টাকা জমিয়ে গ্রামে শৌচালয় বানিয়েছিল ছোট মেয়েটি, কীভাবে হলেন প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারতের মুখ ?

।। প্রথম কলকাতা ।।

পুজোর হাত খরচ জমিয়ে আদিবাসী গ্রামে শৌচালয় বানিয়েছিল ছোট মেয়েটা। মোবাইলের বায়না নয় ভাঁড়ের সব জমানো টাকা তুলে দিয়েছিল জেলাশাসককে। সেই থেকেই সমাজ সেবা শুরু। ছোট মেয়ের কাণ্ড দেখে অবাক বাবা মা। একে একে তৈরি হয়েছে ১০ টি শৌচালয়। আদিবাসী গ্রামে শিক্ষার আলো ঢুকছে। এই মেয়ের কাজে মুগ্ধ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। এরকম কজন ভাবতে পারে বলুন তো? জামশেদপুরের এই মেয়ের জীবনের গল্প আপনাকে অনুপ্রাণীত করবেই। জামশেদপুরের টেলকো এলাকায় বাড়ি মন্দ্রিতাদের। বাবা অমিত বেসরকারি সংস্থার উঁচু পদেই কর্মরত। মা স্মৃতি স্থানীয় স্কুলের শিক্ষিকা।

২০১৬ সাল মন্দ্রিতা তখন ক্লাস সিক্সের ছাত্রী হঠাৎ বাবা দেখেন মেয়ের হাত খরচের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। কখনো ১০০ টাকা চাইছে কখনো ৫০০। সন্দেহ হতে থাকে মন্দ্রিতার বাবা মায়ের। লক্ষ্মীর ভাঁড়ে ১০, ২০, ১০০, ৫০০ নোট মিলিয়ে ২৪ হাজার টাকা জমে। বাবা মা ভেবেছিল মেয়ের বড় কোনো আবদার হবে কিন্তু না! ওই টাকা দিয়ে মেয়ের ইচ্ছের কথা শুনে হকচকিয়ে গিয়েছিল মন্দ্রিতার পরিবার। জমানো সব টাকা মন্দ্রিতা তুলে দেয় বাবার হাতে। আর বলে তাদের স্কুলে শৌচাগার নেই বলে কত মেয়ে স্কুল ছেড়ে দিয়েছে। স্বচ্ছ ভারত অভিযান-এর কথা শুনেছে তাই টাকা জমাচ্ছে ওই টাকায় যেন গ্রামে কারও শৌচাগার হয়। জামশেদপুরের টেলকো হিলটপ স্কুলের ছাত্রী তখন মন্দ্রিতা চট্টোপাধ্যায়। মেয়ের ইচ্ছার কথা শুনে বাবা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। এতো ছোট মেয়ের মাথায় এরকম ভাবনা এল কোথা থেকে?

তখন সবে স্বচ্ছ ভারত অভিযান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার বাবা ল্যাপটপে কাজ করতে করতে খবর শুনতেন তখনই মন্দ্রিতা জানতে পারে এরকম শৌচালয় বানানোর কাজ সরকার করছে। মেয়ের ইচ্ছেতে না বলতে পারেননি বাবা চেক নিয়ে তৎকালীন জেলাশাসক অমিত কুমারের সঙ্গে দেখা করেন। ছোট মেয়ের ইচ্ছার কথা সব শুনে উপস্থিত সব সরকারি আধিকারিক তখন অবাক। সরাসরি এ ভাবে কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ করার মতো কোনও প্রকল্প তো নেই কিন্তু তার ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিতে এগিয়ে আসেন তৎকালীন জেলাশাসক। টেলকো কলোনি লাগোয়া আদিবাসী গ্রামে তৈরি হয় দুটি শৌচাগার।

এখন মন্দ্রিতা অনেক বড়। জামশেদপুরে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে কাজ করছে মন্দ্রিতা।
এলাকায় শৌচাগার তৈরি, পরিচ্ছন্নতার প্রচার করছে মন্দ্রিতা। সমানতালে চলছে আইএস হওয়ার প্রস্তুতি। এখন বাবা অমিত ও মা স্মৃতি নিজেদের রোজগারের বড় অংশ সরিয়ে রাখেন মেয়ের কাজের জন্য। এমনকি মন্দিতা আইএস হতে চায় নিজের জন্য নয়। সমাজের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। কারণ এখন মন্দ্রিতা হয়ে যে কাজ করছেন আইএএস হয়ে মন্দ্রিতা এই রকম কাজ আরো অনেক করতে পারবে। বাবা মা সব সময় চেয়েছেন মেয়ে ভাল মানুষ হোক। মানুষের জন্য কাজ করার তাগিদটা মন থেকে আসা দরকার। জোর করে চাপিয়ে দিলে সেবা মূলক কাজ করা যায় না। মন্দ্রিতার ও মনে সেই ইচ্ছেটাই তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version