হাত নেই, পা দিয়েই ছুঁড়ছেন তীর! ভারতের জন্য লড়ছে এই কাশ্মীর কন্যা

।। প্রথম কলকাতা ।।

তীরন্দাজ, এই শব্দটা বলতেই নিশ্চয়ই আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠছে তীরের ছবি। যে তীর চালাতে গেলে অবশ্যই দরকার দুটো হাত। শুধু ভারতই নয়, গোটা বিশ্বে দক্ষ তীরন্দাজদের কদরই আলাদা। আজকে এমন একজনের কথা শুনবেন, যিনি উজ্জ্বল করেছেন ভারতের নাম। এনে দিয়েছেন পদক। এই মেয়ের জন্য গর্বিত গোটা দেশ। তবে আশ্চর্যের বিষয়, এই মেয়ের দুটো হাত নেই। কি অবাক হলেন তো? সম্বল শুধু মনের জোর। নিশ্চয়ই ভাবছেন, তাহলে কিভাবে তীরন্দাজ হলেন? হাত নেই তো কি হয়েছে, দুটো পা তো রয়েছে। লক্ষ্য যখন স্থির থাকে, আর মনে যখন অদম্য জেদ থাকে তখন তাকে হারানো ভীষণ মুশকিল।

পরিবারে আর্থিক অবস্থা ভীষণ খারাপ। বাবা কৃষক। মা ছাগল প্রতিপালন করেন। বলছি জম্মু-কাশ্মীরের এক ছোট্ট গ্রামের শীতল দেবীর কথা। যাঁর নাম জেনে গেছে গোটা বিশ্ব। বয়স মাত্র ১৬ বছর। দু চোখ ভরা স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন ছুঁতেই দৌড়েছেন দুটো পায়ে। তীর ছুঁড়েছেন পা দিয়ে। টার্গেট কিন্তু মিস হয় না। অথচ এই শীতল কোনদিনও ভাবতেই পারেননি, তিনি তীরন্দাজ হবেন। কোচ কুলদীপ কুমারের হাত ধরে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কোচের কথায় প্রথম প্রথম অ্যাকাডেমিতে শীতল অন্যদের শুটিং দেখতেন। আর্চারির প্রতি আগ্রহ ছিল তীব্র।

প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন জম্মুর মাতা বৈষ্ণদেবী আর্চারি অ্যাকাডেমি থেকে। গত মে মাসেই তিনি খেলেছিলেন চেক রিপাবলিকে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান প্যারা আর্চারি কাপে। জিতেছেন রৌপ্য পদক। তারপর যোগ দিয়েছেন বিশ্ব আর্চারি প্যারা চ্যাম্পিয়নশিপে। তৈরি করেছেন নতুন ইতিহাস। দুই হাত ছাড়াই তীরন্দাজির ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিলেন কাশ্মীরের এই মেয়ে। শীতল দেবীই প্রথম মহিলা আর্মলেস তীরন্দাজ, যিনি জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্ব ফাইনালে।

লড়াইটা শুরু হয়েছিল বছর দুয়েক আগে। পা দিয়েই করেন লক্ষ্যভেদের প্র্যাকটিস। দেশের জন্য এনে দিয়েছেন ঐতিহাসিক সোনার পদক। এই কাশ্মীর কন্যার লড়াই বহু মানুষের বাঁচার রসদ। শীতল দেবী জন্ম থেকেই এক বিরল রোগে আক্রান্ত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অন্যান্য গঠন সুস্থ স্বাভাবিকভাবে হলেও, হাত দুটো বাড়েনি। শীতল পড়াশুনাতেও ভীষণ ভালো। একটা সময় যেতে হয়েছে প্রচুর মানসিক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। শুনতে হয়েছে লোকের হাসি ঠাট্টা। কেউ দেখিয়েছে সহানুভূতি, আবার কেউ বা দেখেছেন বিদ্রুপের চোখে। কিন্তু এসবে বিন্দুমাত্র দমে যাননি শীতল। দেশের হয়ে পদক জিতে দিয়েছেন মোক্ষম জবাব।

Exit mobile version