RP Kalita: ‘সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল’, নীরবতা ভাঙলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল কলিতা

।। প্রথম কলকাতা ।।

RP Kalita: ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনারা আত্মসমর্পণ করেছিল ভারতীয় সেনাদের কাছে। এই মর্মে আজ, শুক্রবার বিজয় দিবস (Vijay Diwas) পালন করছে গোটা দেশ। সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ছিল নানা অনুষ্ঠান। ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও পরিজন মিলিয়ে ৬০ জনের একটি প্রতিনিধি দল। নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের বীরপ্রতীক ও পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির। সেইসঙ্গে হাজির ছিলেন ভারতের তিন বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার শীর্ষ কর্মকর্তারা। আর এদিন এই উপলক্ষে পূর্ব সেনা কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল রানা প্রতাপ কলিতা (RP Kalita) তাওয়াং সেক্টরে হওয়া সংঘর্ষ নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, উত্তর সীমান্ত বরাবর সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেইসঙ্গে ভারতীয় সেনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং জোর দেন যে, তাঁদের ত্যাগ ও বীরত্বের ফলে দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং চিনের পিএল-এর (PLA) বিভিন্ন পয়েন্টে ‘লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ (LAC) সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা রয়েছে। ANI সূত্রে তিনি জানিয়েছেন, আর সেগুলির মধ্যে একটিতে পিএলএ সীমা লঙ্ঘন করেছে। ময়দানে যার দৃঢ় মোকাবিলা করেছে ভারতীয় সৈন্যরা (Indian Forces)। মঙ্গলবার ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Singh) রাজ্যসভায় জানিয়েছেন যে, চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি অরুণাচল প্রদেশ তাওয়াং সেক্টরের ইয়াংৎসে এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করার চেষ্টা করেছে। ভারতীয় সেনা কমান্ডারদের সময় মত হস্তক্ষেপের কারণে চিনা সৈন্যরা তাঁদের অবস্থানে ফিরে গিয়েছে। আমাদের বাহিনী আমাদের আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিজয় দিবসের ৫১ তম বার্ষিকী উপলক্ষে পুষ্প স্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে, সংবাদমাধ্যমকে ভাষণ দেওয়ার সময় লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর পি কলিতা বলেছেন, ‘আমি আনন্দিত যে এটি স্থানীয় পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল। যদিও উভয়পক্ষের সৈন্যদের কিছু ছোটখাটো আঘাত লেগেছিল। সাধারণ জনগণকে এই ঘটনা সম্পর্কে কোনও গুজবে কান দিতে বারণ করব। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের সৈন্যদের শুধুমাত্র সামান্যই আঘাত লেগেছে’।

রিপোর্ট অনুযায়ী পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, স্থানীয় কমান্ডাররা উপস্থিত প্রটোকলগুলি অবলম্বন করে আলোচনা চালিয়ে সমস্যাটি সমাধান করতে সক্ষম হয়েছিল। যার পরে বুমলায় প্রতিনিধি পর্যায়ে একটি ফ্ল্যাগ বৈঠক হয়েছিল। যেখানে সমস্যাটি আরও সমাধান করা হয়েছে। বর্তমানে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল এবং সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘সামরিক লোক হিসেবে আমরা আমাদের জাতিকে রক্ষা করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত। শান্তি বা সংঘাত যাই হোক না কেন, প্রাথমিক কাজ হল বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ হুমকির বিরুদ্ধে দেশের আঞ্চলিক অখন্ডতা নিশ্চিত করা। সমস্ত ঘটনা এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা’।

প্রসঙ্গত, রাজ্যসভায় রাজনাথ সিং স্পষ্ট করে বলেছেন যে, আমাদের পক্ষে কোনও প্রাণহানি বা গুরুতর হতাহতের ঘটনা নেই। তিনি আরও বলেছেন, বিষয়টি হাতাহাতির পর্যায়ে গিয়েছিল। যেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনী সাহসিকতার সঙ্গে পিএলএ-কে আমাদের অঞ্চলে প্রবেশ করতে বাধা দেয় এবং তাঁদের পোস্টে ফিরে যেতে বাধ্য করে। হাতাহাতির কারণে উভয় পক্ষের কয়েকজন কর্মী শুধুমাত্র আহত হয়েছে। আর এদিন বিজয় দিবসের ৫১ তম বার্ষিকী উপলক্ষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে গোটা বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন কলিতা।

পাশাপাশি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ করে কলিতা জানিয়েছেন, ১৯৭১-এর ৬ ডিসেম্বর ভারতই প্রথম বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তাঁর কথায়, উভয় রাষ্ট্রই একটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। আজকের এই বিজয় উৎসব বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতিতে এক আলাদা মাত্রা পেয়েছে। এদিন ফোর্ট উইলিয়ামের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল (Vineet Goyal) থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাহবুবুর রশিদ, ভারতের বিমান বাহিনীর প্রাক্তন প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অরূপ রাহা (Arup Raha) সহ অনেকেই। এদিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের ব্যবস্থা।

এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেছেন কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (Quazi Sazzad Ali Zahir)। বলেছেন, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে একাত্তরের যুদ্ধ করেছি আমি। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসার সময় বেশ কিছু তথ্য নিয়ে এসেছি। দীর্ঘ আলোচনার দরুন ভারতীয় সেনাবাহিনী কে সহায়তা করেছি। যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের আত্মত্যাগ দেখেছি ধীরে ধীরে ভারতীয় সেনাবাহিনী একটি দক্ষ বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। সেইসঙ্গে জনগণের সঙ্গে থেকে তাঁদের কল্যাণেও কাজ করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর একা আলাদাই শ্রদ্ধা রয়েছে’।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version