।। প্রথম কলকাতা ।।
সিকিমের লোনক হ্রদে ৩০ বছর ধরে কী জমে ছিল? ১০ তলার বাড়ির সমান গভীর লোনক হ্রদ আসলেই ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল আগেই তারপরও কি ঘটে গেল? আর কি কোনওদিনও নর্থ সিকিম যাওয়া সম্ভব?
সিকিমের রাস্তা কি এবার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল? বিপজ্জনক হ্রদের তালিকায় ছিল দক্ষিণ লোনক কেন জানেন? এই হ্রদে এমন কী আছে যা ভাসিয়ে দিতে পারে গোটা সিকিম রাজ্যটাকেই?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন আসলে এই হ্রদ আর টাইম বোমার মধ্যে বিশেষ পার্থর্ক্য নেই। লোনক হ্রদ ফেটে সিকিমে যে দুর্যোগ নেমে এসেছে তার নেপথ্যে ‘গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড’ (GLOF) রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেটা আবার কি ভাবছেন তো? এর মানে হিমবাহ গলতে থাকায় হ্রদে বিপজ্জনক ভাবে জলের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ফলে হ্রদের দেওয়ালে ক্রমশ চাপ বাড়তে থাকে, সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে হ্রদ ফেটে যায় কিন্তু এমনটা যে হতে পারে সেটা বারবার জানানো হয়েছিল আগাম সতর্কতাও দেওয়া হয়েছিল বিভিন্নভাবে। জিএলওএফ হয় তখনই যখন হিমবাহ গলা জল জমে সৃষ্ট হ্রদগুলি। অতিরিক্ত জল জমার কারণে বা ভূমিকম্পের মতো কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ফেটে যায়।
একটু বিস্তারিতভাবে বললে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট এই সংস্থাটি উপগ্রহচিত্রের মাধ্যমে পুরো সিকিমে ৩২০টি হিমবাহ হ্রদের সন্ধান পেয়েছে। যেগুলির মধ্যে ১৪টি বিপজ্জনক বলে জানিয়েছিল তারা। আর সেই বিপজ্জনক হ্রদের তালিকায় ছিল দক্ষিণ লোনক হ্রদও। লোনক হ্রদ লোনক হিমবাহ সৃষ্ট। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৭,১০০ ফুট উপরে লোনক হিমবাহটি রয়েছে। ২৬০ ফুট গভীর, প্রায় ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য আধ কিলোমিটার চওড়া এই হিমবাহটি লোনক হ্রদও ১৬৮ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই হ্রদের আয়তন এবং গভীরতা দ্রুত বাড়ছিল যা রীতিমত চিন্তা ধরিয়ে দেয় বিজ্ঞানীদের। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোও জারি করেছিল সাবধানবাণী। বিশেষজ্ঞদের একাংশ এটাও বলছেন হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ হলেও এতে জল বেশি ছিল না কিন্তু গত পাঁচ দশকে এই হ্রদের গভীরতা দ্রুত বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে জলস্তরও।
বর্তমানে এই হ্রদের গভীরতা ১০ তলা বাড়ির সমান, দৈর্ঘ্যে আড়াই কিলোমিটার এবং প্রস্থে ৬০০ মিটার। হ্রদের এই দ্রুত পরিবর্তনে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মেঘভাঙা বৃষ্টি হলে মহাবিপদ নেমে আসবে সিকিমে। একেবারে অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল সেই কথা যারা এখন নর্থ সিকিমে আটকে পড়েছেন সেসব পর্যটকেরা জানেনই না কীভাবে তারা ফিরবেন। চুংথাংয়ের অবস্থা মারাত্মক খারাপ। এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী লাচেন, লাচুং এবং চুংথাং এলাকা থেকে ১,৪৭১ জন পর্যটককে উদ্ধার করেছে জানা যাচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী খাদ্য, চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে উত্তর সিকিমে আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিক ও পর্যটকদের। সিকিম আবার কবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে এই উত্তর কেউ জানে না।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম