।। প্রথম কলকাতা ।।
Birbhum: বর্তমান বাজারে ২ টাকায় লজেন্স ছাড়া আর কিছু কি হয়? এই ২ টাকাতেই অনেক কিছু হয়। কেনা যায় একরাশ স্বপ্ন। ২ টাকাতেই পাওয়া যায় একঝুড়ি খুশি! ভাবছেন এমনটা আবার হয় নাকি! ক্যারাটে মাস্টার বুদ্ধিশ্বর মন্ডল, তিনি খুলেছেন মাত্র ২ টাকার বাজার। এক্কেবারে হোলসেল । যেখানে মাত্র ২ টাকা দিয়েই কেনা যাবে মন পছন্দের জামা কাপড়।
বিশাল বড় ফাঁকা মাঠ। সেখানে লম্বা করে বাঁশের উপর ঝোলানো রয়েছে প্রচুর জামা কাপড়। হোলসেল বাজারে মাত্র ২ টাকা দিয়েই নিজের পছন্দের মত জামাকাপড় কেনা যায়। শুধু শিশুরা নয়, বড়দের জন্যও সমস্ত রকম জামা কাপড় রয়েছে। জামা, প্যান্ট, শাড়ি, শিশুদের ফ্রক, এমনকি পুঁচকের জামাও এখানে পাওয়া যায়। এই ২ টাকার বাজার রয়েছে বীরভূমে(Birbhum)। এই বাজারের মূল উদ্যোক্তা ক্যারাটে মাস্টার বুদ্ধিশ্বর মন্ডল, যিনি নিজেও একদিন দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছিলেন। তিনি জানেন জামা কাপড়ের কষ্ট ঠিক কতটা।
দুর্গাপুজোর সময় বুদ্ধিশ্বর মন্ডল ফেসবুকে অ্যাড দিয়ে শিশু এবং মায়েদের জন্য নতুন জামা কাপড়ের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু বছরের বাকি দিনগুলিতে কি হবে? তাই তিনি মাঠের মাঝখানে বসান ২ টাকার পুরনো জামা কাপড়ের বাজার। বোলপুর, সিউড়ি, লাভপুর প্রভৃতি জায়গায় তিনি যেখানে ক্যারাটে শেখান, সেখানে স্টুডেন্টদের গার্জেনদের কাছ থেকে এই পুরনো জামা কাপড় সংগ্রহ করেছেন। তারপর বোলপুরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দরিদ্রদের শনাক্ত করেন। যেখানে সর্বোচ্চ মানুষ গরিব সেখানে তিনি এই ২ টাকার বাজার বসান। মাত্র ২ টাকার বিনিময়ে মন খুলে কেনা কাটা করে শিশু থেকে বয়স্করা।
প্রশ্ন হল, পুরোনো জামা কাপড়ের জন্য দু টাকা কেন? ইচ্ছা করলে তো ফ্রিতেই দেওয়া যেত? আসলে বুদ্ধিশ্বর মন্ডল মনে করেন, যারা জামা কাপড় নিচ্ছেন তারা যাতে না ভাবেন যে তাদেরকে দান করা হচ্ছে। ২ টাকা দিয়ে তারা জিনিস কিনে এক বুক গর্ব নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। তারাও ভাববেন যে তারা কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরছেন। এর মধ্যে রয়েছে আলাদা এক খুশির অনুভূতি। বীরভূমের বহু পরিবারের ঠিকমত সংসার চলে না। যেদিন কাজ হয় না, সেদিন সংসারে হাঁড়িও চড়ে না। সেই মানুষদের কাছে নতুন জামা কাপড় অনেকটা বিলাসিতা। এই দরিদ্র মানুষদের যাতে জামা কাপড়ের কষ্ট না হয় সেই দায়িত্ব নিয়েছেন বুদ্ধিশ্বর মন্ডল। খোলা মাঠে খুলেছেন ২ টাকার হোলসেল বাজার। বহু শিশু এই বাজারে জামাকাপড় কিনে সাইকেলে করে কিংবা মাথায় করে পুঁটলি বেঁধে জামা কাপড় নিয়ে যায়। এই পুরনো জামা কাপড়েই রয়েছে তাদের একরাশ খুশি। তাদের হাসি খুশি মুখ দেখেই বোঝা যাবে তারা এই বাজারে কেনাকাটা করতে পেরে ঠিক কতটা আনন্দিত।
বুদ্ধিশ্বর মন্ডলের ছোটো বেলা কেটেছে দারিদ্রতার মধ্য দিয়ে। ছোটবেলায় তার বাবা-মা অন্যের বাড়ি থেকে পুরনো জামাকাপড় এনে পরতে দিতেন। দিন কেটেছিল ভীষণ অভাবের মধ্য দিয়ে। সেই দিনগুলি তিনি এখনো ভুলতে পারেন না। আজ বাবা-মায়ের আশীর্বাদে তিনি দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু ভোলেননি শৈশবকে। তিনি শৈশবে যে কষ্ট পেয়েছেন সেই কষ্ট যেন অন্য কোন শিশুকে পেতে না হয়, তাই সাহেবডাঙ্গা নীলডাঙ্গা গ্রামে আদিবাসীদের মাঝে বসান পুরনো জামা কাপড়ের বাজার। এখানে যারা জামা কাপড় কেনেন তাদেরকে ফ্রিতে দেন ডিটারজেন্ট, যাতে জামা কাপড় পরিষ্কার রাখতে পারে।