টিট ফর ট্যাট নীতি পুতিনের, ধসে পড়তে পারে এই দেশটা! সাগরতলে সব ছিন্নভিন্ন করবে রাশিয়া?

।। প্রথম কলকাতা ।।

সমুদ্রের নীচে বিছানো সাবমেরিন কেবল কমিউনিকেশনই কী পুতিনের নয়া টার্গেট? পশ্চিমাদের সবক শেখাতে একটা অ্যাটাক, ব্যাস ধ্বসে পড়তে পারে আদ্যোপান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কীসের এতো রাগ? কেন প্রতিশোধ নিতে মরিয়া মস্কো? জোর জবরদস্তি নর্ডস্ট্রিম ধ্বংসের দায় চাপালে সর্বনাশ ঘটাবে রাশিয়া। টিট ফর ট্যাট নীতিতেই হাঁটবেন পুতিন? নাকি নেবেন অন্য কোনো কৌশল? জলের নিচে ক্রেমলিনের এই খতরনাক অস্ত্রে জড়িয়ে শেষ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ। বড় ভুল হচ্ছে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

খুব সাবধানে পা ফেলতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। মাথায় রাখতে হবে ইন্টারন্যাশনাল ডেটার অন্তত ৯৫% ট্রান্সফার হয় সমুদ্রের নিচে স্থাপিত সীমিত সংখ্যক কিছু কেবল বা তারের মাধ্যমে। প্রতি সেকেন্ডে ২০০ টেরাবাইট ডেটা ট্রান্সফারে সক্ষম এধরনের কেবলের সংখ্যা প্রায় ২০০ টি। এসব তার দিয়েই দৈনিক প্রায় ১০ লাখ কোটি ডলার সমান আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হয়। তাহলে, বোঝাই যায় পৃথিবীর মহাসাগরগুলোর তলদেশে বিছানো এ ধরনের কেবলগুলো ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই সাবমেরিন কেবলই, কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ, যা সব দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ, সামরিক ও আর্থিক শক্তিতে বলীয়ান পশ্চিমা দুনিয়া দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারছেনা যে সাগরতলদেশের কেবলগুলো তাঁদের জন্য অবকাঠামোগত দুর্বলতার জায়গা।

কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগী দেশগুলো ওই কেবলের ‘চোক পয়েন্ট’গুলোকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমেই চূড়ান্ত আঘাত করার ফন্দি আঁটছে। যুদ্ধে নতুন টার্গেট হয়ে উঠেছে সাবমেরিন কেবল। মার্কিন মিত্র যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। গত দুই দশকে সাগরতলের এসব কেবল নেটওয়ার্কে হামলা চালানোর মতো বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করেছে রাশিয়া। হামলার জন্য মানবহীন, অত্যাধুনিক সাবমার্সিবল যানের বহর রয়েছে ক্রেমলিনের কাছে। চীনেরও রয়েছে এমন বহর। আশঙ্কা করা হচ্ছে, রাশিয়ার সাথে সশস্ত্র সংঘাতের পরিণতিতে সাগরতলের কেবলগুলোই আক্রমণের শিকার হতে পারে। কিন্তু, রাশিয়ার বিরুদ্ধে সাবমেরিন কেবল ধ্বংসের আগাম অভিযোগ কেন তুলছে ব্রিটিশরা? ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের শেটল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের সাথে বাকি বিশ্বের ইন্টারনেট কানেকশন এর কেবল দুই জায়গায় বিচ্ছিন্ন হয়। তখন সেখানে নাকি রাশিয়ার একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা জাহাজ কে দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। তবে রাশিয়ায় যে ওই কাজ করেছে তা কিন্তু প্রমাণ হয়নি‌

কারণ, বেশিরভাগ সময় মাছ ধরার ট্রলারের জালে জড়িয়ে, বা সাগরতলে ভূমিকম্পের মতো ঘটনায় সাবমেরিন কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু, তারপরেও ঘটনাস্থলে রাশিয়ান জাহাজের উপস্থিতির ঘটনায় রীতিমতো নড়েচড়ে বসে পশ্চিমা নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। কারণ যে কোন দেশের সাবমেরিন কেবলে হামলা হলে সীমাহীন ক্ষতি হতে পারে, অন্য মাত্রার বিপদ ডেকে আনতে পারে, নাশকতায় ধ্বসে পড়তে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থাও। রাতারাতি বৈশ্বিক ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ব্যাহত হওয়ার রিস্ক থাকছে ১০০%। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রিতে এর প্রভাব কতটা মারাত্মক হবে তা কল্পনারও বাইরে। এমনকি ভৌগলিক মন্দা ও শুরু হতে পারে। বিপর্যস্ত হতে পারে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য, ব্যাংকিং, আর্থিক সেবা, টেলি যোগাযোগ। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিনিময়ও এতে বাধাগ্রস্ত হবে।

তার চেয়েও বড় কথা, সাবমেরিন কেবল বিচ্ছিন্ন করে কোনো দেশকে বহুমুখী সংকটের মধ্যে ঠেলে দেওয়া সম্ভব, যা মোকাবিলা করা প্রায় অসাধ্য। কোনো সন্ত্রাসী বা বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এই কাজ করে, প্রতিপক্ষ রাষ্ট্রের প্রতি দায় চাপাতে পারে। বাধিয়ে দিতে পারে দেশে দেশে যুদ্ধ। এই ধরনের কূটচালে সংঘাত উস্কে দেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের মিত্রতায় চিড় ধরাতে বা জোট গঠনেও পরিবর্তন আনতে পারে। তাই, বিশেষজ্ঞরা বলছেন অবহেলা না করে যুক্তরাষ্ট্রের সচেতন হওয়া উচিত, সাবধান হওয়া উচিত। কিন্তু, তা না করে যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তাতে এখন তার দাম চোকাতে ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে। ২০২২ এর সেপ্টেম্বর রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের প্রধান দুটি পাইপলাইন নর্ডস্ট্রিম-১ ও নর্ডস্ট্রিম-২ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গোটা ঘটনাকে রুশ সন্ত্রাসী হামলা বলে দাবি করে ইউক্রেন।

যুক্তরাষ্ট্র আর ন্যাটো জোটের অন্য দেশগুলো গোটা পৃথিবীকে বুঝিয়েই ছাড়ে যে রাশিয়াই সেই কালপ্রিট যে কিনা নর্ড স্ট্রিম গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই বেজায় চটেছেন পুতিন। রাশিয়া এখন কি করবে? টিট ফর ট্যাট নীতিতে চলতে হলে পুতিন বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত করার পথে হাঁটতেই পারেন। সেই সুযোগ রাশিয়ার কাছে আছে। প্রাক্তন রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, যেভাবে নর্ডস্ট্রিম ধ্বংস করার ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া কে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে, সেই বিষয়টাকে আমলে নিয়ে রাশিয়া শত্রুদের সাবমেরিন কেবল কমিউনিকেশন ধ্বংস করতেই পারে। এতে তো রাশিয়ার কোনো নৈতিক বাধাও নেই। আর তারপর থেকেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। ভাবতে পারছেন, সাবমেরিন কেবলের ওপর হামলার ঘটনায় পশ্চিমা বিশ্বের সাথে চীন, রাশিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের সংঘাত কতোটা মারাত্মক হতে পারে? না, সেটা কল্পনারও অতীত।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version