Tapioca and Sago: সাবু নাকি ট্যাপিওকা? কোনটা খাচ্ছেন? গুলিয়ে ফেলছেন না তো?

।। প্রথম কলকাতা ।।

Tapioca and Sago: মুক্তোর মত ঝলমলে গোল গোল সাবুদানা। বাচ্চা থেকে বুড়ো, সবার প্রিয়। এই সাবু তৈরি নিয়েই রয়েছে নানান রহস্য। সাবু গাছের ফল, কাণ্ড নাকি মূল থেকে আসে? সহজপাচ্য শর্করা জাতীয় সাবুর নির্দিষ্ট কোন স্বাদ নেই, অথচ যার সাথে যোগ করা হয় তার স্বাদ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। আইসক্রিম, পুডিং, চা, কফি, শরবত থেকে শুরু করে নানান মিষ্টিতে, সব জায়গাতেই সাবুর ছড়াছড়ি। বাজারে বিভিন্ন ধরনের সাবু পাওয়া যায়। আসল নকল গুলিয়ে ফেলছেন না তো? সাবু তৈরির পদ্ধতি জানলে কিছুটা অবাক হবেন।

বাচ্চাদের অত্যন্ত প্রিয় একটি খাবার হল সাবু। সাবুর আবার অনেক নাম। মুক্তসাগু, তালসাগু আবার অনেকে শুধু সাবুদানা বলেন। বহু মানুষের ধারণা রয়েছে সাবু গাছের ফল থেকে তৈরি হয়। আবার অনেকে মনে করেন বড় বড় ফ্যাক্টরিতে ময়দা কিংবা আটা দিয়ে তৈরি হয়। মুক্তোর মত ঝলমলে বলে সাবুদানাকে ইংরেজিতে বলে Sago pearls । প্রযুক্তির দৌলতে লাল নীল সবুজসহ হরেক রকমের সাবুদানা বাজারে পাবেন। তবে এর মধ্যে কোনটা আসল কোনটা নকল বোঝা বেশ শক্ত।

সাবু তৈরির পদ্ধতি নিয়ে কম বিতর্ক নেই। সাবু মূলত দুই ভাবে তৈরি হয়। উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে জনপ্রিয় পাম গাছ হল মেট্রোক্সিলন সাগু। মেট্রো কথাটি এসেছে গ্রীক শব্দ থেকে, যার অর্থ বৃক্ষ অভ্যন্তরের নরম অংশ। এই গাছের নরম কাণ্ড থেকে নিষ্কাশিত নির্যাস হল সাবু। তবে পাম গাছের কাণ্ডের ভিতর থেকে ওরকম গোল দানা দানা সাবু পাওয়া যায় না। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অঞ্চলগুলিতে এই গাছের ছড়াছড়ি। সেই তালিকায় রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, নিউগিনি, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সুমাত্রা প্রভৃতি। এই গাছ সারা জীবনে একবার মাত্র ফুল দেয়, আর ফুল ধরা মানেই গাছের মৃত্যু। ৭ থেকে ১৫ বছর বয়সে যখন সাগু গাছে ফুল ধরার সময় হয় তখনই গাছ কেটে কাণ্ড চিড়ে ভিতর থেকে বের করে নেওয়া হয় নরম ‘পিথ’ । সেই অংশ জলে ভিজিয়ে রাখলে ভিতরে থাকা স্টার্চ জমা হয় জলের নিচে। জল থেকে আলাদা করে স্টার্চকে শুকিয়ে নিলে তৈরি হয় সাবুর ময়দা। সেই ময়দা চলে যায় বড় বড় ফ্যাক্টরির মেশিনে। সেখান থেকে ছোট ছোট দানা আকারে বেরিয়ে আসে আমাদের চির পরিচিত সাবুদানা।

এই সাবুর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে ট্যাপিওকা। ট্যাপিওকা আর সাবু পাশাপাশি রাখলে ধরতে পারবেন না দুটি আলাদা। বহু বিতর্কের পর ট্যাপিওকা এবং সাবু দুটোকেই আমরা সাবুদানা হিসেবে চিনি। সাবু এবং ট্যাপিওকার স্টার্চ প্রকৃতিগত ভাবে একরকম দেখতে এবং স্বাদও একই। রান্না পদ্ধতিও এক, কিন্তু পার্থক্য রয়েছে তৈরিতে। দুটি আসে ভিন্ন গাছ থেকে। এছাড়াও রান্নার পর সাবুদানা গুলি বেশ ঝরঝরে থাকে কিন্তু ট্যাপিওকার দানা একটু জড়িয়ে যায়। ট্যাপিওকা পাওয়া যায় কাসাভা গাছের মূল থেকে। এর বিভিন্ন আঞ্চলিক নাম রয়েছে কোথাও বা বলা হয় শিমুল আলু, আবার কোথাও বলা হয় ঠান্ডা আলু। কাসাভা অনেকটা মিষ্টি আলুর মত। এই গাছ প্রচণ্ড খরায় টিকে থাকতে পারে, তবে এখানেই লুকিয়ে রয়েছে মারাত্মক বিপদ। কাসাভা গাছ বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে, যার মধ্যে কিছু মারাত্মক বিষাক্ত। এমনকি সঠিকভাবে পরিচর্যা না পেলে কাসাভা বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। তাই প্রতি বছর কাসাভা গাছের মূল তুলে নেওয়া হয়। আদিবাসী সমাজের কাছে এই ট্যাপিওকা আলুর প্রচলন বহুদিনের। ভারতে এর পরিচিতি শুরু সেই ১৮৮০ সাল থেকে। কাসাভা গাছের মূল প্রথমে তুলে তা ভালোভাবে ধুয়ে মেশিনে পেস্ট তৈরি করা হয়। সেখান থেকেই তৈরি হয় ময়দার মতো পাউডার। পরে তা মেশিনে দিলেই তৈরি হয়ে আসে গোলাকার আকৃতির সাবু। প্রকৃতপক্ষে কাসাভা থেকে তৈরি সাবুকে বলা হয় ট্যাপিওকা।

সাবু অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ। এটি দ্রুত হজম হয় এবং শরীরে শক্তি যোগায়। সাবু আমাদের জলের ভারসাম্যর রক্ষা করে। রোগীদের জন্য সাবু অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অনেকেই খাদ্য তালিকায় সাবু রেখে দেন। সাবুকে বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। বর্তমানে বিভিন্ন মিষ্টি তৈরিতে সাবুর জনপ্রিয়তা হুহু করে বেড়েই চলেছে। যদি কফিতে কয়েক দানা সাবু রাখেন দেখবেন কফির রং ঝকঝক করছে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version