কামানের তোপধ্বনি দিয়ে শুরু হয় সন্ধিপুজো! বাঁকুড়ার মালিয়াড়া রাজবাড়ীর ঐতিহ্যময় দুর্গা পুজো

।। প্রথম কলকাতা ।।

কামানের তোপধ্বনি দিয়ে শুরু হয় সন্ধিপুজো, রাজবাড়ীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ইতিহাস! এক অনন্য উৎসবে মেতে ওঠে গোটা গ্রাম। বাঁকুড়ার মালিয়াড়া রাজবাড়ীর ইতিহাস আজও কথা বলে। শ্যাওলা পড়া দেওয়াল, নোনা লেগে যাওয়া ইট, চারপাশে আগাছার জঙ্গলে ঘেরা বাড়ি। আর তারই মাঝে কয়েকটি থামবিশিষ্ট ঠাকুর দালান৷ ঠাকুরদালান জুড়ে যেন কথা বলে উঠছে অতীত। নোনা ধরে যাওয়া ইটের পরতে পরতে জড়িয়ে ইতিহাস, ঐতিহ্য আর প্রায় ৫০০ বছর ধরে চলে আসা পুজোর গন্ধ।

দেওধর চন্দ্রাধুর্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজবাড়ির ঠাকুর দালান৷ দিল্লির মসনদে তখন মোঘল সম্রাট আকবরের রাজত্ব। কথিত আছে আকবরের মন্ত্রী মানসিং এর আদেশ নিয়ে, উত্তরপ্রদেশের কনৌজ থেকে বাংলায় আসেন দেওধর চন্দ্রাধুর্য্য। তারপরই রাজত্ব শুরু করেন বাঁকুড়ার মালিয়াড়ার এই চন্দ্রাধুর্য পরিবার। পুজোও শুরু হয় তখন থেকে। বংশ পরম্পরায় একের পর এক রাজা রাজত্ব করেন৷ বাঁকুড়ার মালিয়াড়া গ্রামের রাজার রাজত্ব একসময় বিস্তৃত ছিল উত্তরে দামোদর নদ থেকে দক্ষিনে শালী নদী পর্যন্ত। বিস্তৃত এই এলাকা থেকে সংগৃহীত রাজস্বে উপচে পড়ত রাজকোষ। আভিজাত্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজবাড়িতে ধুমধাম করে পুজো হত দেবী দুর্গার।

এখন সেই রাজাও নেই, রাজত্বও নেই। সে সব এখন অতীত। তবু রীতিনীতি, শাস্ত্রবিধি মেনে এই রাজবাড়িতে পুজো অব্যাহত। রাজ ঐতিহ্য বজায় রেখে সন্ধিপুজোয় আজও হয় তোপধ্বনি। ৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো বাঁকুড়ার মালিয়াড়া রাজবাড়ির পুজো যেন এক আশ্চর্য মিলনমেলা। প্রতিদিন আশেপাশের গ্রামের মানুষজন রাজবাড়িতে পাত পেড়ে খান অন্ন ভোগ।

ঐতিহ্য আর পরম্পরা মেনে মহালয়ার পরদিন প্রতিপদ থেকেই শুরু হয় দেবীর আরাধনা। ওইদিন রাজবাড়ির মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে অষ্টধাতুর তৈরী সিংহবাহিনী দেবী দুর্গাকে নাট মন্দিরের সামনের মণ্ডপে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই টানা ৯ দিন মায়ের পূজার্চনা চলে। বৈষ্ণব মতে পুজো হওয়ার কারণে এখানে চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হয়‌ একটা সময় কামানের তোপধ্বনি দিয়ে শুরু হত সন্ধিপুজো। এখনও সেই নিয়ম প্রচলিত আছে। সেই শব্দ কানে গেলে তবেই আশপাশের গ্রামে শুরু হয় সন্ধিপুজো।কালের নিয়মে হারিয়ে গেছে রাজত্ব। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় রাজপরিবারের সদস্যরা।সেই বৈভব আর নেই ঠিকই, কিন্তু নিয়ম-নিষ্ঠা ভক্তি দিয়েই মায়ের পুজো করে চলেছেন তাঁরা।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version