Old vs New Variants Cake: বিদেশি সুবাসে ফিকে পুরনো কেকের ঐতিহ্য, নতুন স্বাদে মেতেছে বাঙালি

।। প্রথম কলকাতা ।।

Old vs New Variants Cake: একদিকে ঐতিহ্য, অপরদিকে বিদেশি কেকের সুবাস। এই দুই সুবাসে তাল মিলিয়ে চলছে বাঙালি। বড়দিন বলে কথা। মোমের আলো, ক্যারলের সুর আর কেকের ম-ম গন্ধ, সব মিলেমিশে যেন এক অভাবনীয় পরিবেশ তৈরি হয়। বড়দিনের আগে দিন রাতে অফিস ফেরত বাঙালিরা কেকের দোকানে লম্বা লাইনে দাঁড়ান। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে সন্তানের আবদারের পছন্দের কেকটা কিনে তবেই বাড়ি ফেরেন। কলকাতায় সেই পুরনো কেকের ঐতিহ্যের গন্ধ থাকলেও জনপ্রিয়তায় কিছুটা হলেও ছেদ পড়েছে। বরাবরই বাঙালির একটু নতুন জিনিস চেখে দেখার আগ্রহ রয়েছে। সেখানে বাজার যদি নতুন কেক পেস্ট্রিতে ভরে যায় তাহলে পুরনো কেকের হাতছানিকে অনেকেই অস্বীকার করেন। বড়দিন মানে এখন আর সেই মা দিদিমার কুকারে কেক তৈরি নয়, কমবেশি প্রত্যেকের রান্না ঘরেই রয়েছে মাইক্রোওয়েভ। ইউটিউবে সার্চ করলেই হাজির হয়ে যায় নতুন নতুন কেকের রেসিপি। যদি কেক তৈরিতে একটু আলসেমি লাগে কিংবা পদ্ধতি কঠিন লাগে, তাহলেও চিন্তা নেই। স্মার্টফোনে কয়েকবার টাচ করলেই দোরগোড়ায় দিয়ে যাবে মন পছন্দের বাহারি কেক। তার আগে শুধুমাত্র ওয়েবসাইটে সার্চ করে আপনি কোন কেকটি পছন্দ করবেন তা সিলেক্ট করতে হবে।

একটা সময় ছিল যখন বাবা কাকারা সান্তা বুড়োর ছবি আঁকা টিনের কৌটো করে কেক আনতেন। আবার কেউ বা লাল বাক্সে কেক নিয়ে হাসতে হাসতে বাড়ি ঢুকতেন। ছেলেমেয়েরা হুটোপুটি করে ছুটে যেত চকলেট কাগজে মোড়া কেক দেখতে। সে এক অন্য সময়। পুরনো আনন্দের আমেজ এক থাকলেও সময়ের তালে তাল মেলাতে পারেনি পুরনো কেকের সুবাস। মানুষ এখন বাজারে গিয়ে খোঁজে দেখতে সুন্দর, বাজেট কম অথচ সুস্বাদু কেকের হদিশ। কিন্তু বাঙালি মধ্যে ঐতিহ্যের টান বরাবরই একটু বেশি। বড়দিনের এক সপ্তাহ আগে যদি নিউমার্কেটে কেকের গুলিতে যান মনে হবে যেন দুর্গাপুজার লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। লাইনে ঠেলাঠেলি করে তখন আর মাথায় তুলতুলে কেকের কথা মাথায় থাকে না। এখনো পর্যন্ত বড়দিন উপলক্ষে কলকাতা জুড়ে রাস্তার পাশে দেখা যায় প্রচুর অস্থায়ী দোকান। যেখানে লাল হলুদ কাগজে মোড়া থাকে শক্ত কেক। সাধারণত কম বাজেটে জনপ্রিয় এই কেকগুলি বেশ ভালোই বিকোয়।

স্কুল বেলায় স্বল্প খিদে মেটাতে জনপ্রিয় বাপুজি কেকেরও জনপ্রিয়তা একটু কমেছে। একটা সময় ছিল, যখন স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে বড়দিন খুশিতে ভরিয়ে দিত বাপুজি কেক। বাড়িতে যতজন সদস্য তত জনের মাথাপিছু একটি করে বাপুজি কেক নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরতেন কর্তা। এখনকার বাচ্চাদের সামনে বাবুজি কেক দিলে একটু হলেও মুখ ফিরিয়ে নেবে। কারণ এর মোড়কে যে ঝাঁ চকচকে ভাব নেই। তবে স্বীকার করতেই হবে, বাবুজি কেক বাঙালির নস্টালজিয়ার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। বর্তমানে নতুন দোকান কিংবা চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানিতে ঘেরা ক্যাফেগুলোর কাছে পুরনো কেকের দোকানগুলি একটু ফিকে হলেও এখনো পর্যন্ত অনেক দোকান তাদের ঐতিহ্য সমান তালে ধরে রেখেছে।

ঐতিহ্য থেকে উপাদানে, বারে বারে বড়দিনের কেক নিজেকে বদলালেও এখনো সেখানে পুরনো গন্ধ পাওয়া যায়। সাধ্যের মধ্যে ক্রিসমাস কেকের সাবেকি স্বাদ পেতে এখনো মানুষ যান বড়ুয়া বেকারিতে। এখানে খুব একটা দামি কেক পাওয়া যায় না। ছোট ঘরে এখনো বড়ুয়া বেকারি শ্বাস ফেলছে। এখানে বাঙালির আবেগের দাম দিতে অনেক কম টাকাতে সাবেকি স্বাদের কেক পাওয়া যায়। এছাড়া আজও কলকাতার বুকে বুক ভরা গর্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আজমিরি বেকারির মতো সুপ্রাচীন প্রচুর কেকের দোকান। আগে কেকের পাশে এত ক্রিমের আস্তরণ থাকত না। মিষ্টির জন্য ব্যবহার করা হত নানা রকম মধু। এছাড়াও থাকতো বিভিন্ন শুকনো ফল আর বাদাম। যত সময় গিয়েছে ততই আধুনিক যন্ত্রপাতির উন্নতি হয়েছে। যার কারণে বদল এসেছে বেকারিতে। তাল মিলিয়ে পরিবর্তন হয়েছে মানুষের চাহিদা। মানুষের চোখে নিখুঁত গোলাকার কেক আর অসাধারণ দেখতে হলে তবেই তা অভিজাত কেকের চেহারা নেয়। নতুন পুরাতনের মধ্যে যতই ফারাক থাকুক না কেন বড়দিনে ঐতিহ্যবাহী কেক আর আধুনিক কেক মিলেমিশে এক হয়ে যায় বাঙালির কাছে। খুশির উৎসব বলে কথা , এই আনন্দ কানায় কানায় পূর্ণ করে এক টুকরো কেক।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version