স্পেসশ্যুটই রক্ষাকবচ, ফুটবে না রক্ত! মহাকাশে মহাকাশচারীর মৃত্যু ? নাসার প্রোটোকল মারাত্মক

।। প্রথম কলকাতা ।।

মহাকাশে মহাকাশচারীর মৃত্যু হলে তাঁর মৃতদেহের সঙ্গে কী করা হয়? কী ভাবেই বা শেষকৃত্য? না, মন গড়া কাহিনী নয়। নাসার প্রোটোকল কী বলছে? আদৌ কী বছরের পর বছর ধরে মহাকাশেই দেহ সংরক্ষণ করা যায়? স্পেসস্যুটই রক্ষাকবচ, নাহলে মহাকাশে ফুটবে শরীরের রক্ত। বেঁচে থাকাই কঠিন। মহাকাশ অভিযান মানেই বড় রিস্ক ফ্যাক্টর। মহাকাশচারীদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে অভিযানে পাঠানো মানেই সেখানে পদে পদে বিপদ। সেক্ষেত্রে যদি কোনও মহাকাশচারী মহাকাশে মারা যান তা হলে তাঁর জন্য নাসার নিয়ম কী বলছে? নাসার প্রোটোকল অনুযায়ী, যদি পৃথিবীর নিম্নকক্ষে, মানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের আশেপাশে মৃত্যু হলে, তা হলে তাঁর সঙ্গীরা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একটা ক্যাপসুলে সেই মৃতদেহ পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। যদি চাঁদে কোনও মহাকাশচারীর মৃত্যু হয়, তা হলে মাসখানেকের মধ্যেই বাকি মহাকাশচারীরা তাঁর দেহ পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে পারেন।

ইমোশনাল নয়, বরং বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করা হয় বিষয়টাকে। নাসার নিয়ম অনুযায়ী, মৃতদেহ সংরক্ষণ নাসার প্রধান উদ্বেগ নয়। বরং বাকি মহাকাশচারীরা নিরাপদে ফিরছেন কি না, সেই বিষয়টিই প্রায়োরিটি পায় তাদের কাছে। অন্য দিকে, ৪৮০ কোটি কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে যদি কোনও মহাকাশচারী মঙ্গল গ্রহ অভিযানে গিয়ে মারা যান তা হলে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। সেই দেহ ফিরবে তখনই যখন দলের বাকি সদস্যরা পৃথিবীতে ফিরবেন। অর্থাৎ, মৃতদেহটি ফিরতে সময় লাগতে পারে বেশ কয়েক বছর। তত দিন পর্যন্ত মহাকাশে বিশেষ ভাবে সেই দেহটিকে সংরক্ষিত করা যেতে পারে, বলছে নাসার প্রোটোকল।

কিভাবে করা হয় দেহ সংরক্ষণের কাজ?

মহাকাশযানের ভেতরে স্থির তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা দেহটিকে বহু দিন পর্যন্ত পচনের হাত থেকে রক্ষা করবে।মাথায় রাখতে হবে, এই সব নিয়ম তখনই প্রযোজ্য হবে যখন, কোনও মহাকাশচারী মহাকাশের মধ্যে স্বাভাবিক কারণে মারা যাবেন, স্পেস স্টেশন বা মহাকাশযানের ভেতরে। কিন্তু মহাকাশের জন্য তৈরি উপযুক্ত পোশাক মানে, ‘স্পেসস্যুট’ না পরার কারণে যদি কারোর মৃত্যু হয়, তা হলে? সে ক্ষেত্রে বিপদটা কিন্তু ঘটে যাবে প্রথমেই। ‘স্পেসস্যুট’ না পরে মহাকাশে পা দিলে মহাকাশচারী প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মারা যাবেন। কেন? মহাশূন্যে চাপ কমে যাওয়ার জন্য এবং অক্সিজেনের অনুপস্থিতির জন্য মহাকাশচারীর পক্ষে শ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। সুতরাং ফলাফলটি খোলা জায়গায় এক্সপোজারের মতোই হবে, শ্বাসরোধ এবং ফুটন্ত রক্ত। হ্যাঁ, ফুটতে থাকবে শরীরের রক্ত সহ শরীরের অন্যান্য তরল। কোনও মহাকাশচারী যদি ‘স্পেসস্যুট’ ছাড়াই চাঁদে বা মঙ্গলে পা দেন, সে ক্ষেত্রেও পরিণতি হবে একই।

চাঁদে প্রায় বায়ু নেই বললেই চলে। যা আছে, তাও খুব সামান্য পরিমাণ। অন্য দিকে, মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল খুবই পাতলা। প্রায় কোনও অক্সিজেন নেই। ফলে দু’ক্ষেত্রেই নিশ্বাস নিতে না পেরে এবং রক্ত ফুটে মৃত্যু হওয়ার চান্স থাকে মহাকাশচারীর। তখন কি করা হয় মৃত দেহের সঙ্গে?চাঁদ বা মঙ্গলপৃষ্ঠে কোনও মহাকাশচারীর মৃত্যু হলে তাঁকে পোড়ানো বা কবর দেওয়া যাবে না। কারণ, চাঁদ বা মঙ্গলে দেহ পোড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণ শক্তি এবং জ্বালানির প্রয়োজন। কিন্তু মহাকাশচারীদের কাছে সীমিত জ্বালানি থাকার কারণে তা সম্ভব নয়। কারণ, বেঁচে থাকা ক্রুদের অন্যান্য উদ্দেশ্যেও ওই জ্বালানি প্রয়োজন হয়। আবার মৃতদেহে থাকা ব্যাকটেরিয়া বা অনুজীব চাঁদ বা মঙ্গলের মাটি নষ্ট করতে পারে ভেবে, কবরও দেওয়া যাবে না। এর ফলে মৃত মহাকাশচারীর দলের বাকি সদস্যরা পৃথিবীতে ফিরে না আসা পর্যন্ত একটি বিশেষ ব্যাগে দেহটিকে সংরক্ষণ করা হবে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময় বেশ কয়েক বার মহাকাশযানগুলো দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃত্যু হয় মহাকাশচারীদের। যেমনটা হয়েছিল, ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি। মৃত্যু হয়েছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকার মহাকাশচারী এবং মহাকাশযান বিশেষজ্ঞ কল্পনা চাওলার। কিন্তু তারপরেও নাসা বা ইসরোর অপারেশন থেমে থাকে নি। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ২০২৫ সালে চাঁদে একটি ক্রু এবং পরের দশকে মঙ্গলগ্রহে নভোচারী পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। বাণিজ্যিক স্পেসফ্লাইটও দিনদিন নিয়মিত হয়ে উঠছে। মহাকাশ ভ্রমণ সাধারণ হয়ে ওঠার সাথে সাথে সেখানে যাওয়ার পথে মানুষ মারা যাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাচ্ছে। আর তাই মহাকাশচারীর মৃত্যুর পর কি হবে বা হবেনা তা নিয়ে জোর চর্চা চলছে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version