Viviparous: ডিম নয়, সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেয় বিষাক্ত সাপ! এদের চিনে রাখুন

।। প্রথম কলকাতা ।।

Viviparous: সাপের পেট থেকে একের পর এক বেরিয়ে আসছে বাচ্চা। একটা দুটো নয় প্রায় ৮০টা পর্যন্ত বাচ্চা দিতে পারে সাপ! হাঁ হয়ে গেলেন তো! অনেকেই মনে করেন সাপ ডিম পাড়ে, সেই ডিম ফুটেই বেরিয়ে আসে বাচ্চা। তবে এই ধারণা কিছুটা সত্যি। কারণ পৃথিবীতে চড়ে বেড়াচ্ছে এমন কিছু মারাত্মক সাপ যারা ডিম নয়, সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেয়। বলা হয় যেসব সাপ ডিম দেয় না সরাসরি বাচ্চা দেয়, তারা মারাত্মক বিষাক্ত। তাদের এক ফোঁটা বিষে মারা যেতে পারে বহু মানুষ। এই রিপোর্টের রইল সেই খতরনাক কিছু সাপের পরিচয়, জানলে আপনার রক্ত ঠান্ডা হয়ে যাবে।

মূলত সাপ দুই ধরনের হয়। পৃথিবীতে ৭০ শতাংশ সাপ রয়েছে ওভিপ্যারোয়াস, অর্থাৎ এরা ডিমের মাধ্যমে বাচ্চার জন্ম দেয়। সাপের জ্যান্ত বাচ্চা প্রসব করার ঘটনা নজিরবিহীন হলেও একেবারেই বিরল নয়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির সমীক্ষা অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ সাপ ওভিপ্যারোয়াস কিন্তু ৩০ শতাংশ সাপ ভিভিপ্যারোয়াস। এরা সরাসরি বাচ্চার জন্ম দেয়। এদের শরীরের মধ্যেই ডিম ফুটে বাচ্চা জন্ম নেয়। মূলত এটি ডিমের সুরক্ষার জন্য সাপের একপ্রকার অভিযোজন। তবে জীবিত ও সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেওয়ার অনেক সুবিধা রয়েছে। বহু সাপ আছে যারা মা সাপের ডিম খেয়ে নেয়। আসলে বাচ্চা সাপের দেহ নিয়ন্ত্রণ করতে বাহ্যিক তাপমাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে সরাসরি বাচ্চা জন্ম দিলে সেই ভয় থাকে না। ডিম ফুটে বাচ্চা জন্মাবার ক্ষেত্রে প্রয়োজন উষ্ণতার। একবার ডিম পাড়ার পর সেই ডিমগুলিকে উষ্ণ স্থানে নিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য। বহু সাপ আছে যারা শীতল জলবায়ুতে বাস করে, সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের উষ্ণ রাখতে তারা সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেয়।

সাপ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। বিশেষ করে তাদের প্রজনন সম্পর্কিত। সব সাপের শারীরিক গঠন মোটামুটি একরকম, কিন্তু তাদের পরিবেশ এবং জীবনযাত্রা মানের উপর নির্ভর করে বাচ্চা জন্মের পদ্ধতি। কিছু সাপ ডিম পাড়ে, কিছু সাপ সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেয়, আবার কিছু সাপ আশ্চর্যজনকভাবে উভয় পদ্ধতিতেই বাচ্চা জন্ম দেয়।

•সি স্নেক বা সামুদ্রিক সাপগুলি মূলত এলাপিডে প্রজাতির। যেহেতু এরা জলে বাস করে তাই ডিম পাড়ার জন্য কিংবা সেই ডিম গরম রাখার জন্য উপযুক্ত কোন জায়গা নেই। তাই অধিকাংশ সামুদ্রিক সাপ সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেয়। একমাত্র সামুদ্রিক ক্রেট ডিম পাড়ে।

•রিংখাল, যা রিং নেক স্পোটিং কোবরা নামে পরিচিত। এরা অন্যান্য কোবরাদের থেকে প্রজনন অভ্যাসের ক্ষেত্রে একেবারে আলাদা। এরা খুবই আক্রমণাত্মক প্রাণী। মনে করা হয়, এদের এই বিশেষ ক্ষমতার জন্যই সরাসরি বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। পাশাপাশি এই তালিকায় রয়েছে ভাইপার এবং পিট ভাইপার। এদের প্রাকৃতিক বাসস্থান এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা। এই বিষাক্ত সাপেদের শীতল বায়ু পছন্দ।

•মহিলা বোয়া কনস্ট্রিক্টররা সাধারণত ৪ থেকে ৫ মাসের জন্য গর্ভবতী থাকে। এরা প্রায় ১০ থেকে ৬০টি বাচ্চার জন্ম দেয়।

•ডেথ অ্যাডার হল এলাপিডি পরিবারের সদস্য, যার মধ্যে রয়েছে কোবরা, ক্রেইট এবং প্রবাল সাপ। বেশিরভাগ এলাপিডি ডিম পাড়ে, তবে ডেথ অ্যাডার সরাসরি বাচ্চার জন্ম দেয়। এরা একবারে ১০ থেকে ৩২ টি বাচ্চার জন্ম দিতে পারে। মারাত্মক বিষাক্ত ডেথ অ্যাডাররা সাধারণত মরার মত পড়ে থেকে, ঘা লাগলেই দেয় মারণ ছোবল। এরা এক সেকেন্ডের দশমাংশেরও কম সময়ে বিষ ঢালতে সক্ষম।

•গার্টার সাপগুলিও কলুব্রিড পরিবারের সদস্য। এরা আকর্ষণীয় প্রাণী হিসাবে পরিচিত। গার্টার সাপের অস্বাভাবিক মিলনের অভ্যাস রয়েছে। এই প্রজাতির একাধিক পুরুষ সাপ একটি মহিলা সাপের সঙ্গে মিলনের জন্য অগ্রসর হয়। এর ফলে মাত্র একজন স্ত্রী সাপের সাথে ২৫ জন পুরুষ সাপের প্রজনন হতে পারে। শুধু মিলনের অভ্যাসে এরা আলাদা নয়, স্ত্রী গার্টার সাপগুলি কয়েক বছর ধরে শুক্রাণু সঞ্চয় করতে সক্ষম। পরিবেশগত অবস্থা অনুকূলে থাকলেই নিষিক্ত হওয়ার জন্য শুক্রাণু মুক্ত করার মাধ্যমে তারা তাদের সন্তানদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। স্ত্রী গার্টার সাপ ৩ থেকে ৮০টি বাচ্চার জন্ম দেয়। এরা ২ থেকে ৩ মাস গর্ভবতী থাকে।

•হলুদ অ্যানাকোন্ডা, সবুজ অ্যানাকোন্ডা, গাঢ় দাগযুক্ত অ্যানাকোন্ডা এবং বলিভিয়ান অ্যানাকোন্ডা সহ সমস্ত অ্যানাকোন্ডা প্রজাতিই সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেয়।

•র‍্যাটলস্নেকের বেশ কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে এবং তাদের সকলেই জীবন্ত জন্ম দেয়।

মনে করা হয় চন্দ্রবোড়া এসেছে এই র‍্যাটলস্নেক থেকে। এদের পেট থেকে সরাসরি বাচ্চা বেরিয়ে আসে। দুই বছর আগে তামিলনাড়ুতে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় একটি চন্দ্রবোড়া। পরে দেখা যায় সেখানে কিলবিল করছে আরো ৩৫টি বাচ্চা। একটি স্ত্রী চন্দ্রবোড়া প্রায় ২০টি থেকে ৪০টি বাচ্চার জন্ম দিতে পারে। শুনলে আশ্চর্য হবেন অনেক সময় এরা ৭০ থেকে ৭৫টি বাচ্চাও দিয়ে থাকে। সদ্য প্রসূত বাচ্চা আট থেকে দশ ইঞ্চি লম্বা হয়। এদের কামড় এতটাই ভয়ংকর যার কারণে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। দ্রুত চিকিৎসা শুরু না হলে সেই ব্যক্তিকে বাঁচানো খুব মুশকিল। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান , নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভুটান প্রভৃতি দেশে এই সাপের দেখা মেলে। বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রীতিমত এই সাপের ছেয়ে গিয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই এই সাপ কম বেশি আছে।

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version