।। প্রথম কলকাতা ।।
Mamata Banerjee: পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তিনি এখনও অপরাজয়ে। প্রায় ১১ বছর ধরে বাংলার মাটিতে বাংলার মানুষের পছন্দের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে রাজ্যের দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন। একজন সাধারণ কংগ্রেস কর্মী হিসেবে রাজনীতির ময়দানে নামা। আর তারপর নিজের হাতে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে রাজ্য সরকার গঠন করা। বলতে যতটা সহজ যাত্রাপথ ততটা কোমল ছিল না। বহু কন্টকময় পথ পেরিয়ে তবে আজ পশ্চিমবঙ্গের তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রী (CM)। তিনি আর কেউ নন, বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি কলকাতার মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের এই কন্যা। তাঁর ছোটবেলা থেকে শুরু কৈশোর কোনটাই খুব একটা মসৃণ ছিল না। তবে তারপরেও থেমে থাকতে শেখেননি তিনি নিজের দক্ষতায় নজির গড়েছেন এই বাংলার বুকে। পশ্চিমবঙ্গের রূপকার বিধানচন্দ্র রায় ও জ্যোতি বসুর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন এমন মুখ্যমন্ত্রী যিনি পরপর তিনবার একই পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ২০১১ সালে বাংলার রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনেন। কারণ সেবারে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১৬ সাল এবং তারপর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়লাভ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকে তাঁর জন্মদিনে চলুন জানা যাক কীভাবে ধীরে ধীরে রাজনীতির আঙিনায় নিজেকে গড়ে তুলেছেন তিনি।
জাতীয় কংগ্রেসে রাজনৈতিক জীবন শুরু :
১৯৭০ সালে রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদার্পণ কংগ্রেসের (Congress) হাত ধরে। সেই সময় সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন তিনি। ১৯৭৫ সালে জয়প্রকাশ নারায়ণের বিরুদ্ধে তাঁর একটি আন্দোলন সংবাদমাধ্যমের নজর কেড়েছিল। এরপর ১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্য মহিলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের পদে দায়িত্ব সামলান। ১৯৮৪ সালে তিনি দেশের কনিষ্ঠতম সাংসদের তকমা পান । সেবারই যাদবপুর কেন্দ্র থেকে দাপুটে নেতার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন তিনি। যদিও তাঁর রাজনীতির প্রারম্ভিক জীবনে কংগ্রেসের হাত ধরে পথচলা শুরু হলেও পরবর্তীতে মত পার্থক্য দেখা দেয়। যার কারণে নয় দশকের একেবারে শেষের দিকে কংগ্রেস ত্যাগ করেন তিনি।
তৃণমূলের জন্ম :
১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস দলটি স্থাপন করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন NDA জোটে সামিল হন। এই জোট যখন সরকার গঠন করে, তিনি রেলমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হন। ২০০০ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম তাঁর রেল বাজেট পেশ করেছিলেন। সেই বাজেটে তিনি রাজ্যের প্রতি নিজের অনেক প্রতিশ্রুতি পূরণ করেন । রাজ্যের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের জন্য তিনি গুরুত্বপূর্ণ দূরপাল্লার ট্রেন চালু করেছিলেন। এছাড়াও ২০০০ থেকে ২০০১ অর্থবর্ষে তিনি মোট ১৯ টি নতুন ট্রেন চালু করেন।
বামেদের বিরুদ্ধে লড়াই
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সাংসদ হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব পদ সামলেছেন। তবে বাংলার বুকে বাম শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর যে লড়াই শুরু হয়েছিল সেই লড়াই এক মুহুর্তের জন্যও তিনি থামান নি। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাইয়ের আন্দোলন হোক কিংবা সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম ঘটনা । তিনি বামেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার জন্য সব সময় তৈরি ছিলেন। আর তাঁর মনের অদম্য জোর এবং সংগ্রাম করার ইচ্ছাশক্তির কারণে অবশেষে ২০১১ সালে রাজ্যে চলে আসা ৩৪ বছরের বাম শাসনের যুগ শেষ হয় । পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন
২০০৯ সালেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে গড়ে ওঠা তৃণমূল কংগ্রেস লোকসভা নির্বাচনে দারুণ ভালো ফলাফল করেছিল। পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি লোকসভা আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ১৯ আসনে এককভাবে জয়লাভ করেছিল। আর তৃণমূল কংগ্রেস জোট মোট ২৬ টি আসনে জয়লাভ করে। সেই তুলনায় বামফ্রন্টের লোকসভা আসনের সংখ্যা ছিল ১৫ টি। ২০১৪ সালে পুনরায় তৃণমূল কংগ্রেস এককভাবে পশ্চিমবঙ্গের বুকে ৩৪ টি লোকসভা আসন হাসিল করে।
দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ
সালটা ২০১৬। ২০১১ সালের পর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ২১১ টি আসনে জয়লাভ করেছিল এককভাবে। সেই বারও তিনি পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বারের মুখ্যমন্ত্রী রূপে শপথ পাঠ করেন।
বাংলার তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রী
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ২১৩ টি আসনে জয়লাভ করে তৃণমূল কংগ্রেস। আর খুব স্বাভাবিকভাবে পুনরায় তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিজের হাতেই তুলে নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যের বাইরে তৃণমূলের বিস্তার ঘটানোর বিষয়ে সচেষ্ট। আপাতত নতুন বছর অর্থাৎ ২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। বলে রাখা ভালো , ২০১২ সালের টাইম ম্যাগাজিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে একজন হিসেবে উল্লেখ করে। অন্যদিকে একই বছরে ব্লুমবার্গ মার্কেটস তাকে বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাবশালী ৫০ জন ব্যক্তির তালিকায় রেখেছিল বলে জানা যায়। ২০১৮ তে তিনি স্কচ বর্ষসেরা মুখ্যমন্ত্রীর সম্মান লাভ করেছিলেন।
এখনও পর্যন্ত রাজ্যের মানুষের সুবিধার জন্য তিনি একাধিক জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের শুভ সূচনা করেছেন। দলের তরফ থেকে জনসাধারণের সঙ্গে যত বেশি সম্ভব জনসংযোগ স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালেই তিনি ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ নামক আরও একটি কর্মসূচির ঘোষণা করেন। যেখানে রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে প্রত্যেকটি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাঁর সমস্যার কথা জানার চেষ্টা করবেন দিদি দূতেরা। একজন মহিলা রাজনীতিক হিসেবে রাজ্য রাজনীতি একই রকম ভাবে জাতীয় রাজনীতিতে তিনি যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিত্ব, তা স্বীকার করতেই হয়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম