Interesting story of Deslai: দেশলাই বাক্সে আগুন জ্বালানোর নিনজা টেকনিক, কীভাবে তৈরি হয় ফ্যাক্টরিতে?

।। প্রথম কলকাতা ।।

Interesting story of Deslai: দাম মাত্র ১ টাকা, হাজারো কাজের মুশকিল আসান ছোট্ট দেশলাই। কঠিন কাজ যার কাছে জল ভাতের মতো। দেশলাই ছাড়া সংসার যে কতটা অচল তা আপনি ভালোভাবেই জানেন। কখনো ভেবে দেখেছেন, এই ছোট্ট দেশলাই যদি না থাকত তাহলে কি হত? যদিও এখন গ্যাস লাইটারের রমরমা। কিন্তু দেশলাইকে টক্কর দেওয়ার মত শক্তি কারোর হয়নি। এই বাজারে দেশলাই এমন জিনিস যার দাম শুনলে আমাদের আশ্চর্য হতে হয়। মানুষের ঘরে ঘরে থাকা এই প্রয়োজনীয় জিনিস কীভাবে তৈরি হয়? কোথা থেকে আসে? কীভাবে কোম্পানিগুলো মাত্র এক টাকার বিনিময়ে দেশলাই দিতে পারে? লস হয় না?

আদিম মানুষ আগুন জ্বালাতো পাথর ঠুকে, আর আপনি আগুন জ্বালান দেশলাইয়ের কাঠি ঘষে। কাগজের বাক্সের গায়ে ছোট্ট কাঠি ঘষলেই আগুন জ্বলে উঠবে। তবে এই আগুন একেবারেই বিপ্পজনক নয়, মুহূর্তের মধ্যেই তা নিভে যায়। এই দেশলাইয়ের আবিষ্কার কে করেছেন, এই নিয়ে বহু বিতর্ক আছে। কারণ নানান বিজ্ঞানীর হাতে হাতে ঘুরে আধুনিক রূপ পেয়েছে দেশলাই। বিজ্ঞানী জন ওয়াকার লক্ষ্য করেছিলেন যে দুটি বস্তুর ঘর্ষণের অনুর গতি বৃদ্ধি করলেই তাপ উৎপন্ন হয়। এই ভাবনা থেকেই তিনি কাঠির মাথায় ব্যবহার করেন আন্টিমনি সালফাইড আর পটাশিয়াম ক্লোরেট। এইভাবে প্রথম নিরাপদ দেশলাই আবিষ্কৃত হয়। তারপরে বাজারে দেশলাই আসতে সময় লেগে গিয়েছে প্রায় আরো কুড়ি পঁচিশ বছর। আগুন জ্বালানোর সহজ পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে মাত্র ১৫০ থেকে ১৬০ বছর আগে।

কীভাবে ঘষা লাগলেই আগুন ধরে ওঠে?

দেশলাই বাক্সের পাশে বাদামী রঙের একটি অমসৃণ পৃষ্ঠ থাকে, সেখানে কাঠি ঘষলেই আগুন ধরে। এখানেই লুকিয়ে রয়েছে বিজ্ঞান, আসলে কয়েকটি রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হলেই তবেই এমন সম্ভব। দেশলাই বাক্সের দুদিকে লোহিত ফসফরাসের সঙ্গে সূক্ষ্ম কাচের গুঁড়ো মিশিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। অপরদিকে কাঠির মাথায় থাকে বেশ কিছু যৌগ। যার মধ্যে অন্যতম পটাশিয়াম ক্লোরেট যা ফসফরাসের সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় তাপে ভেঙে গিয়ে প্রচুর অক্সিজেন তৈরি করে এবং আগুন জ্বালাতে সাহায্য করে। এই আগুন একদম ক্ষণস্থায়ী। তাই আগুন কিছুটা সময়ের জন্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় অ্যান্টিমনি ট্রাই সালফাইড। কাঠির আগুন যাতে নিয়ন্ত্রিতভাবে জ্বলতে পারে তাই কাঠির গায়ে ব্যবহার করা হয় মোমের প্রলেপ। পাশাপাশি তা নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রথমে কাঠি গুলিকে অ্যামোনিয়াম ফসফেটে ভেজানো হয়। সর্বপ্রথম দেশলাই উৎপাদনের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল উত্তর ইউরোপের সুইডেন। ভারতে প্রথম সুইডেন আর ভিয়েনা থেকে প্রথম যুগে দেশলাই রপ্তানি হত। আর সেই দেশলাই কলকাতার অলিতে গলিতে ফেরি করতেন বিশেষ ফেরিওয়ালা, তাদের পরনে থাকত জমকালো মুখমলের মেরজাই, মাথায় সোনালি সুতোর কাজ করা ঝকমকে টুপি। সেই সাজ এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে চৈত্র মাসে সংরা দেবদেবীর সাজের পাশাপাশি এই দেশলাইওয়ালা সাজতেন।

ফ্যাক্টরিতে কীভাবে দেশলাই তৈরি হয়?

প্রথমে গাছের গুড়ি ছোট ছোট করে টুকরো করে কেটে নেওয়া হয়। কাঠের টুকরের বাইরের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলে দিয়ে শুধুমাত্র ভিতরের অংশটি নেওয়া হয়। সেই কাঠের টুকরো গুলি মেশিনে দিলে অপর প্রান্ত থেকে বেরিয়ে আসে বিশাল পাতার মতো পাতলা অংশ। মনে হবে যেন কাঠের শাড়ি বেরিয়ে আসছে। সেগুলি এতটাই বড় হয়, না অন্তত দুইজন মানুষ কাঁধে করে নিয়ে অপর প্রান্তে গিয়ে রেখে দেন। শাড়ির মতো ওই কাঠের টুকরোগুলিকে আয়তাকার ক্ষেত্রে কয়েকটি অংশে কেটে নেওয়া হয়। তারপর ভালোভাবে মেশিনের সেট করে কাটিং করতেই বেরিয়ে আসে অসংখ্য ছোট ছোট দেশলাইয়ের কাঠি। সেগুলি গামলায় ভরে এক জায়গায় পাহাড়ের মত জড়ো করা হয়। ভালোভাবে পাতলা করে রৌদ্রে বিছিয়ে কিছুক্ষণের জন্য রেখে দেওয়ার পর আবার নিয়ে আসা হয় মেশিনে। কাঠি গুলি পরপর অসংখ্য ছিদ্রের মধ্যে গেঁথে দেওয়া হয়। মেশিনের মাধ্যমে কাঠি মাথায় লাগিয়ে দেওয়া হয় লিকুইড কেমিক্যাল। সব কাজই হয় মেশিনের মাধ্যমে। অপরদিকে রেডি থাকে দেশলাইয়ের বাক্স। কাঠি গুলি সমান সংখ্যকভাবে বাক্সে প্যাকিং হয়ে যায়। বাক্সবন্দির পর কয়েকজন কর্মী সেগুলি গুছিয়ে বড় বড় প্যাকেটে ভরে ফেলেন।

বিষয়টা আমরা যতটা সহজ ভাবি ততটা নয়। এক তুরিতে দেশলাই কাঠিতে আগুন জ্বলে ওঠলেও, পুরো প্রক্রিয়া এক তুরিতে হয় না। চোখের পলকের আড়ালে রয়েছে প্রচুর স্টেপ। সাধারণত দেশলাইয়ের কাঠি তৈরি হয় গেওয়া গাছ থেকে। এছাড়াও বিদেশে পাইন গাছ থেকে দেশলাইয়ের কাঠি তৈরি হয়ে থাকে। সাম্প্রতিককালে খরচ বাঁচাতে কাঠের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় শক্ত কাগজ। মাত্র এক টুকরো কাঠ থেকে লক্ষ লক্ষ দেশলাইয়ের কাঠি বানানো যায়। তাই হয়তো এখনো পর্যন্ত দেশলাইয়ের দামে আগুন লাগেনি।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version