‘পাহাড়ি ভূত’ তুষার চিতা, মায়াবী জগতের আশ্চর্য প্রাণী! এরা এতটা আলাদা কেন?

।। প্রথম কলকাতা ।।

‘পাহাড়ি ভূত’ তুষার চিতা, আজ বিপন্নপ্রায় প্রাণী। এদের বাস বরফের রাজ্যে। নাম তুষার চিতা হলেও গায়ের রং কিন্তু ধবধবে সাদা তুষারের মতো নয়। একটু ধূসর। তাই এদের বলা হয় বরফের দেশের ধূসর আত্মা। এরা যখন জ্যোৎস্না রাতে ঘুরে বেড়ায় তখন সাদা পাহাড় আরো মায়াবী হয়ে ওঠে। এমন বিরল দৃশ্য একবার ধরা পড়েছিল মার্কিন ফটোগ্রাফার কিটিয়া পাওলোস্কির ক্যামেরায়। বিশেষ করে শীতকালে হিমালয়ের বুকে প্রাণ খুঁজে পাওয়া অনেকটা স্বর্গ পাওয়ার মতো। বহু তপস্যা করে হিমশীতল ঋতুতে হিমালয়ে প্রাণের সন্ধান মেলে। চারিদিকে শুধু ধূসর আর সাদা বরফে মোড়া, সেখানেই বাস এই তুষার চিতাদের। বরফের মধ্যে পাহাড়ে সাধারণ মানুষের পক্ষে হাঁটা অত্যন্ত কষ্টকর, কিন্তু তুষার চিতা অনায়াসেই বরফের পথ পাড়ি দেয়। আসলে এদের পা গুলো অত্যন্ত নরম তুলতুলে। পরিবেশ অনুযায়ী মানিয়ে নিয়েছে তাদের শরীর। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার পর্বতশ্রেণীর এটি স্থানীয় প্রাণী। গরম এদের একদম পছন্দ নয়। তাই তো বিশ্ব উষ্ণায়নের যুগে সবথেকে বড় বিপদের মুখে তুষার চিতা।

তুষার চিতার ওজন মোটামুটি ২৫ থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। পুরুষ তুষার চিতার ওজন ৭৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এরা দৈর্ঘ্যে প্রায় ৭৫ থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার, তবে আশ্চর্যজনক ভাবে এদের লেজের দৈর্ঘ্য হয় ৮০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার। এই লম্বা লেজ তুষার চিতার কাছে মোক্ষম অস্ত্রের মতো। যা দিয়ে তারা নিজেদের ভারসাম্য রক্ষা করে, আর শরীরকে উষ্ণ রাখে।

পাহাড় চূড়ায় এরা প্রকৃতির মূল্যবান উপহার। এরা মূলত বিড়াল প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে জনপ্রিয় তারকা। কিন্তু কিছুটা জেনেটিক মিল রয়েছে বাঘের সঙ্গে। বৈজ্ঞানিক নাম প্যান্থেরা আনসিয়া। তুষার চিতা অন্যান্য সাধারণ চিতা বা বাঘের মতো গর্জন করতে পারে না। নিজের ওজনের তিনগুণ পর্যন্ত শিকারকে অনায়াসে মেরে ফেলতে পারে। বরফের রাজ্যে শিকারকে তাক করে তার দিকে ছুটে যাওয়া কিংবা ধরাশায়ী করা একেবারেই মুখের কথা নয়। এরা ভয়ঙ্কর শিকারি। সাম্প্রতিক সময়ে মানব-বন্যপ্রাণী সংঘর্ষ, আবাসস্থলের সংকোচন আর জলবায়ু পরিবর্তন তুষার চিতার জন্য সবথেকে বড় হুমকি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শুধুমাত্র হিমালয়ে তুষার চিতার আবাসস্থলের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। বর্তমানে বারোটি দেশে তুষার চিতা রয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে ভারত, চীন, ভুটান, নেপাল, পাকিস্তান, রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া প্রভৃতি দেশ।

তুষার চিতা নিয়ে একটা ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট রয়েছে। প্রকৃতির মধ্যে এরা নিমেষে লুকিয়ে পড়তে পারে। তাই এদেরকে বলা হয় পাহাড়ের ভূত। এর অত্যন্ত লাজুক। গায়ের রঙের জন্য খুব সহজে তুষারময় পরিবেশের মধ্যে মিশে যায়। দুটি তুষার চিতাবাঘ একসাথে দেখা খুবই বিরল। এরা কোন শব্দ করে না। তাই বুঝতেও পারবেন না পাহাড়ি অঞ্চলের কোথায় রয়েছে। দিনের পর দিন হু হু করে কমছে তুষার চিতার সংখ্যা। তুষার চিতা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশনের লাল তালিকাভুক্ত বিপন্ন প্রজাতি। বিশ্বজুড়ে তুষার চিতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দশ হাজারের নিচে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এইভাবে কমতে থাকলে ২০৪০ সাল নাগাদ এই সংখ্যার ১০% কমে যেতে পারে। যার কারণে বিষয়টি গোটা বিশ্বজুড়ে পরিবেশবিদদের ভাবিয়ে তুলেছে। পৃথিবী মানেই অসংখ্য প্রাণীর আবাসস্থল। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রত্যেকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তুষার চিতাকে রক্ষা করতে বিশ্বব্যাপী গ্লোবাল স্নো লেপার্ড অ্যান্ড ইকোসিস্টেম প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়। যার সদস্য হিসেবে ভারত সহ রয়েছে বিশ্বের বহু রাষ্ট্র। সম্প্রতি সুখবর এসেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের পদ্মজা নাইডু জুওলজিক্যাল পার্ক থেকে। এখানে একটি তুষার চিতা পাঁচটি শাবকের জন্ম দিয়েছে। মা সহ শিশুরা প্রত্যেকেই নিরাপদে রয়েছে, একটু বড় হলেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে প্রকৃতির কোলে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version