১১ বছরে বিয়ে! কোলে সন্তান নিয়ে ডাক্তারি পড়ছে বাবা। স্ত্রীকেও নিজেই পড়াচ্ছেন, রামলালের লড়াই জানুন

।। প্রথম কলকাতা ।।

১১ বছর বয়সে বিয়ে! সন্তানকে কোলে নিয়েই ডাক্তার হতে চলেছেন ভারতের এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে। পড়াশোনার করার অদম্য জেদ গ্রামের সকলের বিরুদ্ধে গিয়ে স্ত্রীকে জোর করে স্কুলে পাঠিয়েছেন। পেটে খিদের যন্ত্রণা নিয়ে ডাক্তারি পাশ করে দেখিয়ে দিয়েছেন ইচ্ছে থাকলে সব হয়। প্রতি পদে পদে এসেছে বাধা। স্ত্রীয়ের হাতে হাত রেখে পার করেছেন জীবনের সব চড়াই উতরাই। অভাবী ঘরের এই ছেলের ডাক্তার হওয়ার লড়াই শুনলে সত্যি গর্ব হবে আপনার। ১১ বছর বয়সে রামলাল যখন ক্লাস সিক্সে পড়তেন তখন তাঁর বিয়ে হয়ে যায়৷ গ্রামের সকলের চাপে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সংসারে অভাব। সাথে স্ত্রীয়ের দায়িত্ব। কিন্তু ১১ বছর বয়সের ছেলেটা সেদিন নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা নিয়েছিল। তা জানলে কুর্ণিশ জানাবেন আপনি।

রাজস্থানের ঘোসুন্দার বাসিন্দা রামলাল ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার উপর টান তাই বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন। রামলালের বাবা প্রথমে ছেলের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি পাশে পেয়েছিলেন তাঁর স্ত্রীকে উচ্চমাধ্যমিকের সময় থেকেই নিট পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেন। ২০১৯ সালে প্রথম বার নিট পরীক্ষায় বসেন রামলাল। সে বছর তিনি সেই পরীক্ষায় ৩৫০ নম্বর পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় বার বসলে নম্বর আরও কমে যায় হাল ছাড়েননি। আসলে নিজের উপর ভরসা ছিল এরমধ্যেই রামলালের স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়েন, ছেলের বাবা হন তবুও পড়াশোনায় গাফিলতি করেননি তিনি। ছেলেকে এতটা সুন্দর ভবিষ্যৎ দিতে চেয়েছিলেন রামলাল সন্তানকে কোলে নিয়েই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। হাজারো বাধা পেরিয়ে পঞ্চম বারের চেষ্টায় নিট ২০২২-এ সফল হয়েছেন রামলাল। পরিবারে তিনিই প্রথম ডাক্তার হতে চলেছেন।

রামলাল শুধু নিজের কথা ভাবেননি। বিয়ের পর থেকে যাঁর সাপোর্ট ছাড়া এই লড়াই চালানো অসম্ভব ছিল। সেই স্ত্রীকেও পড়াশোনা করিয়েছেন। রামলালের চেষ্টায় পড়াশোনা থেমে থাকেনি তাঁর স্ত্রীরও। প্রথমে ভয় পেতেন
লোকে কী বলবে এই ভেবে স্কুলে যেতেন না রামলালের স্ত্রী কিন্তু রামলাল জোর করে স্ত্রীকে স্কুলে পাঠাতেন দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ধীরে ধীরে কলেজের গণ্ডিও পার করাবেন। রামলাল নিজে তাঁর গ্রামের একটি সরকারি স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। ৭৪ শতাংশ নম্বর নিয়ে ক্লাস টেন পাশ করেছিলেন। একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে ভর্তি হন রামলাল। তখন থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেছিলেন।

দ্বাদশ শ্রেণির পর থেকে নিট পরীক্ষায় বসার সুযোগ পান পরীক্ষার্থীরা। কোনও পরীক্ষার্থী এক বারেই নিট পরীক্ষা দিয়ে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পান, তো কারও কেল্লাফতে করতে বারবার পরীক্ষায় বসতে হয়। আবার কোনও কোনও পরীক্ষার্থী হাজারবার পরীক্ষা দিয়েও ক্য্রাক করতে পারেন না। কিন্তু ওই কথায় বলে না কারোর এক বারে হয় তো কারোর পাঁচবারে। রামলালের ক্ষেত্রে একবারে নাইবা হল। পাঁচবারের বেলায় তিনি তো করে দেখিয়েছেন। রামলালের মতো ছেলেরা ভারতের গর্ব।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version