Usa-Russia: যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া কী যুদ্ধেই জড়িয়ে পড়বে ! কী প্রশ্ন তুলছে ক্রিমিয়া সংকট ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

Usa-Russia: যুক্তরাষ্ট্রকে সবক শেখাবে রাশিয়া, ক্রিমিয়ায় হামলা যুদ্ধ বাঁধালো বলে। যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া ফল ভোগ করতে হবে। হুঁশিয়ারি রাশিয়ার। ক্রিমিয়ায় হামলা চালালো ইউক্রেন, আর রাশিয়া হুমকি দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে! আর আড়াল থেকে নয় কিংবা প্রক্সি যুদ্ধও নয়। আশঙ্কাই কি তবে সত্যি হবে? যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়া এবার সম্মুখ সমরে নামবে না তো? যদি বিশ্বের এই দুই শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে, তাহলে সেটা বিশ্বযুদ্ধের থেকে কম হবে না, তা বলাই বাহুল্য। আর সেটা কাম্য নয়। বহুদিন ধরেই এই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছে বিশ্বের বহু দেশ। এই দুই দেশের মিত্র রাষ্ট্রগুলোও জানে, রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্র এর সরাসরি যুদ্ধ বাঁধলে, তার পরিণামটা সত্যি ভয়ঙ্কর হবে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? যুক্তরাষ্ট্রও কি রাশিয়ার হুমকির মুখে চুপ থাকবে? পাল্টাপাল্টি হুমকির জেরে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ যে কোন মুহূর্তে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। তখন কী হবে?

 

আজ যে রাশিয়া বলছে যুক্তরাষ্ট্রকে পরিনাম ভোগ করতে হবে, সেই পরিণাম শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় বরং রাশিয়া সহ গোটা বিশ্বকে সেই দাম দিতে হবে। আর এই যে ক্রিমিয়ায় হামলা নিয়ে এত কথা, এই অঞ্চল নিয়ে কিন্তু কম জটিলতা নেই। ক্রিমিয়ার উপর নজর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার। ক্রিমিয়াকে রাশিয়া ছিনিয়ে নিয়েছিল। ক্রিমিয়া হবে কার? এই নিয়ে একটা সময় গোটা বিশ্ব ছিল উত্তপ্ত। রীতিমত যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল পরাশক্তিগুলো। আর তাই ক্রিমিয়ায় ঘা লাগা মানে, রাশিয়ার আতেঁ ঘা লাগা। সেটা খুব ভালোভাবেই জানে ওয়াশিংটন। কিন্তু হঠাৎ ইউক্রেন ক্রিমিয়ার হামলা করতে গেল কেন? পুরোটাই কি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোনও ছক? কারণ যে ক্রিমিয়া একসময় রাশিয়া যুদ্ধ করে জিতে নিয়েছিল, সেই ক্রিমিয়া যদি রাশিয়ার হাতছাড়া হয়ে যায়, কিংবা সেই ক্রিমিয়ায় যদি রাশিয়ার ভিত দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে গোটা বিশ্বের কাছে রাশিয়া দুর্বল প্রতিপন্ন হবে।। আর তাই কি যুক্তরাষ্ট্র এখন রাশিয়াকে কোনঠাসা করার অস্ত্র হিসেবে বেছে নিল ক্রিমিয়াকে ? প্রশ্ন তো উঠছে, আর উঠবেও।

 

•যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া, যুদ্ধের মূল অস্ত্র এবার ক্রিমিয়া

বিশ্বে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা লড়াইয়ে আগেই নেমেছে এই দুই শক্তিধর রাষ্ট্র। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে তলানিতে ঠেকেছে সম্পর্ক। রাশিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাভাবিক কথোপকথন এখন লক্ষ্য করাই যায় না। বেশিরভাগ সময়ই একে অপরের সঙ্গে হুমকির সুরে কথা বলে। ক্রিমিয়া উপদ্বীপে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হতেই এবার আরো ক্ষেপল রাশিয়া। হামলায় চারজন নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় রাশিয়া সরাসরি দায়ী করছে যুক্তরাষ্ট্রকে। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এর পরিণাম ভোগ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। শুধু তাই নয়, মস্কোয় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে রাশিয়া। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া বনাম যুক্তরাষ্ট্র। যার ফলে এই দুই শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ যে এখনই থামার নয় তা স্বাভাবিক। ইউক্রেনকে সাপোর্ট করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আগাগোড়া দুষে আসছে রাশিয়া। এবার ক্রিমিয়ার সবথেকে বড় শহর সেভাস্তোপলেতে হামলা চালাতেই রাশিয়া বুঝতে পারছে, এভাবে চলতে থাকলে যুক্তরাষ্ট্র সত্যি সত্যি একদিন ক্রিমিয়া দখল করার চেষ্টা করবে। তাই আগে থেকেই সতর্ক হয়ে গিয়েছে দেশটা। এই হামলাকে বর্বর বলে বর্ণনা করেছে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ। তাঁর মতে, ওয়াশিংটন রাশিয়ার শিশুদের হত্যা করছে। যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশ গ্রহণের ফলে প্রাণ দিতে হচ্ছে রাশিয়ার বেসামরিক নাগরিকদের। যার পরিণাম অবশ্যই ভোগ করতে হবে ওয়াশিংটনকে। কীভাবে তার জবাব দেওয়া হবে, তা সময়ই বলে দেবে। এতদিন যেটা আড়ালে চলছিল, এবার রাশিয়া সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের মুখের ওপর চরম হুমকিটা দিয়েই দিল।

 

২০১৪ সালে এক ইউক্রেনের এই উপদ্বীপ দখল করে নিয়েছিল রাশিয়া। রাশিয়ার তথ্যমতে, ক্রিমিয়ায় হামলার ক্ষেত্রে ইউক্রেন ব্যবহার করেছে অ্যাটাকমস নামক এক ক্ষেপণাস্ত্র। যেখানে ছিল গুচ্ছবোমা। রাশিয়ার দাবি, কিয়েভকে এই ভয়ঙ্কর অস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনকে পশ্চিমা দেশগুলো যে দূরপাল্লার অস্ত্রগুলো দিচ্ছে, তা নিয়ে বারংবার সমালোচনা করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলে দিয়েছেন, যদি রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালানোর জন্য ইউক্রেনকে কোন দূরপাল্লার অস্ত্র দেয়া হয়, তাহলে পশ্চিমা দেশগুলোতে হামলা চালাতে অন্যান্য দেশকে রাশিয়া অস্ত্র দেবে। আসলে কি বলুন তো, এই সব কিছুর মূলে রয়েছে এখন ক্রিমিয়া। যাকে টার্গেট করছে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের মতে, ক্রিমিয়া মানেই তো ইউক্রেন। আর তাই ওই উপদ্বীপটিকে রাশিয়াকে অবশ্যই ছেড়ে যেতে হবে। সেখান থেকে সরিয়ে নিতে হবে সেনাবাহিনী আর সামরিক সরঞ্জাম। আর ক্রিমিয়ার সামরিক স্থাপনায় হামলা করার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে ইউক্রেনের।

 

প্রশ্ন তো এখানেই। তাহলে কি রাশিয়াকে এবার হারাতে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউক্রেনের জোট প্রাণপণ চাইছে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার থেকে ছিনিয়ে নিতে? যে ক্রিমিয়া অধিকার করে রাশিয়া গোটা বিশ্বের কাছে সুনাম আবার কখনো সমালোচনা কুড়িয়েছিল, সেই ক্রিমিয়া যদি রাশিয়ার হাতছাড়া হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু সেটা রাশিয়ার জন্য নেতিবাচকই হবে।

 

* ক্রিমিয়া আসলে কার? রাশিয়া নাকি ইউক্রেনের?

দেখুন ইউক্রেনের অখণ্ডতার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার মধ্যে কিন্তু তর্কবিতর্কের শেষ নেই। যার শুরুটাই হয়েছিল একে অপরকে হুমকি দিয়ে। যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা ছিলেন, তখনও তিনি স্পষ্ট ভাষায়, কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন। আশার আলো দেখা দিয়েছিল, হয়ত ক্রিমিয়া আর ইউক্রেন নিয়ে যে দ্বন্দ্ব চলছে তার সমাধান হবে।। কিন্তু সেই সময় থেকে রাশিয়ার যে অ্যাকশন, যে ভূমিকা, তা শুধু ওই অঞ্চলেই নয়, বিশ্বশক্তি হিসেবে জানান দিচ্ছিল রাশিয়া মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। শীতল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, বিশ্বে একক পরাশক্তি হিসেবে জন্ম হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের ফলে অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছিল রাশিয়ার প্রতিপত্তি। কিন্তু ক্রিমিয়াতে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়া নিজেকে তার আগের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।

 

যখন পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়াকে ইউক্রেন আর ক্রিমিয়ার মধ্যেকার ভাঙনের জন্য দোষারোপ করছে, তখন থেকেই রাশিয়া তক্কে তক্কে ছিল ক্রিমিয়াকে দখল করার জন্য। রাশিয়া খুব ভালোভাবেই জানত, ইউক্রেন আর ক্রিমিয়াতে যদি পশ্চিমা বিশ্বের একটা কর্তৃত্ব সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা হয়ে যায়, তখন কিন্তু রাশিয়ার যে ক্ষমতা সেটা অনেকটা কমে যাবে। আর তাই হয়তো বছরের পর বছর ধরে ক্রিমিয়ার টানাপোড়েন অনেকটা চেনা ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কতবার যে এই অঞ্চলের হাত বদল হয়েছে, তার কোনও ইয়ত্তা নেই। তার উপর পুনরায় ২০১৪ সালে রাশিয়া কর্তৃক ক্রিমিয়া দখলের ঘটনাটা গোটা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তৈরি করেছিল। যা ছিল ১৯৪৫ সালের পর মস্কোর প্রথম সরাসরি রাজ্য বিস্তার। স্বভাবতই, এটি ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকায় তৈরি করে একটা নতুন রুশ ভীতি। পশ্চিমা বিশ্ব কিন্তু এটা মেনে নিতে পারেনি, বরং রাশিয়ার উপর চাপায় কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। যা এখনো পর্যন্ত জারি রয়েছে।

 

ইউক্রেন আর বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্ত হিসেবেই দাবি করে। অপরদিকে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে ‘ক্রিমিয়া প্রজাতন্ত্র’ আর ‘সেভাস্তোপোল’ কে কেন্দ্র শাসিত শহর হিসেবে নিজের প্রশাসনিক কাঠামোতে যোগ করে দেয়। আর সেই কেন্দ্রশাসিত একটা শহরেই এবার হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। স্বাভাবিকভাবে এই বিষয়টা নিয়ে যে বিস্তর জল ঘোলা হবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ রুশদের মতে ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত সরকার অবৈধভাবে ক্রিমিয়াকে রাশিয়া থেকে ইউক্রেনের কাছে নাকি হস্তান্তর করেছিল। যার আগে পর্যন্ত ক্রিমিয়া ছিল রাশিয়ার অন্তর্গত। শুধু তাই নয়, ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক এবং জাতিগত দিক থেকে ক্রিমিয়া রুশভূমি।

 

দেখুন, যদি এখন বলতে শুরু করি এই ক্রিমিয়া কার, রাশিয়ার নাকি ইউক্রেনের? কেনই বা হস্তান্তর হল, কেনই বা এই অঞ্চল নিয়ে এত টানাপোড়েন, তাহলে কিন্তু সেখানে বড় লম্বা কাহিনী রয়েছে। তবে হ্যাঁ, এই ক্রিমিয়া এখন হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার দ্বন্দ্বের নতুন ভূমি। রাশিয়ার হুমকির পাল্টা হিসেবে এবার যুক্তরাষ্ট্র কি বলে, কিংবা ঠিক কি অ্যাকশন নেয় এবার সেটাই দেখার।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version