P. V. Narasimha Rao: ভারতীয় অর্থনীতিতে পরিবর্তন এনেছিলেন তিনি, প্রয়াণ দিবসে স্মরণে নরসিমা রাও

।। প্রথম কলকাতা ।।

P. V. Narasimha Rao: ভারতীয় রাজনীতিতে ‘আধুনিক চাণক্য’ বলা হয়ে থাকে তাঁকে। ১৯২১-এর ২৮ জুন বর্তমান তেলেঙ্গানা রাজ্যের লাকনেপল্লী গ্রামে তেলুগু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম হয় তাঁর। কে জানত, ভারতের নবম প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনি। এমনকি ভারতকে দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছেন এই বিশিষ্ট ভারতীয় রাজনীতিবিদ তথা আইনজ্ঞ পি ভি নরসিমা রাও (P. V. Narasimha Rao)।

পুরো নাম পামুলাপর্তি ভেঙ্কট নরসিমা রাও। বাবার নাম পামুলাপর্তি সীতারাম রাও এবং মায়ের নাম পামুলাপর্তি রুক্মিণী। জন্মের পর লাকনেপল্লী গ্রাম থেকে করিমগরে চলে আসে নরসিমা রাওয়ের পরিবার। এর পর প্রাথমিক শিক্ষা করিমনগরেই সম্পন্ন হয়েছিল তাঁর। হায়দরাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলা বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে এখানেই থেমে থাকেন নি। পরে মুম্বই (Mumbai) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক হন এবং নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পুরোপুরি রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেছিলেন। ১৯৬২-৭৩ সাল পর্যন্ত অন্ধপ্রদেশের (Andhra Pradesh) বেশ কয়েকটি বিভাগের মন্ত্রী হিসেবে দায়ভার সামলেছেন নরসিমা রাও।

১৯৮০ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে আসীন ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৮৪-র ১৯ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়ভার সামলেছেন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এই ব্যক্তিত্ব। সেইসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম জার্মানির একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রনীতি ও অন্যান্য বিষয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ব্রিটেন (Britain), পশ্চিম জার্মানি, সুইজারল্যান্ড (Switzerland) ইতালি এবং মিশর সফর করেন। ১৯৯১-৯৬ সাল পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে বসেছিলেন নরসিমা রাও। আর সেই সময় নিজের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। ভারতে মুক্ত অর্থনীতির সূচনা তাঁর হাত ধরেই। এমনকি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী সরকারের সময় পোখরানে পরমাণু পরীক্ষার নেপথ্যে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

১৯৯৮-এর ১১ মে পোখরানে পরমাণু পরীক্ষার পেছনে তাঁর অবদানকে স্বীকার করেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কালাম ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী (Atal Bihari Vajpayee)। এর পাশাপাশি দেশের জন্য আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। বলতে গেলে, ভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা অপরিসীম। ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে প্যালেস্তিনীয় মুক্তি সংস্থার সমস্যার সমাধানে জোট নিরপেক্ষ দেশগুলির নেতৃত্ব দেন নরসিমা রাও। নয়া দিল্লিতে (Delhi) আয়োজিত সেই সভায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

বহু বিষয়ে জ্ঞান ছিল তাঁর। একসঙ্গে ১৫টি ভাষা জানতেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে ভালবাসতেন সিনেমা, থিয়েটার, গান-বাজনা। তেলুগু এবং হিন্দিতে কবিতা রচনা করতে ভালো লাগত তাঁর। ভাষা শিক্ষা এবং সাহিত্যের প্রতি এক আলাদাই আগ্রহ ছিল। তিনি বিয়ে করেন সত্যাম্মা রাওকে। ১৯৭০-এ মৃত্যু হয় তাঁর স্ত্রীর। আর ২০০৪-এর ২৩ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৩ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নরসিমা রাও। ভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর অবদান কখনোই ভোলার নয়। তিনি দেশের উন্নতিতে প্রচুর কাজ করে গিয়েছেন। আজ ভারত দেউলিয়া হতে হতে বেঁচেছে তাঁরই কারণে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version