ক্ষেত্রে কেন সিঙ্গেল অর্থাৎ একটা কাপলিং ব্যবহার করা হয়। বিপদ এড়াতে দুটো কাপলিংও তো ব্যবহার করা যেতে পারে! আসলে ভারতীয় রেলওয়ে ট্র্যাক আঁকাবাঁকা। ট্রেন যাতে স্বাচ্ছন্দ্য ভাবে চলতে পারে, তাই সিঙ্গেল কাপলিং ব্যবহার করা হয়।
আইসিএফ কোচে ব্যবহার করা হয় স্ক্রু কাপলিং (Screw Coupling)। এক্ষেত্রে স্ক্রু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দুটি বগি জোড়া হয়। এনএইচপি কোচে ব্যবহার করা হয় বাফার কাপলিং। আগে যাত্রার সময় চলমান ট্রেনে ঝাঁকুনি অনুভব হত। সেই ঝাঁকুনি কমাতে ভারত সরকার কয়েক বছর আগে সুষম ড্রাফট গিয়ার সহ সেন্টার বাফার ব্যবহার করছে। সাধারণত কাপলার দুটি বগিকে একটি চেনের মতো সংযুক্ত করে, তবে কাপলার জয়েন্টে কিছুটা খালি জায়গা থেকে যায়। যার কারণে যখনই ট্রেন ব্রেক কষে যাত্রীরা ঝাঁকুনি অনুভব করেন। ট্রেনে যাতায়াতের সময় কম্পনের কারণে ক্লান্ত অনুভব হয়। এছাড়াও ট্রেনে হঠাৎ ব্রেক লাগলে সিট থেকে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই যাত্রা আরামদায়ক করতে দুটি কোচের সংযোগকারী কাপলারের ডিজাইনে এখন পরিবর্তন আনা হয়েছে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম