Swami Vivekanand: জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই ছিল স্বামীজিরও! দুঃখ-বেকারত্ব গ্রাস করেছিল নরেনকে

।। প্রথম কলকাতা ।।

Swami Vivekanand: শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন ‘নরেন জগৎ মাতাবে’। রামকৃষ্ণের বাণী একেবারেই মিথ্যা ছিল না। সত্যিই পরবর্তীতে বিশ্বময় নরেনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পেয়েছিল। এই মহামানব যিনি পরবর্তীতে স্বামী বিবেকানন্দ হিসেবে পরিচিত হন, ১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কলকাতার বুকে। ১৮৯৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তাঁর ধর্ম মহাসভায় দেওয়া বক্তৃতা করতালির ধ্বনিতে সম্মানিত হয়েছিল। তাঁর চিন্তাভাবনা এবং তাঁর জীবন বর্তমান যুগে মানুষের ভবিষ্যতের পথে এগোনোর আদর্শ। অথচ ভাবতেই অবাক লাগে যে এই বিশ্বজয়ী মানুষটিও একদিন জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার লড়াইয়ে অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন কাটিয়েছেন।

যিনি নিজের জীবনের উপলব্ধি দিয়ে গোটা বিশ্বকে এগিয়ে যাবার পথ দেখিয়েছেন তিনি একসময় নিজের চোখের সামনে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাননি। বছর একুশের নরেন তখন জাতির কাছে স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে ওঠেননি। সেই সময় তিনি মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের বড় ছেলে। যার কাঁধে মা এবং ভাইবোনেদের দায়িত্ব। প্রয়োজন টাকার। তাই বিএল পড়া থামিয়ে দিয়ে তিনি তিলোত্তমার পথে পথে একটা চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে শুরু করলেন। এই ঘটনা তাঁর বাবার মৃত্যুর পরের। বিশ্বনাথ দত্তের মৃত্যু গোটা দত্ত পরিবারকে রূঢ় বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিল।

নরেন্দ্রনাথের পিতৃবিয়োগের পর সমস্ত ছবিতে বদল আসল। উত্তর কলকাতায় তাদের সিমলা অঞ্চলে যে বাড়িটি ছিল সেটা নিয়ে আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে গোলযোগ বাঁধে। সেই সময় নরেন্দ্রনাথের পরিবার ঋণে জর্জরিত। রোজগার করার মানুষ বলতে একা নরেন। কাজেই বাধ্য হয়ে পড়াশোনা মাঝ পথে থামিয়ে চাকরির খোঁজে বের হতে হল তাকে। সেই সময় অবশ্য তিনি বিবেকানন্দ নন। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে তখন কলকাতার বাজারে একটা চাকরি জোগাড় করা কোন অসাধ্য সাধনের থেকে কম কিছু ছিল না। বহু অফিসে তিনি আবেদনপত্র জমা দিচ্ছেন, আর খালি হাতে ফিরে আসছেন। তবে ১৮৮৪ সালে একটা চাকরি জোগাড় করতে পারলেন তিনি।

মহেন্দ্রনাথ গুপ্তর চেষ্টায় সুকিয়া স্ট্রিটের মেট্রোপলিটন স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেলেন নরেন্দ্রনাথ। সেই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন খোদ বিদ্যার সাগর ঈশ্বরচন্দ্র। কিন্তু সেই সময় তিনি অসুস্থ। কাজেই স্কুল দেখাশোনার কাজে তেমন থাকতে পারতেন না। স্কুলের সেক্রেটারি ছিলেন বিদ্যাসাগরের জামাই। স্কুলে তাঁরই প্রতিপত্তি বরং কিছুটা বেশি ছিল। সকলেই তাকে সমঝে চলবে, এমনটাই চাইতেন তিনি। নরেন সেই স্কুলে চাকরি পাওয়ার পর সেক্রেটারির সঙ্গে খুব একটা জমলো না। কাজেই খুব তাড়াতাড়ি চাকরি থেকে বিদায় নিতে হল নরেন্দ্রনাথকে।

যদিও এই চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিভিন্ন মতামত প্রচলিত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, নরেনের উপর চাপ সৃষ্টি করায় তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। আবার অনেকেই বলেন ছাত্রদের দিয়ে বিদ্যাসাগরের কাছে ভুয়ো খবর পাঠানো হয়েছিল। জানানো হয়েছিল যে, নতুন মাস্টার পড়াতে পারেন না। সেই সময় বিদ্যাসাগর নিজেই অসুস্থ ছিলেন। তাই আসল বিষয়টি কী তা খতিয়ে দেখার মত সুযোগ পাননি। খোঁজখবর না নিয়েই তিনি অভিযোগের ভিত্তিতে বলেন, ‘নরেন কে বল, আর যেন না আসে’। চাকরি খোয়ানোর পর ফের বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন নরেন । আবারও তাকে ঘুরতে হয় কলকাতার রাস্তায় রাস্তায়। দারিদ্র্য, বেকারত্ব আসলে যে কী জিনিস সেটা চাক্ষুষ উপলব্ধি করেছিলেন আজকের স্বামী বিবেকানন্দ তথা সেই দিনের নরেন্দ্রনাথ।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version